ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

জাতীয় পার্টিতে আবারও ভাঙন!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৫৬ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ রবিবার | আপডেট: ০৫:১০ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ রবিবার

জাতীয় পার্টিতে আবারও দেখা দিয়েছে ভাঙন। শুরু হয়েছে পুরনো দ্বন্দ্বে নতুন বিতর্ক। রাজনৈতিক ইতিহাসে সব সময় এমন আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়ে কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে দলটি। এবার দেবর-ভাবির প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব সামনে এলো। ভাঙনের করুন সুর দলের ভেতরে বাহিরে। তবে দু'পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন বিভাজন এবারই প্রথম নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের পুরনো বিবাদ নতুন করে প্রকাশ্যে আসে।  

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

রোববার (২৮ জানুয়ারি) গুলশানে নিজ বাসভবনে নেতাকর্মীদের এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। রওশন এরশাদ তার বাসভবনের নিচে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এতে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত, অব্যাহতিপ্রাপ্ত, স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

রওশন এরশাদ বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রের ২০-এর ১ ধারা অনুযায়ী জিএম কাদের ও চুন্নুকে অব্যাহতি প্রদান করলাম।’ দলের পরবর্তী কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত তাঁর ঘোষিত মহাসচিব কাজী মামনুর রশীদ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে আজ জানান রওশন এরশাদ।

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা মেনে নিতে পারি না। দল ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নু দলকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।’

দ্বাদশ নির্বাচনের আগে পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বক্তব্য ও বিবৃতি এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে তাদের ভূমিকা পার্টিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে জানান তিনি।

এদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) গঠনতন্ত্রে কাউকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা রওশন এরশাদের নেই বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক। 

তিনি বলেন, জি এম কাদেরকে বহিষ্কার করে রওশন এরশাদ যে নিজেই নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন তাকে আমলে নিচ্ছে না জাতীয় পার্টি (জাপা)। রোববার (২৮ জানুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এরশাদের স্ত্রী রওশন অভিযোগ করেন, এরশাদের ভাই জিএম কাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সরিয়ে ‘ক্যু’ করে জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়েছেন।

রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদেরও এবার লাঙ্গলের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এরশাদের ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ যে রংপুর-৩ আসনের এমপি ছিলেন, সেখানে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে ভোট করেন জিএম কাদের নিজেই। শেষ পর্যন্ত রওশন বা সাদ আর নির্বাচনে আসেননি। 

ভোটের পর ‘দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের’ কারণ দেখিয়ে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে জাতীয় পার্টি।

ভোটের পাঁচদিনের মাথায় দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়কে দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা দুইজনই রওশন এরশাদপন্থি হিসেবে পরিচিত।

রওশন ঘনিষ্ঠ কাজী ফিরোজ রশীদ দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। আর সুনীল শুভরায় এরশাদের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি ছিলেন।

রোববার রওশনের মতবিনিময় সভায় অ্যাবহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুল ইসলাম সেন্টু সুনীল শুভরায়, অব্যাহতিপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান জাঙ্গীর আলম পাঠান, ইয়াহিয়া চৌধুরী, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন, অধ্যাপক দেলায়ার হোসেন খান, রফিুকুল হক হাফিজও ছিলেন।

রওশন এরশাদের এমন ঘোষণার বিষয়ে মুজিবুল হক বলেন, আমরা এটা নলেজে (আমলে) নিচ্ছি না। এর ভিত্তি নেই। গঠনতন্ত্রে তার (রওশন) এই ধরনের কোনো ক্ষমতা নেই।

তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রে এমন কোনো ধারা নেই যে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কাউকে বাদ দেবেন। রওশন এর আগে জি এম কাদেরকে বহিষ্কার ঘোষণা করেছেন। এটা তৃতীয়বার। পরে ঘোষণা আবার প্রত্যাহারও করেছেন।

প্রত্যেকটি দলের গঠনতন্ত্র আছে উল্লেখ করে জাপা মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছে। প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন জি এম কাদের। কাজেই নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তিনি দলের চেয়ারম্যান। মুজিবুল হক মহাসচিব।

এর আগে বহিষ্কারের ঘটনায় তৃণমূলের সমর্থন ছিল না, তবে এবার আর টিকতে পারবেন না- রওশনপন্থীদের এমন দাবির বিষয়ে মুজিবুল হক বলেন, অবান্তর কথা। এইগুলি একদম অশিক্ষিত মানুষের মতো। গঠনতন্ত্রের বাইরে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো কথা বলতে পারেন। এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।
কেআই//