ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ওষুধের সংকট

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৪৬ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার

জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। তিন-চার বছর আগেও হাসপাতাল থেকে ৮৪ প্রকারের ওষুধ রোগীদের দেয়া হতো। এখন সেখানে দেয়া হচ্ছে মাত্র ১৪ ধরনের ওষুধ। হাসপাতাল ফার্মেসিতে প্যারাসিটামলের মতো সহজলভ্য ওষুধও মিলছে না। 

বিনামূল্যে ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। তাদের দাবি, অতিরিক্ত দামে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে ওষুধ। অনেকের সামর্থ্য না থাকায় ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকছে। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সঠিক সময়ে দরপত্র না হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।

হাসপাতালের দেয়া তথ্যানুযায়ী, শিশুদের জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ, হিস্টাসিনের সরবরাহ নেই। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এন্টিবায়োটিক, ইনজেকশন সেফট্রিঅ্যাক্সন, কার্জন ৫০ গ্রাম, সেফিক্সিম, ভিটামিন ডি কমপ্লেক্স, ইনজেকশন ওমি প্রাজল ৪০ গ্রাম, ডেক্সামেথাসনের সরবরাহ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেফ্রাডিন হাইড্রোকরটিসন, ওমি প্রাজল, ম্যাট্রোনিডাজল, ক্যাসিন, ক্যাপসুল সেফ্রাডিন, ক্লিনডামাইসিন, এমোক্সিসিলিন, ক্লিনডামাইসিন, ওমে প্রাজল ৪০ এমজি ও এনোক্সাপ্যারিন ইনজেকশন (নাভির ইনজেকশন), ট্যাবলেট অ্যালবেনডাজল, কারভিস্টা, সেফুরএক্সিম, সিটিরিজিন, ইটোরাক, ইসোরাল, হিস্টাসিন, লপিরিল, লপিরিল প্লাস, লোসারটন, নেপরোস্কিন, অফলোক্সাসিন, প্যান্টোনিক্স, কারভিস্টা, সিরাপ অ্যামব্রোক্স, কিলব্যাকসহ প্রয়োজনীয় কয়েকটি ওষুধ পাচ্ছেন না বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। 
পাশাপাশি হাসপাতালের সার্জারি, মেডিসিন, হৃদরোগ, গাইনি, অর্থোপেডিক্স, শিশু, পেইং, লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের হাসপাতাল থেকে কয়েক ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। তবে অধিকাংশ ওষুধই তাদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘যশোর ছাড়াও পাশের জেলা নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহের মানুষ সেবা নিতে আসে এ হাসপাতালে। তাই রোগীর চাপ বেশি। হাসপাতালের ৮০ শতাংশ ওষুধ ইডিসিএল থেকে কিনতে হয়। বাকি ২০ শতাংশ ওষুধ দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় করতে হয়। ফলে এ বছর সঠিক সময়ে দরপত্র না হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। ইডিসিএলে এক মাস আগে ওষুধের চাহিদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেও উৎপাদন কম থাকায় চাহিদামতো ওষুধ এখনো সরবরাহ করতে পারেনি তারা। 

নতুন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্য কিছু ওষুধ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৩৬ দিন ধরে হাসপাতালে নেই জলাতঙ্ক রোগের অ্যান্টি র‌্যাবিক্স ভ্যাকসিন (টিকা)। ফলে বাইরের ফার্মেসি থেকে চড়া দামে ভ্যাকসিন কিনে শরীরে প্রয়োগ করতে হচ্ছে রোগীদের। বছরজুড়ে ১৯ হাজার ১২৩ জনকে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। ঢাকার মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) থেকে আনতে হয় ভ্যাকসিনটি। তবে গত ২৬ ডিসেম্বর  ভ্যাকসিন না পেয়ে এ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অন্তত সাড়ে তিন হাজার রোগী।

বাঘারপাড়া থেকে আসা নাছিম আরাফাত নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেয় না। তাই জেনারেল হাসপাতালে এসেছি। তবে এসে দেখি ভ্যাকসিন নেই। বাইরে থেকে চড়া দামে ভ্যাকসিন কিনে এনেছি।’

হাসপাতালের ইপিআই কেন্দ্রের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নুরুল হক বলেন, ‘হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে জলাতঙ্কের টিকা নেই। ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই। তবে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সামনের সপ্তাহ থেকে রোগীরা আবার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পাবেন বলে আশা করছি।’

এএইচ