জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া নিয়ে ‘এ’ প্লাস পেল সাজন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১১:৪১ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৪৩ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং পালপাড়া গ্রামের সঞ্জিত সাহা ও স্মৃতি রাণী সাহার ছেলে সাজন সাহা। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সে নবীনগর সরকারি কলেজ থেকে মানবিক শাখায় ‘এ’ প্লাস পেয়েছে। তবে তার জীবনের গল্পটা আর দশজনের থেকে একবারেই আলাদা।
বাবা হোটেল শ্রমিক হওয়ায় একদিকে দারিদ্রের কষাঘাত অন্যদিকে চতুর্থ শ্রেণীতে লেখাপড়া করা অবস্থায় তার শরীরে ধরা পড়ে জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া। আর এ কারণে তিন মাস পর পর শরীরে রক্ত দিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে হয় তাকে। গেল ২ বছর আগে একমাত্র ছোট বোনটিও মারা যায় শারীরিক অসুস্থতায়। সব মিলিয়ে তার জীবন যুদ্ধ যেন হার মানায় সবকিছুকেই।
এতসব কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও লেখাপড়া থেকে পিছু হটেননি সাজন। মায়ের অনুপ্রেরণায় ভাল কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে ছুটছে দুর্বার গতিতে। এরই ধারাবাহিকতায় লেখাপড়া চালিয়ে গিয়ে ২০২১ সালে ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয় শাখা থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে এসএসসিতে পান ৪ পয়েন্ট এবং এবার এইচএসসিতে ‘এ’ প্লাস অর্জন করে সাড়া ফেলেছেন সর্বত্র।
তার এই সাফল্যে পরিবার যেমন গর্বিত, তেমনি কলেজের শিক্ষক থেকে শুরু করে সহপাঠীরাও গর্বিত।
কথা হয় জীবন যুদ্ধে লড়াকু সৈনিক সাজন সাহার সঙ্গে। চোখে মুখে তার ছিল দৃঢ় আত্মবিশ্বাস, এগিয়ে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা। সাজন বলেন, শরীরে যখন রক্ত কমে আসে তখন শরীরজুড়ে জ্বর আসে, মাথাব্যাথা হয়, শরীর দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে আসে। তবু হার মানিনি। রক্ত দিয়ে আবারও নেমে পড়ি ভাল কিছু করার উদ্দেশ্যে। মা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেন ভাল কিছু করার জন্য। তবে শারীরিক দুর্বলতা আমাকে হার মানাতে না পারলেও দারিদ্রতা আমার এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
বাবার সামান্য আয় দিয়ে আমার চিকিৎসা আর সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার ইচ্ছে ছিল আইনজীবী হওয়ার। যেন দরিদ্র মানুষের ন্যায় বিচারে কাজ করে যেতে পারি। তারপরও আমি হতাশ হচ্ছিনা।
সাজন আরও জানান, আমার রক্তের গ্রæপ ‘ও’ পজেটিভ এবং নবীনগর স্বেচ্ছসেবী ব্লাড ফাউন্ডেশন তিন মাস পর পর আমার জন্য রক্তের ব্যবস্থা করে থাকে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
সাজনের মা স্মৃতি রাণী জানান, ছেলে প্রায় ১০ বছর ধরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তাকে নিয়ে আমি অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখি তবে অর্থহীন সংসারে এগিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। ছোট মেয়েটিও দুই বছর আগে মারা গেছে। এখন সাজনই আমার একমাত্র সম্বল। যেহেতু অসুস্থ তাই আমি চাই সে একটা ভাল সরকারি চাকরি করুক।
নবীনগর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ এ কে এম রেজাউল করিম জানান, সাজনের কৃতিত্বে আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত। সে কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র। আশা করি, তার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে। আর আমরা নিজস্ব উদ্যোগে তার সহযোগিতায় পাশে থাকব।
এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, বিষয়টি শুনেছি, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে।
এএইচ