গাজায় রাতভর বিমান হামলায় নিহত আরও ২ শতাধিক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:০৯ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২৩ সোমবার
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আবারও ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগসহ সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। ফলে পুরো অঞ্চল এখন কার্যত অন্ধকারে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ভারি বোমা হামলা চালাচ্ছে দেশটির সেনারা। এতে এক রাতেই আরও ২ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
অবরুদ্ধ গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি বাহিনী। গেল ২৪ ঘণ্টায় হামাসের সাড়ে চারশ’ অবস্থান লক্ষ্য করে সুনির্দিষ্ট হামলা চালানোর দাবি করেছে তেল আবিব। সেইসঙ্গে স্থল অভিযান চালিয়ে সংগঠনটির নতুন বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা হয় বলেও জানায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
গাজা উপত্যকাকে দুইভাগে ভাগ বিভক্তের দাবি করে আইডিএফ জানিয়েছে, সেনারা যেন ট্যাংক নিয়ে গাজার আরও ভেতরে প্রবেশ করতে পারে সেজন্যই হামলার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, রোববার (৬ নভেম্বর) রাতভর গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এই হামলায় ২ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯২২ জনে। হামলার আগে অঞ্চলটির ইন্টারনেট, মোবাইলসহ সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।
এদিকে ইসরাইলকে সমর্থনে আরও একধাপ এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের মধ্যেই এবার ভূমধ্যসাগরে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েন করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী।
ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অঙ্গীকার রক্ষায় দুটি রণতরীর পর এবার সাবমেরিন পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। বিশ্লেষকরা বলছেন, তেল আবিবকে সমর্থনের পাশাপাশি ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় উদ্বিগ্ন হয়েই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই তেল আবিবকে একতরফাভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে গণহত্যা চালালেও নির্বিকার মার্কিন প্রশাসন।
উল্টো ইসরাইলের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আগ্রাসনের বৈধতা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মধ্যপ্রাচ্য সফরেও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়টি সরাসরিই নাকচ করে দেন তিনি।
এবার তার সফরের মধ্যেই ভূমধ্যসাগরে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েন করলো যুক্তরাষ্ট্র। যা অঞ্চলটিকে শান্ত করার বদলে আরো অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।
মার্কিন সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টকম।
রোববার (৫ নভেম্বর) দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, '৫ নভেম্বর ওহাইও-শ্রেণির একটি সাবমেরিন ইউ.এস সেন্ট্রাল কমান্ডের নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছেছে। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি সেন্টকমের আওতাভুক্ত এলাকা হলো মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া।
সেন্টকমের ওই পোস্টের সঙ্গে ওহাইও ক্লাস সাবমেরিনের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, ওহাইও ক্লাস সাবমেরিনটি মিসরের সুয়েজ খাল অতিক্রম করে ভূমধ্যসাগরে পৌঁছেছে।
এর আগে হামাস-ইসরাইল সংঘাত শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যেই ভূমধ্যসাগরে দুটি বিমানবাহী রণতরী পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ডকে ওই অঞ্চলে পাঠানো হয়।
পরে ১৪ অক্টোবর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বিমানবাহী আরেকটি রণতরী পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি দুটি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ও একটি গাইডেড মিসাইল ক্রুজারও পাঠানো হয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্দেশ্য হলো ইসরাইলকে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া। তৃতীয় কোন শক্তি যেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়তে হামাসকে সহায়তা বা উসকানি না দিতে পারে তা নিশ্চিত করা।
মধ্যপ্রচ্যজুড়ে মার্কিন বিমান ঘাঁটিগুলোতে এ-টেন, এফ-ফিফটিন, এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমানও পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় বিমানবাহিনী কী ভূমিকা রাখবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমান্ড এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নিজেদের প্রস্তুত রাখতেই মধ্যপ্রাচ্যে সেনা, যুদ্ধবিমান ও রণতরী মোতায়েন করছে মার্কিন সেনাবাহিনী।
কেআই//