ঢাকা, রবিবার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

ইছামতি নদীর তীরে লালন উৎসব

তানভীর সুমন

প্রকাশিত : ০৯:১৩ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ সোমবার | আপডেট: ১০:০০ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ সোমবার

লালন দর্শন ও বাংলার বাউল সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে  প্রতিবছর অগ্রহায়ণের পূর্ণিমা তিথিতে   ১৯ বছরের ধরে মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানের দোসরপাড়া গ্রামে ইছামতি নদীর তীরে পদ্মহেম ধামে আয়োজন করা হয় লালন উৎসব।  মূলত ফকির লালন সাঁইজির  ‘মানব প্রেমের বাণী’ গানের মাধ্যমে সকলের কাছে পৌঁছানো এবং ধর্ম-বর্ণ সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে পরমাত্মার মুক্তির দর্শন সকলের কাছে তুলে ধরা অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।

এবছর  ০২ থেকে ০৩ ডিসেম্বর  লালন শাহ বটতলায় দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো সাধুসঙ্গ। উৎসবকে ঘিরে দোসরপাড়ার বটতলায় সাধুগুরু ও লালন ভক্তবৃন্দ সমবেত হন। উক্ত অনুষ্ঠানে লালন দর্শন ও লালনগীতি পরিবেশন করেন কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লালন সাধক ও ভক্ত-অনুসারীরা। লালন উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেন কুষ্টিয়াসহ দেশ-বিদেশের শতাধিক সাধুগুরু, বাউলশিল্পী। সাধুসঙ্গের  দুই দিনে হাজার হাজার  লালন ভক্ত অনুসারীদের সমাগম ঘটে। এছাড়াও উৎসবে দেশের বিভিন্ন নাট্য শিল্পী ও  নানা শ্রেণী পেশার মানুষ  উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যায় শুরু হয়  লালনগীতির মূল আসর। পরের দিন দুপুরে পূর্ণ  সেবার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ২৪ ঘন্টার অধিবাস।  

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো লালন সাইজী  কখনও এখানে আসেননি তবে এসেছে তার দর্শন। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের এই  গ্রামটি স্থানীয় অনেকের কাছে বাউল বাড়ি বা লালন আশ্রম নামেও পরিচিত। পদ্মহেম ধামের ইতিহাস কিন্তু খুব বেশিদিনের নয়। ২০০৪ সালে ফটো সাংবাদিক কবির হোসেন লালন প্রেমের দর্শন সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গড়ে তুলেছেন সাইজীর এই বারামখানা, গাছগাছালি ঘেরা আর প্রকৃতির নির্জনতায় ইছামতীর একদম সাথেই গড়ে তোলা হয়েছে এই আশ্রম।

পদ্মহেমের সভাপতি কবির হোসেন বলেন- ‘আমরা ১৯ বছর ধরে এই সাধুসঙ্গ করে আসছি,  মূলত লালন সাঁইজির বাণী ও দর্শন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। যেন একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি আমরা। যে সমাজে মানুষে মানুষে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। 

প্রকৃতির সাথে সংগীতের কি এক যে অদ্ভুত সম্মিলন ঘটে ইছামতি নদীর তীরে, তা কেবল সশরীরে উপস্থিত হলেই আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন। নদী তীরে বসেই শীতের হিমেল হাওয়ার সাথে বাউল গান আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক পৃথিবীতে। যে পৃথিবীতে বিভেদ ভুলে মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলে। তবে সময়ের পরিক্রমায় লালন দর্শন ছড়িয়ে পরবে দেশ থেকে দেশান্তরে। এমনটাই আশা আগত লালন ভক্ত অনুসারীদের।