ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ভালো থাকার জন্য সবাইকে আগে সালাম দিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪২ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার

আসসালামু আলাইকুম। এটি একটি প্রার্থনা, একটি দোয়া। যখন কারো শান্তির জন্যে প্রার্থনা করা হয়, এর শুভ অনুরণন চারদিকে ছড়িয়ে যায়। শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রথম শর্ত হচ্ছে অন্তর থেকে অন্যের জন্যে শান্তি কামনা করা। এজন্যে সালামের প্রচলন করতে হবে। শুরু করতে হবে ঘর থেকে, পরিবার থেকে। কারণ ঘরে শান্তি এলে সমাজে শান্তি আসবে, সমাজে শান্তি এলে দেশে শান্তি আসবে। ঘরে নিরাপত্তা থাকলে সমাজও হবে নিরাপদ।

কেউ প্রশ্ন করতে পারেন—সালাম দিলে শান্তি ও নিরাপত্তা কীভাবে বাড়বে? যে-কোনো রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা দেন বাইরে থেকে। এটি হলো পরিস্থিতি ও পরিবেশের নিরাপত্তা। কিন্তু সমাজে সবাই সবাইকে সালাম দিচ্ছে, হাসিমুখে কথা বলছে—এই বাস্তবতা আমাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার অনুভ‚তি দেয় ভেতর থেকে।

আসলে ধর্ম কী? নবীজী (স) এককথায় জবাব দিয়েছেন—সদাচরণ। অর্থাৎ ধর্মের প্রকাশ হচ্ছে সদাচরণ বা শুদ্ধাচার। যিনি ধার্মিক তার কথা আচরণ চাহনি সবই আরেকজনকে নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। তার উপস্থিতি মানুষকে স্বস্তি দেয়। সালাম হচ্ছে সদাচরণ ও শুদ্ধাচারের প্রথম বহিঃপ্রকাশ।

মানুষ সাধারণত মানুষের কাছে খুব বেশি কিছু চায় না। সম্মান চায়, সদাচরণ চায়। প্রত্যেকে নিজেকে সম্মানিত দেখতে চায়, তার বয়স যা-ই হোক। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, সহকর্মী, অধস্তন—সবাই যখন আপনার আচরণে সম্মানিত বোধ করবে, তখন পারস্পরিক সম্পর্ক ও কাজকর্ম সবই হয়ে যাবে সহজ এবং আনন্দময়। কারো সাথে মনোমালিন্য বা কথা কাটাকাটি হলে প্রথম সুযোগেই সালাম দেবেন। তাহলে বিভেদ দূর হতেও সময় লাগবে না।

বয়সে ছোটরা বড়দের আগে সালাম দেবে, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের বা শিশুদের আগে সালাম দেবেন। তাহলে সে-ও শুদ্ধাচারী হয়ে গড়ে উঠবে।

পরম করুণাময়ের কাছে শুকরিয়া আদায় করি  যে, আমাদের দেশে সর্বস্তরে সালামের প্রচলনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে কোয়ান্টাম। প্রায় দুই দশক আগে সাংগঠনিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাইকে আগে সালাম দেবো। আমাদের সঙ্ঘবদ্ধ চর্চা জনমানসে এই বোধ সঞ্চার করেছে—সালাম চর্চা ব্যাকডেটেড তো নয়ই বরং শুদ্ধভাবে সালাম দেয়া স্মার্টনেস।

পাশ্চাত্যেও এখন কুশল বিনিময়ের ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে। নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্ব দূর করতে সম্প্রতি ইউরোপে ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে—পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে Just say Hello!

এই সালাম ও কুশল বিনিময়ের গুরুত্ব পাশ্চাত্য অনুভব করল এতদিন পর। অথচ নবীজী (স) সবাইকে আগে সালাম দেয়ার কথা বলেছেন ১৪শ বছর আগেই!

সব ধর্মের নির্যাস এই সালাম বা শান্তি। সনাতন হিন্দুধর্মে একটি মন্ত্র ‘ওম শান্তি’। এর মর্মার্থ   হলো—হে ঈশ্বর! আত্মজ্ঞান লাভের সকল বাধাবিঘ্ন দূর করো, শান্তি আসুক।

মহামতি বুদ্ধের বাণী—‘সব্বে সত্তা সুখীতা ভবন্তু’। এর অর্থ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

অতএব অন্যের শান্তি কামনা বা সালাম জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যে। তাই সবাইকে আগে সালাম দিন। হাসিমুখে সালাম দিন।

এমএম//