ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ছে

জিলফুল মুরাদ

প্রকাশিত : ০৪:৩০ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:০৮ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার

বছর কয়েক আগে জুলাই মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এক দিন কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর গয়নার পটল চরে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভেসে যাচ্ছিলো। খবর পেয়ে চরের বাসিন্দা মলিদা আক্তার গর্ভবতী, শিশু ও বয়স্কদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। এজন্য তিনি গাছের তৈরি একটি ভেলা ব্যবহার করেছিলেন। উদ্ধার করে তিনি চরে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করেন। তিনি সেদিন ৪৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

মলিদা আক্তার সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ থেকে বন্যায় উদ্ধার কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি ফ্রেন্ডশিপ-এর বন্যা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। তার এই বীরত্বের জন্য তিনি পরবর্তীতে জাতিসংঘের অনুপ্রেরণামূলক নারী স্বেচ্ছাসেবক পুরস্কার লাভ করেন। 

মলিদা আক্তারের মতো বর্তমানে ফ্রেন্ডশিপ-এর প্রায় ২৩৬০ জন বন্যা স্বেচ্ছাসেবী রয়েছে। নির্বাচিত স্বেচ্ছাসেবকরা কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার অধীনে জলবায়ু প্রকল্প এলাকায় কাজ করেন। 

এসব স্বেচ্ছাসেবী মূলত বন্যার সময় মানুষকে উদ্ধার করা, প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা, ত্রাণ কার্যক্রমের সময় ফ্রেন্ডশিপ-এর জনবলকে সহায়তা করা, নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি কমানোর জন্য বাঁশের সেতু স্থাপন, রাস্তা মেরামত, কমিউনিটি প্লিন্থ নির্মাণ, নদী ভাঙণের ঝুঁকি রোধে বাঁশ দিয়ে বেড়া তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকেন।

অন্যদিকে, দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয়ভিত্তিক অভিযোজন (লোকালি লেড এডাপ্টটেশন) যেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করছে তেমনি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাদের উদ্যোগ প্রশংসনীয় হচ্ছে। দুর্যোগের জরুরি মুহুর্তে গৃহীত ভূমিকাসমূহ অনাকাঙ্খিত ক্ষতি হ্রাসের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগসমূহকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্থায়ী ও স্বল্প মেয়াদি নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

দেশের দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালিতে তেমনই এক ধরনের উদ্যোগ হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ-এর ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। তবে এই কেন্দ্রটি বিশেষভাবে নজরে এসেছে তার স্থাপনা শৈলীর কারণে। জেলার লতাচাপলি, কলাপাড়ায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে সংস্থাটি এ অঞ্চলে একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। এটি একই সাথে ঘুর্ণিঝড়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও তাদের গবাদিপশুর আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে এবং মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার একটি কেন্দ্র। তবে, কেন্দ্রটির মূল লক্ষ্য হল ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রবেশাধিকার বাড়ানো। 

পটুয়াখালিতে ফ্রেন্ডশিপ-এর ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র

তিন তলা ভবনটি ঘুর্ণিঝড়ের পেঁচানো আকৃতি অনুসারে নকশা করে বানানো। দীর্ঘায়ু এবং নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ভবনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে রিইনফোর্সমেন্ট সিমেন্ট কংক্রিট, যার মধ্যে এমএস রড, সিমেন্ট, বালি এবং পাথরের চিপ রয়েছে। এই আশ্রয়কেন্দ্রটি দুর্যোগের সময় ১২০০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারে। প্রায় ৩০০ গবাদি পশু এক সাথে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। 

এছাড়াও এই কেন্দ্রটিতে একবারে ছয়টি ক্লাসের মাধ্যমে ১৮০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানো, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। দুর্যোগের সময় বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশনের জন্য পর্যাপ্ত আলো এবং সুবিধার ব্যবস্থাও রয়েছে।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক