বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির যাঁতাকলে রাজধানীর দু:খী প্রজারা
শাকেরা আরজু
প্রকাশিত : ০২:৪৪ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ বুধবার
আসছে নতুন বছর। নতুন বছরে আবারও বাড়বে বাড়ি ভাড়া। এমন শংকায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শিরিন জামান। কিন্তু তিনি বাসা ছাড়তে অপারগ, কারণ তার ছেলেমেয়েরা যে স্কুলে পড়ছে সেটা বাসা থেকে কাছে। গতবার ভাড়া বাড়ানোর সময় বাড়িওয়ালা পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেন বাড়তি ভাড়া দিতে রাজি না হলে বাসা ছেড়ে দিতে হবে। শিরিন জামানের মত এমন শংকায় আরও অনেকে।
নতুন বছরে হয়তো আয় বাড়বে না কিন্তু ব্যয় বাড়বে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাবে বাড়ি ভাড়ার পেছনে। অনেকে আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে পড়বেন নানা জটিলতা ও ভোগান্তিতে।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, অধিকাংশ ভাড়াটিয়া বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন জানেন না। ফলে তারা জানেনা প্রতিকার কি। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১-এ বাড়িভাড়া সংক্রান্ত সমস্যা ও সমাধানের কথা বলা আছে।
আইনে সুনির্দিষ্ট বেশকিছু বিষয় রয়েছে বাড়ি ভাড়া দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রে।
* বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে একটি লিখিত চুক্তিনামা থাকতে হবে, যেখানে উভয়পক্ষের স্বাক্ষর থাকবে। এতে উল্লেখ থাকবে ভাড়ার মেয়াদ, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ভাড়ার পরিমাণ, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস বিলসহ আরও নানা প্রয়োজনীয় বিষয়। বাড়ির অবস্থান ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে কত টাকা জামানত হবে, তা চুক্তিনামায় উল্লেখ থাকতে হবে।
* বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে আছে, মানসম্মত ভাড়া কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে দুবছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। দুবছর পর মানসম্মত ভাড়ার পরিবর্তন করা যাবে।
* মানসম্মত ভাড়া থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বেশি বাড়িভাড়া আদায় করলে সেক্ষেত্রে প্রথমবারের অপরাধের জন্য মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে তার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে বাড়ির মালিক দণ্ডিত হবেন এবং পরবর্তী প্রত্যেক অপরাধের জন্য এক মাসের অতিরিক্ত যে ভাড়া গ্রহণ করা হয়েছে তার তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদন্ডে বাড়ির মালিক দণ্ডিত হবেন।
* আইনে অগ্রিম হিসেবে এক মাসের ভাড়া নেওয়ার বিধান থাকলেও নেওয়া হয় সর্বনিম্ন ২ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত।
* বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী ২৫ হাজার টাকার বেশি ভাড়া হলে তা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। বাসা ভাড়া দেয়ার সময় অবশ্যই রশিদ রাখতে হবে।
তবে বাড়িভাড়া আইন ১৯৯১ এ অনেক দুর্বলতা থাকায় আইনের জটিলতা কমাতে ২০১২ সালে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিচ ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মনজিল মোরসেদ।
তিনি বলেন, মানসম্মত বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করার কথা সরকারের। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। এ কারণে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের মধ্যে প্রায়ই বিরোধ হচ্ছে। অনেক বাড়িওয়ালাই ইচ্ছে মতো ভাড়া বাড়াচ্ছেন। আবার অনেক ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছেন। এসব নিয়ে নানা জটিলতা হচ্ছে। কিন্তু কোনও ভাড়াটিয়া যে আদালতে গিয়ে প্রতিকার পাবেন, আইনি জটিলতা বড় হওয়ায় সেটা তারা করতে পারছেন না। এই কারণে একটি আবেদন করেছিলাম কমিশন গঠনের (ভাড়া নিয়ন্ত্রণের) জন্য। সেই আবেদন শুনে আদালত রুল জারি করেছেন তবে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি সেই রুলের।
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে বর্তমানে প্রচলিত বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি জারি করা হয়। অন্যদিকে ১৯৯১ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মহানগরীকে ১০টি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি)। এ আইনের বিধান কার্যকর না হওয়ায় এবং কোনো এলাকার ভাড়া কতো হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করুক, এটি কার্যকর চেয়ে রিটটি করা হয়।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে অধিকাংশ ভাড়াটিয়া বাড়িভাড়া আইন সম্পর্কে জানেন না। এসব কারণে রিটে আবেদনে প্রস্তাব ছিল ওয়ার্ডভিত্তিক সামাজিক কমিটি করে দেওয়া হোক। অন্যান্য দেশেও এমন বিধান রয়েছে বলে জানান মনজিল মোরসেদ।
একুশে টেলিভিশনকে তিনি জানান, নতুন বছরে রিটটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করেছেন তিনি।
এএইচ