ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

পরিবার থেকেই শুরু হোক শুদ্ধাচার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৫৬ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার

ভালো মানুষের ভূষণ শুদ্ধাচার। শুদ্ধাচারী মানুষই ভালো মানুষ। আসলে যা-কিছু ভালো, যা-কিছু কল্যাণকর তা-ই শুদ্ধ। যা-কিছু মন্দ, যা-কিছু অকল্যাণকর তা-ই অশুদ্ধ। যা-কিছু সত্য, সুন্দর ও শুভ তা-ই শুদ্ধ। যা-কিছু অসত্য, পঙ্কিল ও অশুভ তা-ই অশুদ্ধ। যা-কিছু ন্যায় ও মানবিক তা-ই শুদ্ধ। যা-কিছু অন্যায়, জুলুম ও অমানবিক তা-ই অশুদ্ধ। যা শুদ্ধ ও কল্যাণকর তা-ই ধর্ম আর যা অশুদ্ধ ও অকল্যাণকর তা-ই অধর্ম। ধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে শুদ্ধাচার আর অধর্মের ফলিত রূপ হচ্ছে দুরাচার। আপনার আচারই বলে দেবে আপনি ধার্মিক, না অধার্মিক। আসলে ধার্মিক যেমন দুরাচারী হতে পারে না, তেমনি দুরাচারীও কখনো ধার্মিক বলে গণ্য হতে পারে না।

‘শুদ্ধাচারী’ হতে হলে প্রথম প্রয়োজন ব্যক্তির আচার-আচরণে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা। বর্তমান সংকলনে এ ধারণাগুলোই দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে−সাবলীল ও সহজবোধ্য ভাষায়। আন্তরিকতার সাথে যিনিই এগুলো অনুসরণের চেষ্টা করবেন, নিঃসন্দেহে তিনি হয়ে উঠবেন পরিশীলিত ভালো মানুষ। তিনিই হয়ে উঠবেন শুদ্ধাচারী।

একজন মানুষের আসল রূপ প্রকাশ পায় পরিবারে, ঘরোয়া পরিবেশে। কিন্তু সাধারণভাবে ঘরেই শুদ্ধাচারের অনুশীলন হয় সবচেয়ে কম। ঘরে যত শুদ্ধাচারী হবেন, সদাচারী থাকবেন, পরিবারে প্রশান্তি তত বাড়বে; বাইরেও আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সুন্দর আচরণ করতে পারবেন।

চলুন পরিবারে প্রতিদিন যেই আচরণগুলো করা উচিত জেনে আসা যাক...

> প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ/ থ্যাংকস গড/ হরি ওম বা প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ একটি সুন্দর দিনের জন্যে।

> পরিবারে ছোট-বড় সবার সাথে সালাম বিনিময়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

> বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সম্ভব হলে মা-বাবা, স্বামী/ স্ত্রী এবং অন্য সদস্যদের বলে বের হোন। কোথায় যাচ্ছেন, কখন ফিরবেন তা-ও বলুন।

> বাসায় ফিরে আগে সবার খোঁজখবর নিন।

> ঘরে ঢুকেই বা কেউ ঘরে ফেরার সাথে সাথেই  কোনো অভিমান-অভিযোগ প্রকাশ করবেন না।

> যত ব্যস্ততাই থাকুক, দিনে অন্তত একবেলা পরিবারের সঙ্গে খাবার খান।

> পারিবারিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করুন।

> প্রত্যেকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে শ্রদ্ধা করুন। অনুমতি ছাড়া কারো মোবাইল ফোন ধরবেন না। ডায়েরি, চিঠি খুলে দেখবেন না; সামনে খোলা থাকলেও পড়বেন না।

> পারিবারিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে চেষ্টা করুন। মত না মিললেও অধিকাংশ সদস্যের মতামতকে গুরুত্ব দিন এবং সেভাবে কাজ করুন।

> পরিবারে কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। খুঁটিনাটি বিষয়ে অনড় অবস্থান নেবেন না। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসি চালানো, ফুল স্পিডে ফ্যান ছাড়া, ফুল ভলিউমে গান শোনা, অন্ধকার ঘরে ঘুমানো, অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ছাড় দিতে আন্তরিক হোন।

> পরিসর যত ছোটই হোক, পরিবার একটি সঙ্ঘ। তাই অপরের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় রাখুন।

> কাউকে হেয় করে বা খোঁচা দিয়ে কথা বলা, কূটতর্ক ও নেতিবাচক মন্তব্য করা পুরোপুরি বর্জন করুন।

> গালিগালাজ, অশ্লীল ও মন্দ কথার চর্চা পারিবারিক অশান্তির অন্যতম কারণ ও আলোকিত পরিবার গঠনে অন্তরায়। তাই পরিবারে সবসময় ভালো কথা বলার অভ্যাস করুন।

> কখনো কারো রান্নার নিন্দা বা সমালোচনা করবেন না।

> নিজের কাজ নিজেই করার চেষ্টা করুন। ঘরের কাজে সাধ্যমতো সহযোগিতা করুন।

> পরিবারের সদস্যদের বিশেষ দিনগুলো মনে রাখুন ও শুভেচ্ছা জানান।

> ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার আলোকে পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ে তুলুন এবং পারিবারিকভাবে সেগুলোর চর্চা করুন।

> পথ ও বাইরের বিরক্তি বা কষ্ট দরজার বাইরে রেখে বাসায় প্রবেশ করুন হাসিমুখে। ঘরে ঢুকে প্রথমেই সবাইকে সালাম দিন।

> দরজায় কড়া নাড়ার সুযোগ থাকলে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাউকে ডাকাডাকি করবেন না। দরজায় কড়া নাড়ুন বা কলিং বেল বাজান।

> বাসায় প্রবেশের সময় বেল বাজানো/ কড়া নাড়ার আগে মনে মনে তিন বার বলুন-‘বাসায় যাচ্ছি শান্তির জন্যে। আমি শান্ত থাকব।’

> ঘন ঘন কলিং বেল বাজাবেন না। বেল না থাকলে দরজার কড়া আস্তে নাড়ুন কিংবা বাসায় আছেন-এমন কাউকে ফোন করে দরজা খুলতে অনুরোধ করুন।

> বাসায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ কেউ থাকলে পারতপক্ষে কলিং বেল না বাজিয়ে আস্তে কড়া নাড়ুন।

> কলিং বেল বাজানোর পর দরজা খুলতে দেরি হলে বিরক্ত হবেন না। ভুল করে কেউ কলিং বেল বাজালে দরজা খুলে তাকে ধমকে উঠবেন না।

> জুতো খুলে নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। তারপর ভেতরে ঢুকুন। ঘরে পরার জন্যে আলাদা স্যান্ডেল রাখুন।

> কারো মুখের ওপর শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেবেন না।

> দরজা-জানালা বন্ধের কাজটি সন্তর্পণে করুন।

> বিশ্রামরত কারো অসুবিধা না করে যতটা সম্ভব নীরবে আপনার কাজ করুন।

> অনুমতি ছাড়া কারো শোবার ঘরে ঢুকবেন না, বিছানায় বসবেন না। বসতে হলেও বিছানায় পারতপক্ষে পা তুলবেন না।

> কারো ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় উঁকি দেবেন না, আড়চোখে তাকাবেন না। আড়ি পেতে অন্যদের কথা শোনা থেকে বিরত থাকুন।

> নিজ কক্ষে অবস্থানকালে অন্য বাড়ির জানালা/ ছাদ/ বারান্দা বা বাইরে থেকে কেউ আপনাকে লক্ষ করছে কিনা−সে ব্যাপারে সচেতন থাকুন।

> অন্য কেউ রুমে থাকলে টিভি লাইট ফ্যান এসি ইত্যাদি চালানো কিংবা স্পিড ও ভলিউম বাড়ানো-কমানোর আগে তার অনুমতি নিন।

> অফিসের বিষয়গুলো অফিসেই রেখে আসুন। বাসায় অফিসের বিষয় নিয়ে কোনো আলাপ বা বিরক্তি প্রকাশ করবেন না।

> ওয়াশরুমে বা আড়ালে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করুন।

> অপরিচিত কাউকে কারো বাসায় নিয়ে যাওয়ার আগে তার অনুমতি নিন।

> বারান্দা থেকে ফেরিওয়ালার সঙ্গে দরদাম না করে বাইরের দরজায় আসতে বলুন।

> নিচতলার বাসিন্দাদের অসুবিধা হতে পারে−এমন শব্দ যেন আপনার বাসার মেঝেতে না হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকুন।

> বারান্দায় কাপড় শুকাতে দিলে খেয়াল রাখুন যেন তা নিচতলার বারান্দা ঢেকে না ফেলে।

> ভেজা কাপড় চুঁইয়ে পড়া কিংবা ছাদ পরিষ্কারের পানি নিচতলার বারান্দায় বা পথচারীর গায়ে যেন না পড়ে। ছাদ বা বারান্দায় রাখা গাছের টবে পানি দেয়ার সময়ও সচেতন থাকুন।

> প্রতিবেশীর সমস্যা হয়−এমন শব্দে অডিও প্লেয়ার বা টিভি, কম্পিউটার/ লাউডস্পিকার চালাবেন না।

> বাড়িতে/ ছাদে কোনো পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে প্রতিবেশীদের সুবিধা-অসুবিধা মাথায় রাখুন। আবাসিক এলাকায় উচ্চস্বরে গানবাজনা ও ডিজে পার্টি আয়োজন করা থেকে বিরত থাকুন। এটি একটি সামাজিক অনাচার।

> বাসায় (রান্নাঘর, শোবার ঘর, বসার ঘর, খাবার ঘর) পর্যাপ্ত ময়লা ফেলার ঝুড়ি/ বিন রাখুন। নির্দিষ্ট স্থানেই ময়লা ফেলুন।

> রান্নাঘরের সবরকম উচ্ছিষ্ট ময়লার ঝুড়ি/ বিনে রাখা পলিব্যাগের ভেতরে ফেলুন। ময়লা সংগ্রহকারী এলে তারপর তা বাইরে বের করুন। ভর্তি বা খালি বিন সিঁড়িঘরে/ বাসার সামনে রেখে দুর্গন্ধ ছড়াতে দেবেন না। ময়লা সংগ্রহকারী আসার আগেই বিন বাইরে রেখে আসতে হলে পলিব্যাগের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করুন।

> বৃষ্টির দিনে সদর দরজার বাইরে বাড়তি একটি পাপোশ রাখুন। এতে ঘর কাদা থেকে মুক্ত থাকবে।

লেখাটি শহীদ আল বোখারী মহাজাতক- এর শুদ্ধাচার বই থেকে নেওয়া

এমএম//