কারণে-অকারণে সংবিধান পরিবর্তন কারোরই হয়নি ভালো (ভিডিও)
মুহাম্মদ নূরন নবী
প্রকাশিত : ১০:৫৪ এএম, ৪ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার | আপডেট: ১০:৫৮ এএম, ৪ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার
সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। মানুষের মুক্তির-আকাঙ্খা রক্তঝড়া ইতিহাস মিশে আছে সাদা কাগজে কালো অক্ষরে লেখা এই প্রামাণ্য দলিলে। এযাবৎ অপ্রয়োজনীয় সংশোধনের নাম করে ১৭ বার কাঁচি চালানো হয়েছে জাতির পবিত্র আমানতের ওপর। তবে ৫৩ বছরে এখনও সংবিধানকে অক্ষত রাখার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছানো যায়নি। এই বাস্তবতাকে হতাশাজনক বললেন, আইন বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা। ৪ নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধান গ্রহণের দিনটি আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় সংবিধান দিবস হিসেবে।
একটি নিজস্ব শাসনতন্ত্র থাকার কথা ৭ই মার্চের বক্তব্যে বলেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে এলো স্বাধীনতা। মাত্র ৮ মাসের মাথায় জাতি পেলো একটি সংবিধান। হুবহু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র যুক্ত করে লেখা, এর প্রত্যেকটি লাইন-শব্দের মাঝে লুক্কায়িত পুরো জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
একাত্তরের চেতনার স্তম্ভ, জাতীয়তা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এই চারটি নিয়ে সংবিধানের পথ চলা শুরু হলেও স্বার্থকতা আসেনি। এসব কথা এখনও কথার কথা হিসেবেই থেকে গেছে। মনে প্রাণে ধারণ করেনি কোন পক্ষ-ই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এস. এম. মাসুম বিল্লাহ বলেন, “সংবিধানটা বানানো হলো আমাদের অশ্রু, রক্ত, ঘাম দিয়ে লেখা। বাংলায় লেখা নিজেদের মতন করে আলাদা একটা সংবিধান পাওয়া ছিল দীর্ঘ শতবছরের ইতিহাসের মধ্যে আমাদের সেরা অর্জন।”
একেক সময় একেক প্রেক্ষাপট তৈরি করে সংবিধানে হাত দিয়েছে শাসকরা। যার বেশিরাভাগই উচ্চ আদালতের বিচারের মানে টিকে থাকেনি। কখনও বহুদলীয় সরকার ব্যবস্থা পাল্টে হয়েছে একদলীয়। আবার, বহুদলীয় শাসন চালু করে নেয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতির শাসনে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার দায়মুক্তিসহ ১৬ বছরের সামরিক শাসনের অপকর্মের কাগুজে বৈধতা জেনারেল জিয়া ও এরশাদ দিয়েছে সংবিধান সংশোধন করে।
শুধু রাজনৈতিক ফায়দা নিতে ধর্ম নিরপেক্ষ অবস্থান সরালো জেনারেল জিয়া ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ যুক্ত করার মধ্য দিয়ে। পঞ্চম সংশোধনীর মতই অষ্টম সংশোধনীতে একই পথে পা বাড়ালো জেনারেল এরশাদ। রাষ্ট্রের ধর্ম ঘোষণা করলো ইসলাম। দুই সংশোধনীই পঞ্চদশে এসে ধাক্কা খেয়ে বাহাত্তরের চেতনার সংবিধান কিছুটা পুনঃস্থাপিত হলো।
অধ্যাপক এস. এম. মাসুম বিল্লাহ বলেন, “যে ধর্মীয় বহুত্ববাদ বা সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ থাকার দরকার ছিল। সেগুলো কলমের এক খোঁচায় বাদ হয়ে গেল। জেনারেল এরশাদের সময়ও তাই হলো। সংবিধান নানান চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে প্রাথমিক যে ধকল সেগুলো কাটিয়ে এবং সামরিক শাসকরা যেভাবে কাঁচি দিয়ে যেভাবে সংবিধানকে ছিন্নবিছিন্ন-বিদীর্ণ করেছিল সেখান থেকে উঠে আবার নতুন করে সংবিধানে মূলধারাগুলো যুক্ত করা এটা কিন্তু কম কথা নয়।”
এয়োদশ সংশোধনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ভুগিয়েছে অনেক। সীমাবদ্ধতায় ভরা অগণতান্ত্রিক এই জগদল পাথর নামে পঞ্চদশ সংশোধনীতে। সারা বিশ্বের মত রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচনের চিরায়ত ব্যবস্থা ফিরে আসে।
অধ্যাপক এস. এম. মাসুম বিল্লাহ বলেন, “সংবিধানের মৌলিক ভিত্তিকগুলোর উপরে আমাদের যদি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয় তাহলে সংবিধানকে বাঁচিয়ে রাখা সহজ হয়ে যেতো। বারে বারে সংবিধানে সংশোধনী সবসময় ভালো ফলাফল বয়ে এনে দিতে পারে না। সেই হৃদয় থেকে যখন সংবিধান মরে যায় তখন কোনো সংবিধান কোনো আইন এটাকে উদ্ধার করতে পারে না।”
অভিজ্ঞতা হলো, কারণে-অকারণে সংবিধান পরিবর্তন কারোরই ভালো হয়নি। সামনের দিনগুলোতে জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তি সংবিধানের যোগ্য হয়ে না উঠলে এগুবে না দেশ; এগুবে না এ জাতি।
এএইচ