এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:৫৭ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ রবিবার
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারাদেশের ন্যায় পাকিস্তানী সৈন্যরা ঠাকুরগাঁয়েও আক্রমণ করেছিল নিরস্ত্র মানুষের উপর। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনে মেতে ওঠে নরপিশাচ সৈন্যরা। টানা নয় মাস মরণপন লড়াইয়ের পর ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।
প্রতিবছরের ৩ ডিসেম্বর নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয় ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত দিবস। এবারও দিবসটি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী জেলা সংসদ।
’৭১-এর ১৭ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর, গড়েয়া শুখাপনপুকুরী এলাকার মুক্তিকামী মানুষ জীবন রক্ষায় ভারত অভিমুখে যাত্রাকালে স্থানীয় রাজাকাররা জাটিভাঙ্গা নামকস্থানে তাদের পথরোধ করে। পরে তাদের পাথরাজ নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করা হয়। একইভাবে পাকিস্তানী বাহিনী হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার খুনিয়া দীঘির পাড়ে সাধারণ নিরীহ মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যা করে।
পরবর্তীকালে পুকুরটি খুনিয়া দীঘি নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৫ এপ্রিলের মধ্যেই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানী বাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষরাও।
৬নং সেক্টরের আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ মিত্র বাহিনীর সহায়তায় ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় থানা দখল করে করে নিলে পাকিস্তানী শত্রুরা পিছু হটতে শুরু করে। তারা পঞ্চগড় ছেড়ে পিছু হটে ময়দানদিঘী, বোদা এবং পরে ঠাকুরগাঁও থানার ভুল্লীতে ঘাঁটি করে। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যাতে না আসতে পারে সেজন্য তারা বোমা মেরে ভুল্লী ব্রীজটি উড়িয়ে দিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
কিন্তু ১ ডিসেম্বর রাতে ব্রীজের ওপারে পৌঁছে যায় মুক্তিযোদ্ধাগণ। সেখানে চলে রাতভর সম্মুখ যুদ্ধ। ২ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াইয়ে শত্রুবাহিনীরা পিছু হটতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহায়তায় ভুল্লী পার হয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের দিকে রওনা দিলে দেখতে পায় রাস্তায় মাইন পোতা।
পরে মুক্তিযোদ্ধারা মাইন অপসারণ করে প্রচণ্ড এগুতে থাকলে পাকিস্তানী বাহিনী ঠাকুরগাঁও শহর ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং ৩ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।
শত শত মুক্তিযোদ্ধা ৩ ডিসেম্বর ভোরে শহরে ঢুকে ফাঁকা ফায়ার করতে করতে ও জয়বাংলা ধ্বনিতে শহর প্রকম্পিত করেন। এরপর ঠাকুরগাঁও থানা চত্বরে তারা প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ।
আজও সেই স্মৃতি বহন করছেন স্বজন ও যুদ্ধাহতরা।
সেই দিন মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে মূল্যায়ন ও সম্মান করা হয়েছিল সেটি ভোলার নয় এবং আজও মনে পড়ে সেই দিনে সেই স্মৃতি কথা বলে জানান, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার।
৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যের একটি অংশ ও গৌরবের দিন। দিবসটি উদযাপন ও নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
নতুন প্রজন্মের কাছে আজকের এই দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে আরও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান মুক্তিকামী সর্বস্তরের মানুষ।
এএইচ