বিএসইসির নেয়া উদ্যোগকে ঘিরে সক্রিয় কারসাজি চক্র (ভিডিও)
মেহেদী হাসান
প্রকাশিত : ১১:৩০ এএম, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার
শক্ত মৌলভিত্তির অনেক শেয়ারের ক্রেতা নেই। আটকে আছে বেধে দেয়া সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইসে। তবে বন্ধ বা উৎপাদনে না থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। লেনদেনেও এগিয়ে অতিদুর্বল এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্ধ কোম্পানি চালু বা পর্ষদ পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিএসইসির নেয়া উদ্যোগকে ঘিরেই কারসাজি চক্র সক্রিয়। তবে কারসাজির অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে মত বিএসইসির।
২০২০ সালে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দায়িত্ব নেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। পরে অন্যান্য উদ্যোগের পাশাপাশি বন্ধ বা লোকসানি কোম্পানি সচল ও পর্ষদ পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেয় বিএসইসি। লক্ষ্য, কোম্পানিগুলো মুনাফায় ফিরলে লাভবান হবে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীরা।
এরমধ্যে বাংলাদেশ মনস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং, তমিজুদ্দিন টেক্সটাইল, মুন্নু ফেব্রিকস, সোনালী পেপার এবং পেপার প্রসেসিং এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ওটিসি মার্কেট থেকে মেইন বোর্ডে ফেরানো হয়। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওয়াইমেক্স ইলেক্ট্রোড এবং ইয়াকিন পলিমারের মালিকানায় বদল আসে।
এছাড়া ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, আলহাজ টেক্সটাইল, ফুয়াং ফুডস, এমারেল্ড অয়েল, অ্যাসোসিয়েটড অক্সিজেন, অগ্নি সিস্টেমস, সিএন্ডএ টেক্সটাইলস, ফ্যামিলিটেক্স, বিডি ওয়েল্ডিং ইলেক্সক্ট্রোডস, ফারইস্ট ফাইনান্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রতনপুর স্টিল রিরোলিং মিলস, ফাস ফাইনান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফাইনান্স এবং ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু কারসাজি চক্র এসব পরিবর্তনকে ইস্যু বানিয়ে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়াচ্ছে। যা পরে বিনিয়োগকারীদের হাতে ধরিয়ে কেটে পড়ছে তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক ড. আল আমিন বলেন, “এই কারসাজি চক্র মালিকপক্ষের সঙ্গে বসে ডিভিডেন্ট সম্পর্কে তারা সিদ্ধান্ত নেয়। নামকাওয়াস্তে ডিভিডেন্ট দিয়ে তারা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে। এই শেয়ারগুলো যেহেতু কোনো বিনিয়োগকারী কিনে না, সাধারণ বিনিয়োগকারী কিনে না। ওই কারসাজি চক্র এই শেয়ারগুলো নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। এরপর তারা বাজারে বিভিন্ন ধরনের খবর ছড়ায়। এতে মানুষ ওই শেয়ারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তখন ওই শেয়ারগুলো তাদের হাতে তুলে দেয়। এই জায়গায় যারা বিনিয়োগ করবে তারা আর এখান থেকে বের হতে পারবেনা।”
এছাড়াও বাজারে আরও অনেক কোম্পানির মলিকানা পরিবর্তনের গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়ানোসহ নানা কারসাজি চলছে। যেমন, ২০০৩ সাল থেকে বন্ধ ওটিসির কোম্পানি রাঙ্গামাটি ফুডস। ডিএসইর তদন্তে দেখা গেছে, একটি গ্রুপ কোম্পানিটি মাত্র ১ কোটি টাকায় কিনে নেয়। পরে ডিএসইর এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হতে কোম্পানির পক্ষে কোনো অর্থ না নিয়েই প্রায় ৪২ কোটি টাকার নতুন শেয়ার ইস্যু করে। এই জাতিয়াতি ধরা পড়ার পর এসএমই বোর্ডে ফেরার আবেদন বাতিল করেছে ডিএসই।
ড. আল আমিন বলেন, “এই বন্ধ কোম্পানি উৎপাদনে আসলে শেয়ার হোল্ডাররা উপকৃত হতো। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে, নামকাওয়াস্তে তারা ১-২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে, সেই শেয়ার ৪০-৫০ কোটি টাকা বিক্রি করে দিচ্ছে।”
বিএসইসি বলছে, তাদের উদ্যোগের ফলে বেশিরভাগ বন্ধ কোম্পানি উৎপাদনে ফিরেছে। লাভের মুখও দেখেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোও ভালো করছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, “যেটা বোর্ডের সমস্যা সেটা বোর্ডের, যেটা ম্যানেজমেন্টের সমস্যা সেটা ম্যানেজমেন্টের। এগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নিলাম, ৩০-৩৫টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করেছি। এর মধ্যে ১৫-২০টি উৎপাদনে চলে এসেছে, বাকিগুলোও চলে আসবে। যেগুলো শুরু হয়েছে সেগুলোর এতো তাড়াতাড়ি লভ্যাংশ যাওয়া হচ্ছে কিন্তু এদের প্রচুর লোকসান আছে।”
শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য ও লেনদেন বৃদ্ধির ঘটনাকে কারসাজি বলতে নারাজ বিএসইসি। বলছে, শেয়ারের মূল্য ঠিক করা বিএসইসির দায়িত্ব কাজ নয়।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বলেন, “তারা এগুলো চালু করাতে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।”
এএইচ