চট্টগ্রাম-৩, সন্দ্বীপ: নৌকার মাঝি হতে চায় এক ডজন প্রার্থী
কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক
প্রকাশিত : ১০:৪৭ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৩ শুক্রবার | আপডেট: ১১:৩০ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৩ শুক্রবার
দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। চারদিকে নির্বাচনের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নেমেছে। নির্বাচনী আলাপ আলোচনায় সরগরম এখন পুরো দেশ। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যানার, পোস্টার, লিফলেটে ছেয়ে গেছে গ্রাম থেকে শহর। নির্বাচনী প্রচারণায় পিছিয়ে নেই দ্বীপ-উপজেলা সন্দ্বীপ। এই দ্বীপের মানুষের কাছে নির্বাচন যেন এক অন্যরকম উৎসবের নাম। মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী এবার এক ডজনের বেশি। সব কিছু ছাপিয়ে সমর্থকদের চোখ এখন দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তের দিকে।
গতকাল ২৩ নভেম্বর সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভার প্রথম দিনেই রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের দলীয় প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে বলেছেন, আগামী রোববারের মধ্যে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন চলছে নির্বাচনী আমেজে। যারা মনোনয়ন নিয়েছেন, তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঈদের খুশি বিরাজ করছে।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে গত সপ্তাহের শনি থেকে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। এরপর জাসদ এবং জাতীয় পার্টি ইতিমধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। নৌকা প্রতীক পেতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন মোট ৩ হাজার ৩৬২ জন। ৩০০ আসনে বিপরীতে তারা মনোনয়ন ফরম কেনেন। প্রতি আসনে গড়ে ১১ জন এ ফরম কিনেছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে যেতে চট্টগ্রাম-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন এক ডজন নেতা।
এদের মধ্যে রয়েছে দু'বারের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবদুল কাদের মিয়া, সাবেক পৌরসভা মেয়র জাফর উল্লাহ টিটু, চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন, মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, সাবেক সাংসদ এম ওবায়দুল হকের সন্তান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য সরওয়ার জাহান জামিল শামিম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুমানা নাসরিন রুমু এবং ইউছুপ আলি জীবন।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সন্দ্বীপে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করেছেন। সারাদেশের ন্যায় সন্দ্বীপে নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নৌকার বিকল্প নেই। তাই আবারও আমাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে। তাই আমি আবারও নৌকা প্রতীক পাবো বলে আশা রাখি। একই সঙ্গে সকলের কাছে দোয়া কামনা করছি।
স্বাচিপ-এর সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি দলের সুদিন-দুর্দিনে ছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার উপরে আস্থা রাখবেন এটা আমার বিশ্বাস। যদি আমাকে নৌকার টিকেট দেওয়া হয় তাহলে সন্দ্বীপের বিদ্যমান মৌলিক সমস্যা নিরসন ও দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন বলেন, আমি সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। আমার কোনদিন চাওয়া পাওয়ার কিছুই ছিল না। আমি নেত্রীর উপরে শতভাগ আস্থা রেখে মনোনয়ন কিনেছি। যদি আমাকে দল যোগ্য মনে করে নমিনেশন দেন তাহলে জনগণের নেতা কেমন হয় সেটা প্রমাণ করে দেব।
ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ হেলাল বলেন, আমার কৈশোর-যৌবনের সোনালি দিনগুলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য রাজপথে সময় দিয়েছি। দলের দুর্দিনে আমার ত্যাগ আছে। আশা করছি, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করবেন। তাঁর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। তিনি আছেন বলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি নেত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
সাবেক পৌরসভা মেয়র জাফর উল্লাহ টিটু বলেন, আমি তিন দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি আওয়ামী লীগের দুর্দিনে রাজনীতি করেছি। এজন্য জেল-জুলুম, মামলা এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে নৌকা প্রতীক দেন তাহলে আমি প্রথমে সন্দ্বীপের নৌ-যাতায়াত সমস্যা, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সন্দ্বীপ গঠনে অপ্রাণ কাজ করবো।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, আমি গত তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছি। সন্দ্বীপের জন্য আমি কাজ করতে আগ্রহী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে নমিনেশন দেন তাহলে পদ-পদবি বঞ্চিত, জেল জুলুমের শিকার ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাজিবুল আহসান সুমন বলেন, আমি তিন দশকের সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। ছাত্রলীগের উপজেলা, জেলা, কলেজ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুরসময়ে গ্রেফতারসহ অনেক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই ক্ষেত্রে আমি দলিয় নমিনেশন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুব লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে আজ অবদি ৩৭ বছর ঘাত প্রতিঘাত মোকাবিলা করে সংগঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর সংগঠন করতে গিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সন্দ্বীপ এর সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এর আন্তরিকতা ও ভালোবাসা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সফল রাষ্ট্র নায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমর প্রতি আস্থা রাখেন তাহলে অবশ্যই আমি সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করে নৌকা প্রতীকে বিজয় লাভ করে প্রিয় নেত্রীকে সন্দ্বীপ এর আসন উপহার দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুমানা নাসরিন রুমু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। নারীরা আজ সর্ব ক্ষেত্রে উন্নতি করছে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান। আমি যদি নমিনেশন পাই তাহলে সন্দ্বীপের নিরাপদ নৌ যাতায়াত ও স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করবো।
চট্টগ্রাম-৩ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ২ হাজার ৬৩৫ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ১৫৫ জন এবং পুরুষ ১ লাখ ৪৮০ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৯টি।
উল্লেখ্য, মাহফুজুর রহমান মিতার বাবা সন্দ্বীপের সাবেক জননন্দিত সংসদ সদস্য প্রয়াত মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সন্দ্বীপ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা জামাল উদ্দিন চৌধুরী। অপরদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন মাহফুজুর রহমান মিতা। তিনি আনারস প্রতীকে পান ৩৪ হাজার ভোট। আওয়ামী লীগে দু’জন প্রার্থী থাকায় সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশা জয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দলের টিকেট পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন মাহফুজুর রহমান মিতা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পুনরায় বিজয়ী হন। একাদশ সংসদে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন পৃথক চার দলের প্রার্থীরা। তবে গত দুই নির্বাচনে জয়ী হয়েছে নৌকা।
কেআই//