যেভাবে রোবটের মাধ্যমে হার্টে রিং পড়ানো হলো
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৩৩ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৪৩ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার
কন্ট্রোল রুম থেকে মূল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ প্রদীপ কুমার কর্মকার
হারুন উর রশিদের বয়স ৫৫ বৎসর ও ৪৫ বৎসরের লিটন কর্মকারের হার্টের মূল রক্তনালিতে ৯০ শতাংশ ব্লক ধরা পড়ে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার দূরনিয়ন্ত্রিত রোবটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিনামূল্যে ধমনীতে রিং স্থাপনের প্রস্তাব দিলে সাড়া দেয় এই রোগী ও তাদের স্বজনরা।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ক্যাথল্যাব থাকেন রোগী এবং দক্ষ রোবটিক টীম। আর হাসপাতালে ৮ম তলার কনফারেন্স রুমে স্থাপিত রোবটিক কন্ট্রোল ইউনিটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে রোবটিক টীম প্রধান ডাঃ প্রদীপ কুমার কর্মকার নিখুঁতভাবে ২ রুগীর হার্টে রিং পরান সাফল্যজনকভাবে।
পুরো অপারেশন প্রক্রিয়াটি উদ্বোধন ও প্রত্যক্ষ করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডাঃ কামরুল হাসান মিলন ও প্রফেসর আজাদসহ অন্যান্য ডাক্তাররা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অত্যাধুনিক দূরনিয়ন্ত্রিত রোবটিক মাধ্যমে হার্টে রিং পরানোর মাধ্যমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এশিয়া মহাদেশে ৩য় দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলো। এর আগে ইন্ডিয়া ও চীন এই অপারেশন করে।
এবার জানা যাক, এই অসাধারণ কাজটি কিভাবে সফলতা পেলো সে সম্পর্কে:
দূর নিয়ন্ত্রিত রোবটিক এনজিওপ্লাস্টির এই প্রক্রিয়ায় রোবটের একটি হাত থাকে ক্যাথল্যাবে। আরেকটি কন্ট্রোল সেকশন যা মূল কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ প্রদীপ কুমার কর্মকার নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখানে ৩টি মনিটর, ১টি দিয়ে রিং পরানো প্রক্রিয়া রিয়েল টাইমে প্রত্যক্ষ করা হয়, দ্বিতীয়টি দিয়ে রুগীর ব্লাড প্রেসার, পালস, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ও ইসিজি দেখার মাধ্যমে রুগীর রিং পরানোকালীন সময়ের রুগীর শারীরিক অবস্থা নিবীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আর তৃতীয়টি দিয়ে ক্যাথল্যাবে অবস্থিত টিমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হয়।
হারুন উর রশিদ ও লিটন বর্তমানে ভালো আছে এবং বাড়ি যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান।
অধ্যাপক প্রদীপ কুমার বলেন, “রোবটের দুটি অংশ। একটি অংশে রোবটের একটি হাত যা ক্যাথল্যাবে থাকে। আরেকটি অংশ কন্ট্রোল সেকশন, যেখান থেকে কার্ডিওলজিস্ট রিং পরানোর কাজটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
“হৃদরোগ চিকিৎসকরা এখনো ক্যাথল্যাবে নিজেরা রোগীর কাছ থেকে রোগীদের হার্টের রিং পরান। আর রোবোটিক এনজিওপ্লাস্টি হল সর্বশেষ উদ্ভাবন; এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা দূর থেকে নিখুঁতভাবে হৃদরোগীদের হার্টের ধমনীতে রিং পরাতে পারেন।”
এই চিকিৎসক বলেন, “অনেক সময় হার্টের রিং নিখুঁতভাবে বসানোর জন্য এক মিলিমিটার সামনে অথবা এক মিলিমিটার পিছনে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। হাত দিয়ে করলে এই কাজটি কঠিন হয়, কিন্তু রোবটের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে করা যায়। এনজিওপ্লাস্টির সময় হার্টের ভেতরে ক্যাথেটার, তার, বেলুন, রিং রাখতে হয়। এটা যত কম রাখা যায় তত ভালো। রোবটের মাধ্যমে এনজিওপ্লাস্টি করতে সময় কম লাগে। এছাড়া এই পদ্ধতি চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে।”
তিনি আরও বলেন, যে সব ডাক্তাররা হার্টের রিং পরান তাদের স্বাস্থ্য গত ঝুঁকি থাকে। রেডিয়েশন থেকে রক্ষা পেতে ১৭ কেজি ওজনের একটি পোশাক পরতে হয়। ফলে এটা ঘাড়ে প্রভাব ফেলে। রবোটিক সার্জারির ফলে এটি ঝুঁকিমুক্ত ও সময়োপযোগী।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জানুয়ারি এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকার ও তার বিশেষায়িত টিম হৃদরোগে আক্রান্ত দুজন রোগীর প্রধান ধমনীতে বিনামূল্যে রোবটিক পদ্ধতিতে রিং পরান। এর মাধ্যমে এই যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতিটির ১ম পর্যায়ের কাজটি দেশে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন হয়।
তখন রোগী ছিল ক্যাথল্যাবে আর ডাঃ প্রদীপ কর্মকার ছিলেন একই তলার কন্ট্রোল রুমে।
এএইচ/ কেআই/