ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

ভোটসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে নারী কতটুকু স্বাধীন (ভিডিও)

মুশফিকা নাজনীন

প্রকাশিত : ১১:৪৪ এএম, ২ নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার

আওয়ামী লীগ-বিএনপি বড় দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী হলেও, ভোট দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে দেশের নারী ভোটাররা কতটুকু স্বাধীন? নারী নেত্রীরা বলছেন, শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত নারীদের কিছুটা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বেশিরভাগ নারীকেই এখনও পুরুষরা নিয়ন্ত্রণ করেন।

ভোটের ইতিহাসে জানা যায়, ১৯২০ সালের আগ পর্যন্ত ভোট দিতে পারতেন শুধু শাসকেরাই। আর সেসময় শাসন কাজে নিয়োজিত ছিলেন পুরুষরা। বিশ্বে প্রথম ১৮৯৩ সালে নিউজিল্যান্ড তাদের নারীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে । ১৯ শতকের শেষ দিকে ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড সুইডেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে নারীরা সীমতিভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ পান। 

১৯৫০ সালে ভারত মহাদেশে সার্বজনিন ভোটাধিকারের অংশ হিসেবে নারীরা ভোট দেয়ার অধিকার পান। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর একে একে ১১টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সামনে দ্বাদশ নির্বাচন। দেশে এবার মোট ভোটার ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন নারী ভোটার। 

স্বাধীন বাংলাদেশে নারীদের ভোট দেয়ার সুযোগ থাকলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আজও তা সন্তোষজনক পর্যায়ে না। স্বামী বা পরিবারের অন্য পুরুষদের সিদ্ধান্তেই নারীদের বেছে নিতে হয় প্রার্থী। 

তারা জানান, নিজের মতামতে কোনোদিন ভোট দেইনি, স্বামীরা যা বলে দেয় সেই অনুযায়ী আমরা ভোট দিয়ে আসি। ইচ্ছে মতো ভোট দিতে পারি নাই এটা আমাদের খারাপ লাগে।

তবে এ নিয়ে দ্বিমতও রয়েছে। কয়েকজন জানান, কখনও কারোর অনুপ্রেরণায় ভোট দেইনি। কারও কথা শুনিনি নিজের ইচ্ছেমতো ভোট দিয়েছি। আগে হয়তো এতোটা ছিল না কিন্তু এখন নিজের মত প্রকাশ করা, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারছে।

নারী নেত্রী ও সংসদ সদস্য এ্যারোমা দত্ত বলছেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জাগরণে দেশে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ‘আমার ভোট আমি দিব যাকে খুশি তাকে দিব’- এই সাহসী স্লোগানে নারীরা সোচ্চার হলেও কম শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা এক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে। 

মুক্তিযোদ্ধা ও মানবাধিকার কর্মী এ্যারোমা দত্ত বলেন, “মধ্যবিত্ত ঘরের নারীরা অতো চ্যালেঞ্জেস হ্যান্ডেল করে না। বিশেষ করে তাদের স্বামী, পুত্র বা তাদের বাবার উপর নির্ভর করে অনেক বেশি কূপমণ্ডুকতার শিকার হয় এবং তারা এই জায়গাগুলোতে সেভাবে সোচ্চারও হতে পারেনা।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফৌজিয়া  মোসলেমের মতে, অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে নারীকেই তার অধিকারবোধে সচেতন হতে হবে। বেরিয়ে আসতে হবে পরিবারভিত্তিক রাজনৈতিক মনোভাব থেকে। 

ড. ফৌজিয়া  মোসলেম বলেন, “মহিলাদেরও একটা দায়িত্ব আছে যে তাদেরও যোগ্য নাগরিক হিসেবে দাঁড়াতে হলে তাকে প্রথমে কোন জিনিসটা জানতে হবে, কিভাবে জানতে হবে এবং সেগুলো জানা কেন দরকার এনিয়ে তার চিন্তাভাবনা করতে হবে। মহিলাদের এক্ষেত্রে নিজেদের এগিয়ে আসতে হবে।”

নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় নারীদের বাড়াতে হবে নিজেদের যোগ্যতা ও আত্মমর্যাদা বোধ, হতে হবে রাজনীতি সচেতন, পাশাপাশি পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো প্রয়োজন বলে মনে করেন নারী নেত্রীরা।

এএইচ