কার্ডিওভাসকুলার রোগের চিকিৎসার পদপ্রদর্শক জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট
অধ্যাপক একেএম মনজুরুল আলম
প্রকাশিত : ০১:৪৫ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২৩ বুধবার
দুই যুগ আগেও কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে প্রকৃত অর্থে রোগের জন্য যতটা না ব্যথা হতো তার চেয়ে বেশি বুকে ব্যথা থাকত এ দুশ্চিন্তা থেকে যে এর প্রতিকারের জন্য এখন কোথায় যাব। দেশে কি আদৌ এর যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব। নাকি ধরণা দিতে হবে দেশ-বিদেশের চিকিৎসালয়ে। এখন বদলে গেছে সে দৃশ্যপট। এ পরিবর্তনের পেছনে দেশে পথপ্রদর্শক হিসেবে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি)।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সরকারি এ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে হৃদরোগ ও রক্তনালির অত্যাধুনিক চিকিৎসার স্বার্থে বর্তমানে কার্ডিওলজি, কার্ডিয়াক সার্জারি (অ্যাডাল্ট), পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি এবং ভাসকুলার সার্জারিসহ ১৫টি বিভাগ কাজ করছে।
বাংলাদেশে কার্ডিওভাসকুলার রোগের চিকিৎসার জন্য এনআইসিভিডি একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৮ সালে দেশে আধুনিক কার্ডিওভাসকুলার চিকিৎসা সেবার প্রসার ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কার্ডিয়াক রোগীদের জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম পরিষেবা ও যত্ন প্রদানের পাশাপাশি ১৯৮২ সালে ইনস্টিটিউটে চিকিৎসকদের জন্য স্নাতকোত্তর (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি) চালু করা হয়।
এখন নিয়মিতভাবে চিকিৎসকদের এমডি (কার্ডিওলজি), এমএস (কার্ডিওভাসকুলার ও থোরাসিক সার্জারি) এবং ডি কার্ড (কার্ডিওলজিতে ডিপ্লোমা) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ১ হাজার ২৫০ শয্যার এ ইনস্টিটিউটে অন্যান্য সহায়ক প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে নার্সদের (সিসিইউ, আইসিইউ, ক্যাথল্যাব, ওটি) প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
অ্যাডাল্ট কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রতিনিয়ত কাজের মধ্যে হার্টের রক্তনালি ব্লকের বাইপাস সার্জারি, কনভেনশনাল মেথড (বুকের মাঝে কেটে অফ পাম্প ও অন পাম্প বিটিং হার্টে) ও মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি (বুকের মাঝে না কেটে সাইডে ছোট করে কেটে অপারেশন), হার্টের ত্রুটিজনিত ভালভ প্রতিস্থাপন, হার্টের টিউমার অপসারণ, বেন্টাল অস্ত্রোপচারসহ (হার্টের ত্রুটিজনিত ভালভ ও মহাধমনি প্রতিস্থাপন) হার্টের আরো অসংখ্য জটিল রোগের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হয়। পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হার্টের জন্মগত ছিদ্র বন্ধ করা, জন্মগতভাবে রয়ে যাওয়া অতিরিক্ত মহাধমনি (পিডিএ) বন্ধ করা, টেট্রালজি অব ফেলটের (একসঙ্গে হওয়া চারটি জটিল রোগ) অপারেশন, জন্মগত ত্রুটিজনিত ভালভের রিপেয়ার অস্ত্রোপচার, বিডিজি (বাইডিরেকশনাল গ্লেন) অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। ভাসকুলার (রক্তনালির) সার্জারি বিভাগ সার্বক্ষণিক সেবার জন্য উন্মুক্ত।
ইমার্জেন্সি ভাসকুলার সার্জারি ইউনিটে দেশের সব প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত রক্তনালির জোড়া লাগানো, প্রতিস্থাপন ও দেহের যেকোনো অঙ্গের রক্ত প্রবাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে তার সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা সরকারি খরচে দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর এ হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৮৭ হাজারের বেশি সেবাপ্রত্যাশী। একইভাবে জরুরি বিভাগে এসেছেন ১ লাখ ৩০ হাজার রোগী। ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮৬ হাজারের বেশি কার্ডিওভাসকুলার রোগী। ওই বছর আড়াই হাজারের বেশি বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। আর ছোট অস্ত্রোপচার হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। হৃদরোগের যেকোনো পরীক্ষা এ হাসপাতালে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে করা হয়।
এনআইসিভিডিতে অস্ত্রোপচার পরবর্তী সময়ে রোগীর সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও সেবার জন্য রয়েছে আধুনিক আইসিইউ সুবিধা। প্রশিক্ষিত নার্স ও চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে এসব ইউনিটে।
এ প্রতিষ্ঠান শুধু চিকিৎসাই প্রদান করে এমন নয়, চিকিৎসক ও দক্ষ জনবল তৈরিতে নিবেদিত। এ প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের কার্ডিওলজিস্ট, কার্ডিয়াক সার্জন ও ভাসকুলার সার্জনও তৈরি করছে।
লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিয়াক সার্জারি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইসিভিডি)
এএইচ