হাবিপ্রবিতে র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃতদের মহাসড়ক অবরোধ
হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১১:১৯ এএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বৃহস্পতিবার
র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) মেইন গেইট ও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করেছে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত পৌনে নয়টায় নতুন তথ্য উপাত্ত র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির কাছে উপস্থাপনের বিষয়ে একমত হয়ে রাস্তা ছেড়ে দেয় আন্দোলনরতরা।
এর আগে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পক্ষে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ও তাদের সহপাঠীদের একাংশ প্রধান ফটকের সম্মুখে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে প্রধান ফটক অবরোধ করে সেখানে বসে পরলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হাতে লিখা পোস্টার ও বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে বহিষ্কারের বিরোধিতা করেন।
পরবর্তীতে বিকাল ৪টা থেকে বহিষ্কারাদেশ বাতিলের এক দফা দাবি আদায়ে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে ঐ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনরায় র্যাগিংয়ের অভিযোগ ও বহিষ্কার আদেশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রিভিউ করার আশ্বাস দিলেও অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
এতে মহাসড়কের দুপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে দিনাজপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশাসন ও অর্থ (সদর সার্কেল) মোঃ মমিনুল করিম ও দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোঃ জিন্নাহ আল মামুন, দিনাজপুর সদর উপজেলার ইউএনও ফয়সাল রায়হান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন।
কিন্তু বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা একদফা দাবিতে অনড় থাকেন। পরে রাত পৌনে নয়টায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় নতুন তথ্য উপাত্ত র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির কাছে উপস্থাপনের বিষয়ে একমত হয়ে রাস্তা ছেড়ে দেয় আন্দোলনরতরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৯টি ধারা সম্বলিত 'হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা ২০২১' কার্যকর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও গঠন করা হয়েছিল এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড নামের মূল কমিটি পাশাপাশি অনুষদ, বিভাগ, হল ও মেস অনুযায়ী উপকমিটি। এই নীতিমালা অনুযায়ী র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, বিদায়ী বছর সর্বোচ্চ বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। শুধুমাত্র র্যাগিংয়ের অভিযোগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ১২ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
তন্মধ্যে গত বছরের আগস্ট মাসে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন ছাত্রাবাসে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগিং ও হয়রানির অভিযোগে মার্কেটিং বিভাগের ৬ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার এবং ৩ শিক্ষার্থীকে কঠোরভাবে সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ছাত্রাবাসে র্যাগিংয়ের অভিযোগে কৃষি অনুষদের ২০২২ ব্যাচের রাকিবুল হুদা তাজমুল ও আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও দুই শিক্ষার্থীকে সর্তক করা হয়। একই মাসে শ্রেণীকক্ষে র্যাগিং এর অভিযোগে ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের আরও ২১ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসেও একই অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগের ২০২২ শিক্ষাবর্ষের তৌহিদুল ইসলাম তুরাগ ও সজীব হোসেন নামের দুই শিক্ষার্থীকে ২ সেমিস্টার এবং রোকনুজ্জামান চৌধুরী ও অনুপম রায় নামের দুই শিক্ষার্থীকে ১ সেমিস্টার করে বহিষ্কার করে। পাশাপাশি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি ওই বিভাগের এফ. এন শাবিন, শাহীন আলম, জাহিদ হাসান, শাকির মাহমুদ ও ইয়াসির রহমান শাকিল নামের চারজন ছাত্রকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশিদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং প্রতিরোধে এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড কমিটি আছে। তারা সকল প্রমাণ-তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগে সঠিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড। এরপরেও শিক্ষার্থীদের আবেদনে আবারও এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড কমিটি তথ্য প্রমাণগুলো পুনরায় বিশ্লেষণ করবে এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এএইচ