এক পা নিয়ে সাত শৃঙ্গ জয়ী অরুণিমার গল্প
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:৩২ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ সোমবার
একটি পা নেই। কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতায় থেমে থাকেননি, বরং সব বাধা জয় করে পৌঁছে গেছেন সাফল্যের চূড়ায়। দুর্ঘটনায় এক পা হারালেও শুধুমাত্র মনের জোরে নকল পা নিয়েই মাউন্ট এভারেস্টসহ বিশ্বের সাতটি দেশের সাত শৃঙ্গ জয় করেছেন ভারতের অরুণিমা সিনহা।
কাঠের পায়ে একে একে সাতটি দেশের সাত শৃঙ্গ জয় করেছেন তিনি। প্রথমে ২০১৩ সালে মাউন্ট এভারেস্ট, এরপর একে একে মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো(তানজানিয়া), মাউন্ট এলব্রুস(রাশিয়া), মাউন্ট কোসসিউস্কো (অস্ট্রেলিয়া), মাউন্ট অ্যাকনকাগুয়া (দক্ষিণ আমেরিকা), মাউন্ট ডেনালি (উত্তর আমেরিকা) এবং মাউন্ট ভিনসন (আন্টার্কটিকা) জয় করেন তিনি।
অরুণিমা সিনহার জন্ম ২০ জুলাই ১৯৮৮ সালে, ভারতের উত্তর প্রদেশে। তিনি জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন।
১২ এপ্রিল ২০১১ সালে লখনউ থেকে দিল্লি যাওয়ার পদ্মাবতী এক্সপ্রেস ধরেছিলেন অরুণিমা। সিআইএসএফ-এর পরীক্ষা দিতে দিল্লি যাচ্ছিলেন। কিন্তু ট্রেনে একটি ডাকাত দল তার ব্যাগ ও সোনার চেন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বাঁধা দেন তিনি। যিার ফলস্বরুপ চলন্ত ট্রেন থেকে তাকে ফেলে দেয় ডাকাতরা। এসময় পাশের লাইনে অন্য একটি ট্রেনে কাটা পড়ে অরুণিমার এক পা। এই যাত্রায় প্রাণে বাঁচলেও একটি পা হারাতে হয় তাকে।
চিকিৎসা চলে দীর্ঘদিন। আর এ সময়ই অরুণিমা ভাবেন, ভলিবল তো আর খেলা সম্ভব নয়। কিন্তু তাই বলে কি জীবন থেমে থাকবে! মুহূর্তেই এভারেস্ট আরোহণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আর তার এই দৃঢ় ইচ্ছায় অনুপ্রেরণা জাগায় ভারতীয় ক্রিকেট খেলোয়াড় যুবরাজ সিং, যিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়েছেন।
এভারেস্ট জয়েরি সিদ্ধান্ত নিলেও অরুণিমার ব্যক্তিগত চিকিৎসক একদম বেঁকে বসেছিলেন। কিছুতেই অনুমতি দিতে চান নি। কিন্তু অরুণিমা দমার পাত্রী নন। অসম্ভবকে সম্ভব করেই ছাড়বেন। এমন দৃঢ় সংকল্প এবং প্রশিক্ষণ সত্যি সত্যিই তাকে পৌঁছে দিয়েছে এভারেস্টে।
অরুণিমা সিনহা হলেন এক পা বিহীন প্রথম নারী, যিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঠে প্রমাণ করেছেন যে শারীরিক অক্ষমতা মানুষকে অক্ষম করে না; মানুষ অক্ষম হয় মানসিক দুর্বলতায়।
২০১৩ সালের ২১ মে। দিনটিকে কোনওদিন ভুলবেন না অরুণিমা। ৫২ দিনের পরিশ্রম সফল করে বিশেষভাবে সক্ষম বিশ্বের প্রথম মহিলা হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের নজির গড়েন। বরফের মধ্যে সৃষ্টির্কাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট চিরকূট গেঁথে দিয়ে আসেন।
অসীম সাহস, জেদ বুকে নিয়ে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলায় ২০১৫ সালে অরুণিমা সম্মানিত হন পদ্মশ্রী খেতাবে। ওই একই বছর তাকে তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড দিয়েও সম্মান জানায় ভারত সরকার।
২০১৪ সালে অরুণিমার লেখা বই 'বর্ন এগেন অন দ্য মাউন্টেন' প্রকাশিত হয়। পদ্মশ্রী, তেনজিং নোরগে সর্বোচ্চ পর্বতারোহী পুরস্কার এবং অর্জুন পুরস্কার সম্মান পান। একদিন যারা ভেবেছিলেন, থমকে গিয়েছে অরুণিমার জীবন তারাই চোখ বিস্ফোরিত করে দেখেছেন অরুণিমার কীর্তি।
এসবি/