ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও থেমে যাননি জহিরুল ইসলাম

মোঃ নুর আলম, রূপগঞ্জ থেকে

প্রকাশিত : ০৩:২৩ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ রবিবার

নারায়ণগঞ্জের রূপগথেঞ্জর এডভোকেট জহিরুল ইসলাম শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করে দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে। আইনজীবী ও সমাজসেবক হিসেবে সফলতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। যদিও ছোটবেলায় টাইফয়েডে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তিনি। তবে থেমে যাননি, লেখাপড়া করে আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত।

বাবা ছিলেন পাটকলের কর্মী, দৃষ্টিশক্তি হারানো ছেলের পড়ালেখার উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না তার। কিন্তু জহিরুলের অদম্য আগ্রহ ছিল লেখাপড়ার প্রতি। তাই মিরপুরে বিশেষ চাহিদা স্কুলে শিশু শ্রেণী এবং ১৯৯৩ সালে দ্য সেলফিশ আর্মি স্কুল থেকে ১৯৯৭ সালে পঞ্চম শ্রেণী, ১৯৯৮ সালে জামালপুর সিংহজানী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে মাধ্যমিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন জহিরুল। 

২০০৩ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন নারায়ণগঞ্জের সরকারি আদমজী এম ডব্লিউ কলেজে। সেখান থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৫-৬ সেশনে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। ২০০৯ সালে  সেখান থেকেই এলএলবি (অনার্স) পাস করেন। এবং ২০১০ সালে এলএলএম(মাস্টার্স) পাস করেন। 

২০১৩ সালে বার কাউন্সিল থেকে সনদপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য। কম সময়েই আইন ব্যবসায় সুনাম অর্জন করেন জহিরুল ইসলাম। 

চোখের আলো না থাকা তার এ পর্যন্ত আসায় কোন বাধা তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু অন্তরের আলোয় তিনি ঠিকই দেখেছেন অন্য সব শারীরিক সীমাবদ্ধ মানুষের কষ্ট ও সংগ্রাম। তাই স্বার্থপরের মত চুপ করে বসে থাকতে পারেননি তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন রূপগঞ্জ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, যার বর্তমান সভাপতি তিনি। 

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি রূপগঞ্জের প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদ-আপদে যেমন ত্রাণ দিয়েছে; তেমনই কেউ নির্যাতিত হলে তার প্রতিকার করেছে। বেকারদের স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করেছে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছে। বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিয়ের খরচ জুগিয়েছে। 

সবশেষ করোনা মহামারীর সময়ে জহিরুল ইসলাম ও তার সংগঠনের উদ্যোগে রূপগঞ্জের ৮শ’র বেশি প্রতিবন্ধীর পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। লকডাউনের অনিশ্চিত সময়ে এ কার্যক্রম ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যক্তিজীবনে এডভোকেট জহিরুল ইসলাম বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। ছেলে তাহমিদ ইসলাম তাজ (৯) হলি চাইল্ড স্কুলে লেখাপড়া করে। মেয়ে জারিন ইসলাম (৫)।

জহিরুল ইসলাম শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করে একজন পিতা, স্বামী, আইনজীবী ও সমাজসেবক হিসেবে সফলতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।সবার জন্য এখন অনুপ্রেরণার উৎস তিনি। 

এএইচ