নিজের কাজ করুন সবচেয়ে ভালভাবে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৫৬ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ রবিবার
আমাদের একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো জীবনে বড় হতে হলে বড় বড় কাজ করতে হবে। আসল সত্য হলো জীবনে বড় হতে হয় ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়েই।
বলতে পারেন, ব্যর্থ মানুষেরাও তো ছোট ছোট কাজ করে! আসলে সফল আর ব্যর্থ মানুষের কাজের মধ্যে মূল পার্থক্যের জায়গা হলো, সফল মানুষেরা যে-কোনো কাজ, তা ছোট হোক কিংবা বড়, করেন সবচেয়ে ভালভাবে।
সিঙ্গাপুরের প্রথম অলিম্পিক সোনাজয়ী
২০১৬ সালের রিও ডি জেনেরিও অলিম্পিকে ১০০ মিটার বাটারফ্লাই সাঁতার ইভেন্টে সোনা জয় করে হৈচৈ ফেলে দেন জোসেফ স্কুলিং (Joseph Schooling) নামে একুশ বছর বয়সী এক সাঁতারু। তার হাত ধরে অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো সোনা জয় করে সিঙ্গাপুর। স্কুলিংয়ের ৫০.৩৯ সেকেন্ড টাইমিং জাতীয়, দক্ষিণ এশীয়, এশীয় এবং অলিম্পিক পর্যায়ে বেশ কিছু রেকর্ড গড়ে। তবে এসবের চেয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশি শোরগোল পড়ার কারণ ভিন্ন কিছু।
জোসেফ স্কুলিং কাকে হারিয়ে স্বর্ণজয় করেছিলেন জানেন? মাইকেল ফেলপস! অলিম্পিকের ইতিহাসে সবেচেয়ে বেশিবার স্বর্ণজয়ী শীর্ষস্থানীয় এই মার্কিন সাঁতারু ছিল স্কুলিংয়েরই আইডল!
স্কুলিং যেভাবে অসাধ্য সাধন করলেন
মাইকেল ফেলপস একবার সিঙ্গাপুরে যান। স্কুলিং তার সাথে ছবি তোলেন, বয়স তার সবে ১২। অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ের স্বপ্ন দেখত ছেলেটি। তবে স্বপ্ন দেখে বসে থাকে নি, স্কুলিং নিজের কাজ, মানে সাঁতার প্র্যাকটিস করেছেন সবচেয়ে ভালভাবে।
একবারের ঘটনা। স্কুলিং বেড়াতে গিয়েছেন মা-বাবার সাথে। ভোর ৪টায় সে বাবার দরজায় নক করছে। বাবা হন্তদন্ত হয়ে উঠে এসে দেখে স্কুলিং দাঁড়িয়ে আছে সাঁতারের পোশাকে! বাবাকে বলল, আমি এখন প্র্যাকটিস করব, তুমি চল আমার সাথে। বাবা ছেলেকে নিয়ে সুইমিং পুলে গেলেন সাঁতার প্র্যাকটিসে।
অর্থাৎ, স্কুলিংয়ের ধ্যানজ্ঞান সবটা ছিল প্র্যাকটিসে। যে-কারণে বেড়াতে গিয়েও ভোলে নি প্র্যাকটিসের কথা। ফলাফল- শীর্ষ সাঁতারুকে হারিয়ে শিষ্যের অলিম্পিক জয়!
কাজ কখন আপনাকে ক্লান্ত করবে না?
“তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে”- কথাটা কেবল জনপ্রিয় গানের লিরিক্সই না, অনেকের জীবনের বাস্তব সত্যও এটাই। কেন যে বেঁচে আছে সেটাই ঠিকমতো জানে না তারা। ফলে জীবন হয়ে দাঁড়ায় একঘেয়ে, কাজও হয়ে দাঁড়ায় দায়সারা গোছের। বিপরীতে, যদি বেঁচে থাকার কারণ আপনার সামনে স্পষ্ট থাকে তাহলে জীবন হবে আনন্দায়ক, কাজও হবে লক্ষ্যাভিমুখী। আর তা সবচেয়ে ভালভাবে করার প্রেরণা পাবেন ভেতর থেকে।
আপনার বেঁচে থাকার কারণ হতে পারে নিজের ও অন্যের কল্যাণে যে-কোনকিছুই। যদি আপনার কাজ হয় রান্না করা, ভাবুন না যে আমি রান্না করার জন্যে বেঁচে আছি, আমি রান্না করব! দেখবেন রান্না করা আপনাকে কখনো ক্লান্ত করবে না।
এক ঘরামির গল্প
এক ঘরামি বংশ পরম্পরায় একটি ধনী পরিবারের ঘর নির্মাণ করত। বহু বছর বাদে তিনি ঠিক করলেন আর ঘর বানাবেন না। মালিককে জানিয়ে দিলেন তার সিদ্ধান্ত। মালিক তখন তাকে দিল সবর্শেষ কাজের ফরমায়েশ- সুন্দর একটা ঘর বানাতে হবে। ঘরামি নিতান্ত অনিচ্ছায় কাজটি নিল।
কাজ শেষ, ঘরামি মালিককে কাজ বুঝিয়ে দিতে চাইল। মালিক মুচকি হেঁসে ঘরের চাবি তুলে দিল ঘরামির হাতে। আজ থেকে এই ঘরের মালিক ঘরামী! এত বছরের সৎকাজের পুরষ্কার হিসেবে এই ঘরটি উপহার দেয়ার কথা তার বাবা-ই বলে গেছিল মৃত্যুর আগে।
এদিকে উপহার পেয়ে ঘরামির আফসোস আর ধরে না। জীবনের শেষ আর নিজের জন্যে সবচেয়ে অর্থপূর্ণ কাজটি যদি যেনতেনভাবে না করে সবচেয়ে ভালভাবে সে করত তাহলে তার ফল পেত সে নিজে!
এটি নিছক গল্প হলেও এর অন্তর্নিহিত শিক্ষাটি চিরন্তন- যখন যে কাজের দায়িত্ব আসুক, সবচেয়ে ভালভাবে করার মানসিকতা নিয়ে করলে হয়ত সেটা থেকেই বেরিয়ে আসবে মধুর ফল!
নিজের কাজ সবচেয়ে ভালভাবে করাই প্রকৃত দেশপ্রেম
অনেকেই এই আফসোসে পোড়েন- দেশের জন্যে তিনি কিছু করতে পারছেন না! মানে দেশকে কিছু দিতে হলে অনেক বড় বা মহৎ কিছু করতে হবে বলে তারা মনে করেন। কিন্তু সত্য হলো আমরা প্রত্যেকেই পারি নিজ নিজ কাজের মধ্যে থেকেই দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটাতে।
একজন শিক্ষার্থীর জন্যে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম হচ্ছে জ্ঞানার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করা। একজন চাকরিজীবী যদি কর্মস্থলে সময়মতো যান এবং পুরো কর্মঘণ্টা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন তো সেটিই তার দেশপ্রেম। যে ব্যবসায়ী জনগণের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ভেজাল পণ্য বিক্রি থেকে বিরত থাকছেন- তিনিও দেশপ্রেমিক। যে চিকিৎসক আন্তরিকভাবে রোগীকে সেবা দেন, তিনিও দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন।
অর্থাৎ, প্রতেকের অবস্থান থেকে নিজের কাজটি সবচেয়ে ভালভাবে করে যাওয়াই দেশপ্রেমের পরিচায়ক। আর এটি যখন আমরা সবাই করতে পারব তখন দেশ এগিয়ে যাবে সার্থকতার পানে।
কখন পারবেন নিজের কাজ সবচেয়ে ভালভাবে করতে?
মাইন্ডসেট বা লক্ষ্যস্থির হলেই সম্ভব নিজের কাজ সবথেকে ভালভাবে করা। সূরা বাকারার ১৪৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- প্রত্যেকেরই একটি লক্ষ্য আছে; যা তার কর্মধারাকে পরিচালনা করে।
অর্থাৎ, আপনি যখন লক্ষ্যস্থির করবেন তখন আপনার কর্মধারা আপনাআপনিই পরিচালিত হবে লক্ষ্যের পথে। নিজের কাজ তখন আপনি করতে পারবেন সবচেয়ে ভালভাবে। কোনো প্রতিবন্ধকতাই আপনাকে আটকাতে পারবে না।
এছাড়া, একটি আত্মপ্রত্যয়ন বা অটোসাজেশন অনুশীলন করতে পারেন- “আমি প্রাজ্ঞ, আমি দক্ষ, প্রতিটি কাজ আমি সবচেয়ে ভালভাবে করি”
দিনে শতবার এই প্রত্যয়ন অনুশীলন আপনার জীবনের সবকিছু বদলে দিতে পারে। জীবনে সূচিত করতে পারে চূড়ান্ত সাফল্যের।
এমএম//