ঢাকা, রবিবার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

ভৈরব নদে বারবার কেন ডুবছে জাহাজ?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:১০ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:২৭ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার

নাব্যতা সংকট, সরু চ্যানেল, পর্যাপ্ত নিরাপদ জেটি না থাকার কারণে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ত নদীবন্দর নোয়াপাড়া। গেল একমাসে এখানে তিনটি পণ্যবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। বন্দর উন্নয়নে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়ে আসলেও তাতে কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ।

ভৈরব নদীর তীরে নওয়াপাড়া নদীবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ জটের চিত্র এখন নিত্যদিনের। ঘাটে নোঙর করার জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত।

অপেক্ষমাণ জাহাজ ভেড়ার জন্য অপ্রতুল ঘাট, আর নাব্যতা সংকটের কারণে মংলা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজগুলির এই দীর্ঘ অপেক্ষা। ভাটার সময় নদীর পানি কমে গেলে জাহাজের তলা মাটিতে মিশে যায়। ফলে অনেক সময় জাহাজ একদিকে কাত হয়ে পড়ে, ফাটল ধরে জাহাজের তলায়, ঘটে জাহাজ ডুবির ঘটনা। একমাসে ভৈরব নদের খুলনা ও নওয়াপাড়া এলাকায় এমন তিনটি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা ৮২০ মেট্রিক টন কয়লাবোঝাই এমভি আর রাজ্জাক নামের একটি জাহাজ ভৈরব নদীর অভয়নগর এলাকায় ডুবে যায়। এরপর গত ১৩ জানুয়ারি ভৈরব ধুলগ্রাম এলাকায় ৭০০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এমভি মৌমনি-১ নামের একটি কয়লাবোঝাই কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়। আর সবশেষ গত ১৫ জানুয়ারি একই নদীর ভাটপাড়া এলাকায় ৮০০ মেট্রিক টন কয়লাবোঝাই এমভি পূর্বাঞ্চল-৭ কার্গো জাহাজটি কাত হয়ে ডুবে যায়। এর ফলে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের নদী কেন্দ্রিক অর্থনীতির সব থেকে বড় নদী বন্দর নওয়াপাড়ায় জাহাজ আনতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এমভি পূর্বাঞ্চল-৭ জাহাজটির মাস্টার বলেন, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে নওয়াপাড়া এলাকায় তীরে ভিড়াই। কিন্তু ভাটা হওয়ায় পানি কমে যাওয়ায় এর তলা ফেটে ডুবতে শুরু করে। এখন এটি থেকে কয়লা খালাস করার কাজ চলছে। এই নদীতে আমাদের নিয়মিত জাহাজ নিয়ে আসতে হয়। এমন ভোগান্তিতে প্রায়ই পড়তে হয়। একটি জাহাজ নিয়ে দিনের পর দিন আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হয় খালাসের জন্য। ড্রেজিং না করলে এর সুফল পাওয়া যাবে না।

জাহাজটির আরেকজন শ্রমিক বলেন, এই নদীতে আগের তুলনায় জাহাজের সংখ্যা বাড়লেও নোঙর করার জায়গা খুবই কম। পানি কম থাকায় এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়।

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের নদী কেন্দ্রিক অর্থনীতিকে প্রাণ কেন্দ্র নোয়াপাড়া নদী বন্দর সচল ও নিরাপদ রাখাতে নিয়মিত নদী খনন ও নিরাপদ জেটি নির্মাণের দাবি দীর্ঘ দিনের। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করনি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ বন্দর ব্যবহারকারীদের।

খুলনা নৌ-পরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ চৌধুরী মিনহাজ উজ জামান সজল বলেন, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সব থেকে বড় নদী কেন্দ্রিক অর্থনীতি কেন্দ্র নওয়াপড়া বন্দরের এ বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের। নদীর নাব্য কম, পানি কমতে কমতে নদী ছোট হয়ে আসছে। সঠিক পদ্ধতিতে ড্রেজিং করার প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা বারবার বলেছি। তবে এর সমাধান হচ্ছে না।

তবে বন্দরের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ। নওয়াপাড়া নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, নওয়াপাড়া নদী বন্দর নিয়ে আমাদের বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে নদী বন্দরটি আরও বেশি সংখ্যক জাহাজ ভেড়ার সুযোগ হবে।

খুলনা ও নওয়াপাড়া বন্দরে গড়ে প্রতিদিন পঞ্চাশটি জাহাজ নোঙর করতে পারে, আর অপেক্ষমাণ থাকে আরও শতাধিক জাহাজ। এখানে খালাস হওয়া কয়লা, সারসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহ হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলে। 

কেআই//