ঢাকা, রবিবার   ১২ জানুয়ারি ২০২৫,   পৌষ ২৮ ১৪৩১

অরুণিমা সিনহা

পা হারিয়েও জয় করেছেন এভারেস্ট-সহ ৭টি শৃঙ্গ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:০৪ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ শনিবার | আপডেট: ০৭:০৪ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ শনিবার

কথায় বলে যারা চ্যাম্পিয়ন, তাঁদের অভিধানে ‘অসম্ভব’ শব্দটির কোনো অস্তিত্ব নেই। জীবনে যত ঝড়ই আসুক না কেন, ঠিক একটা না একটা রাস্তা খুঁজে বের করেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ আপনার পা-টাই বাদ পড়ে যায় দুর্ঘটনায়! কয়েক সেকেন্ড আগেও ভাবেননি এমনটা হতে পারে। জীবনটা এক লহমায় থেমে যেতে পারত। সবার সহানুভূতি আপনার দিকেই থাকত। ঠিক যেমন ছিল অরুণিমা সিনহার বেলায়। কিন্তু তাঁর নিজেরই কোথাও যেন পরাজিত মনে হচ্ছিল। আর এই মনে হওয়াটাই তাঁকে নিয়ে গেল অন্য এক শিখরে। আজ অরুণিমা সিনহা মাউন্টেনিয়ারিংয়ের জগতে এক বিস্ময়। নয়তো কাঠের পা নিয়ে কেউ এভারেস্ট জয় করতে পারে!

শুধু কী এভারেস্ট! একের পর এক শৃঙ্গ জয় করেছেন অরুণিমা। বিশ্বের প্রথম প্রতিবন্ধী মহিলা পর্বতারোহী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট, কিলিমাঞ্জারো, এলব্রুশ, ভিনসন, কসকিয়াসকো-সহ সাতটি শৃঙ্গ জয় করেছেন। কিন্তু এই দিকে আসার কোনো চিন্তা ভাবনাই ছিল না তাঁর। লখনউয়ে বড়ো হওয়া অরুণিমা ছোটো থেকেই খেলাধুলার মধ্যে বড়ো হয়েছেন। সাতবার ভারতের জাতীয় দলের হয়ে ভলিবলও খেলেছেন। ইচ্ছা ছিল প্যারামিলিটারিতে যুক্ত হওয়ার। সেই সূত্রেই পরীক্ষা দিতেই ২০১১ সালে লখনউ থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে পদ্মাবতী এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তিনি। আর এই যাত্রাই তাঁর জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়ে যায়…

রাত তখন বেশ গভীর। হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় অরুণিমার। কিছু একটা আন্দাজ করতে পারেন। কামরায় বেশ কয়েকজন আগন্তুক ঘোরাফেরা করছে। তাঁর কাছেই যেন আসছে ওরা। ব্যাপারটা আঁচ করতে বেশি দেরি করেননি অরুণিমা সিনহা। বুঝতে পারলেন, ডাকাত ঢুকেছে ট্রেনে। সঙ্গে ছিল ব্যাগ আর গলায় ছিল একটা সরু সোনার চেন। ডাকাতরা সেটা টেনে নিতেই অরুণিমা তাড়া করেন তাদের। একসময় ধরেও ফেলেন। প্রবল ধস্তাধস্তি হওয়ার সময় চূড়ান্ত আঘাতটা করেই বসে ডাকাতরা। চলন্ত ট্রেনের খোলা দরজা দিয়ে অরুণিমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ওরা। আর ঠিক সেই সময়ই পাশের ট্র্যাক দিয়ে আরও একটি ট্রেন আসছিল। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন অরুণিমা সিনহা। মিলিটারির পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। প্রাণেও বেঁচে যান তিনি; কিন্তু বাঁ পা-টি চিরকালের জন্য বাদ পড়ে। ডান পা ও শিরদাঁড়াও ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এরপর? কী হবে জীবনের? সারাজীবন কি সবার দয়া, করুণার পাত্র হয়েই থেকে যেতে হবে? তেমনটা তো চাননি অরুণিমা! ভলিবল খেলার স্বপ্নও তখন শেষ হয়ে গেছে। কাঠের পা পড়ে একটু একটু করে হাঁটাচলা শুরু হয়েছে। তখনই খবরে দেখলেন এভারেস্ট জয়ের খবর। নাম শুনলেন বাচেন্দ্রি পালের। তাঁর সঙ্গেই যোগাযোগ করলেন অরুণিমা। তখন থেকেই স্থির হয়ে গিয়েছিল লক্ষ্য। উত্তরকাশীতে শুরু হল ট্রেনিং। অন্যান্যদের মতো সবল নন তিনি; তাও জোর কদমে চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। তাঁর ফলাফল পেলেন ২০১৩ সালের ২১ মে। ৫২ দিনের লম্বা সামিটের পর প্রথম প্রতিবন্ধী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্টের শিখর ছুঁলেন অরুণিমা সিনহা। তৈরি করলেন বিরল নজির।

এখানেই থামলেন না। এরপর কিলিমাঞ্জারো, এলব্রুশ, কসকিয়াসকো— একের পর এক শৃঙ্গ জয় করতে লাগলেন। বিশ্বের প্রথম মহিলা প্রতিবন্ধী পর্বতারোহী হিসেবে সাতটি শৃঙ্গ জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি। সবাই অবাক বিস্ময় তাকিয়ে দেখল তাঁর কীর্তি। এখনও কি থেমে আছেন তিনি? না! থামতে জানেন না তিনি। এক্সপ্রেস ট্রেনের মতোই ছুটে চলেছেন তিনি। পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মানও। দেশের যুব সমাজ যাতে এভাবেই এগিয়ে যায়, এভাবেই সমস্ত বাধা সরিয়ে সামনে উঠে আসে, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। প্যারামিলিটারি হওয়া হয়তো হল না আর। ভলিবল প্লেয়ারেও শেষ হল না কেরিয়ার। কিন্তু যা করেছেন, তার জন্য চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন অরুণিমা সিনহা। 

এমএম//