ব্যস্ত রাজধানীর স্বস্তির যাত্রা সাথে মিলছে বিনোদন
তানভীর সুমন
প্রকাশিত : ০৯:০৯ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার
রাজধানীর পূর্ব-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করতে, ৩০২ একর জায়গার উপর ২০১৩ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এই প্রকল্পের অংশ হিসাবে ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বরে হাতিরঝিলে ওয়াটার বোট সার্ভিস চালু করা হয়। শুরুতে বিনোদনের উদ্দেশ্যে চালু করা হলেও বর্তমানে এটি যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
ইতিমধ্যে প্রকল্পটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যানজটের ভোগান্তি না থাকায়, কম সময়ে স্বাচ্ছন্দে গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশ সুনাম অর্জন করেছে প্রকল্পটি। তবে যাত্রীদের দাবি দুর্গন্ধযুক্ত পানি অপসারণ এবং প্রকল্পটি পরিধি আরো বাড়ানো গেলে তারা বেশি উপকৃত হত। হাতিরঝিল ওয়াটার বোট সার্ভিসটি বর্তমানে এফডিসি, পুলিশ প্লাজা, গুলশান, মেরুল বাড্ডা এবং রামপুরায় ওয়াটার বোটের ঘাটগুলো অবস্থিত। এফডিসির 'জেটি-০১' এ মোট ১৫ টি নৌকা রয়েছে। এখান থেকেই যাত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় যান'।
হাতিরঝিল ওয়াটার বোট সার্ভিসের সরাসরি সুবিধা পায় বাংলামোটর, কাওরান বাজার, তেজগাঁও, রামপুরা, বনশ্রী, আফতাবনগর, উলন, বাড্ডা, মগবাজার, এবং গুলশানসহ আরও বেশ কিছু এলাকায় বাসিন্দারা।
বর্তমানে ওয়াটার বোট সার্ভিসটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করিম গ্রুপ। এখানে যাত্রীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও প্রতিটি নৌকাতেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী আছে এবং প্রতিটি যাত্রীকেই বাধ্যতামূলক লাইফ জ্যাকেট পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, অনেকেই এ নির্দেশ মানেন না'। কারণ যাত্রীরা বলছেন তারা খুব দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে যান।তাই এত অল্প সময়ের জন্য লাইফ জ্যাকেট পড়তে বিরক্ত বোধ করেন তারা। তাছাড়া হাতিরঝিলের পানির গভীরতা খুব কম এজন্য অধিকাংশ যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব দেন না।
তবে এই প্রকল্পটি আরো সেবা দিতে ইতিমধ্যেই রাজধানীর হাতিরঝিল হয়ে নদ্দা কালাচাঁদপুর-মহাখালী-বনানী পর্যন্ত লেক এলাকা সংস্কার ও উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কাজ শেষ হলে ওই এলাকার ১২ কিলোমিটার রুটেও চলবে ওয়াটার বাস। এতে যানজটের কবল থেকে কিছুটা স্বস্তি পাবে এসব রুটে চলাচল করা নগরবাসী। প্রতিদিনের যাতায়াতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে কয়েক লাখ মানুষ। রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আসবে নতুনত্ব।
‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত হাতিরঝিলের উপশাখা খাল (বনানী-বারিধারা-নাড়িয়া খাল) সংস্কার, পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি, নৌ যোগাযোগ, বিনোদন সুবিধার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় হবে এ সংস্কার কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৫৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগ জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১২ কিলোমিটার লেকপাড় উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ হবে। একই সঙ্গে থাকবে ৯ দশমিক ৭২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, ৮৭৮ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি ফুটওভার ব্রিজ, ছয়টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও ২২টি ভিজিটর শেড। লেকপাড়ে জনসাধারণের চলাচল সুবিধার পাশাপাশি থাকবে বিনোদনের ব্যবস্থা। ১২ কিলোমিটারের এ লেকপাড় ঘিরে নগরবাসীর জন্য গড়ে তোলা হবে বিনোদনকেন্দ্র। এছাড়া লেকের পানির গুণগত মানোন্নয়ন ও পানি সংরক্ষণেও থাকবে বিশেষ মনোযোগ ।হাতিরঝিল হয়ে কালাচাঁদপুর-মহাখালী-বনানী পর্যন্ত লেক এলাকার সংস্কার ও উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ১২ কিলোমিটার রুটে ওয়াটার বাস চলাচলের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জলাশয় উন্নয়নের পাশাপাশি নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আসবে আমূল পরিবর্তন। যেখানে নতুন করে হাতিরঝিল হয়ে মহাখালী ও বনানী খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে যোগাযোগের নতুন পথ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও পানির গুণগতমান ও প্রবাহ বাড়ানো, পানি সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে নৌ যোগাযোগ স্থাপন, লেক সংলগ্ন এলাকার পরিলক্ষিত পানি নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এই পরিকল্পনার আওতাধীন।
ঢাকা মহানগরীতে যে কয়েকটি জলাশয় অবশিষ্ট আছে এর মধ্যে অন্যতম হাতিরঝিল থেকে কালাচাঁদপুর-মহাখালী হয়ে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত লেক। হাতিরঝিল থেকে বালুনদী পর্যন্ত জলাশয়টি এখন রামপুরা-বনশ্রী খাল নামে পরিচিত। বছরের পর বছর অব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের অভাবে রাজধানীর অনেক খাল-জলাশয় দখল হয়ে গেছে। এসব খালে নেই পানিপ্রবাহ। ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হয়ে ওঠা এ জলাশয়গুলো থেকে ছড়ানো দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে ঢাকার বাতাস। এ অবস্থায় রাজধানীর জলাশয় ও জলাধার বাঁচানো জরুরী। ওয়াকওয়ে, বিভিন্ন জায়গায় লোহার বেড়া ও অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণে জলাশয়গুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। লেকপাড়ের যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে চরম অবনতির মুখে প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ।
নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থা নিরসনে জরুরীভিত্তিতে রাজধানীর সব লেক, লেকপাড়, পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন। বারিধারা লেক প্রকল্পের সঙ্গে হাতিরঝিল হয়ে কালাচাঁদপুর-মহাখালী-বনানী পর্যন্ত লেক এলাকার সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প অতি দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। শুধু তাই নয় ঢাকার আশপাশে এবং নগরীর মধ্যে যতগুলো খাল রয়েছে। তা পুনরুদ্ধার করা এখন সময়ের দাবি। যদি তা না করা যায় তাহলে জলবদ্ধতা ও অন্যান্য সংকট মোকাবেলা করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না।