কাগুজে দলিলে পরিণত ড্যাপ, ব্যর্থতা রাজউকের (ভিডিও)
সাইদুল ইসলাম
প্রকাশিত : ০১:০৪ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার
প্লান পাস হলেও ভবন নির্মাণ হয় পুরোই উল্টো (ভিডিও)
ডিটেইল এরিয়া প্লান বা ড্যাপ বাস্তবায়ন প্রায় থমকে গেছে। গত এক বছরে এটির বাস্তবায়নের তেমন কোনো পদক্ষেপই দেখা যায়নি। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ধীরে ধীরে ড্যাপ শুধুমাত্র কাগুজে দলিলে পরিণত হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে গতি না আসার পেছনে রাজউকের ব্যর্থতা দেখছেন তারা। বলছেন, সরষের মধ্যেই হয়তো ভুত আছে। শেষ পর্যন্ত ড্যাপের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা, সন্দিহান নগর পরিকল্পনাবিদরা।
আগামী তিন বছরের জন্য সরকারি ও রাজউক অনুমোদিত বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বর্তমান ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআরের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও দশমিক ৫ এফএআর প্রণোদনা প্রযোজ্য হবে। ড্যাপের বাস্তবায়ন শুরুর আগেই কেন এতো ছাড় দেয়া হলো? একই সাথে যেসব এলাকায় ভবন নির্মাণ কার্যক্রম চলছে সেখানেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ভবন নির্মাণের প্লান পাস হয় কিন্তু ভবন নির্মাণ হয় সেই প্লানের বাইরে।
পুরো রাজধানীজুড়ে এমন চিত্র। প্রতিটি ভবনের জন্য রাজউক নির্ধারিত প্ল্যান আছে কিন্তু ভবন নির্মাণ করা হয় পুরোই উল্টো। চারপাশে যে পরিমাণ জায়গা ছাড়ার কথা তা ছাড়া হয় না। দ্বিতীয় তলা থেকেই নকসা বহির্ভূতভাবে ভবন প্রশস্ত করা হয়। বিশেষ করে বারান্দা চলে আসে সড়কের ওপরে।
আর এমন চিত্র পুরো রাজধানীজুড়েই। ব্যবস্থা নেয়ার যেন কেউ নেই। কার স্বার্থে এমন ছাড় দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্ন ছিল বিশেষজ্ঞদের কাছে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স সাধারণ সম্পাদক এস এম মেহেদী আহসান বলেন, “জনভোগান্তি বাড়বে, পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য এটা একটি অন্তরায় হিসেবে থাকবে। কারণ, এর একমাত্র ফোকাস রাখা হয়েছে ফ্লোরের রেসিও এবং উঁচু ভবন।”
ইন্সটিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “ব্যবসায়ীদেরকে ছাড় দিতে গিয়ে সরকার এখন পুরো শহরের বাসযোগ্যকে প্রশ্নবোধক জায়গায় নিয়ে এসেছে। জরিপে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ আছি, জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা খারাপ- সব মিলিয়ে আমরা তলানির দিকে।”
প্রভাবশালী হাউজিং ও ডেভেলপার কোম্পানির চাপেই ড্যাপ সংশোধন করা হয়েছে বলে মনে করছেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জানান, এক বছরের মাথায় ড্যাপ সংশোধনের ফলে সেটি অকার্যকর হওয়ার পথে।
অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “পরিকল্পনার মাধ্যমে সাহসী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ না নিয়ে বরং কতিপয় গোষ্ঠীর চাপে নতি স্বীকার করি। তাতে বোঝা যায়, আমাদের আশাবাদের যে জায়গাগুলো ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হয়ে আসছে এবং সরকারের জনমানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্য দাঁড়ানো যে অভিপ্রায়স সেটাও দেখতি পাচ্ছিনা। এ জন্য শুধু নগর পরিকল্পনা নয় শহরের বাসযোগ্যতা সামনের দিনে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিবে।”
এস এম মেহেদী আহসান বলেন, “ঘিঞ্জি এলাকাতে বেশি বেশি উঁচু ভবন তুলে আরও বেশি ঘিঞ্জি করে তোলা হয় তাহলে জনজীবন আরও বেশি নেতিবাচক দিকে যাবে।”
ভবন নির্মাণে ছাড় দিয়ে সংশোধনী আনা হলেও পার্ক, রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বনভূমি, পুকুর, লেক, জলাশয়, খেলার মাঠসহ অন্যান্য যে নাগরিক সুবিধার খুব একটা পরিবর্তন করা হয়নি।
ড্যাপের সংশোধনী নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
পরিকল্পিত নগর গড়া ক্ষেত্রে ড্যাপের এই নতুন সংশোধনীকে অপরিকল্পিত বলছেন বিষেশজ্ঞরা।
এএইচ