ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

কোম্পানির ওষুধ না লেখায় হামলার শিকার চিকিৎসক, কেন এই স্বেচ্ছাচারিতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৪ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার | আপডেট: ১১:২৫ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার

ব্যবস্থাপত্রে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ না লেখায় একজন মেডিক্যাল প্রতিনিধির দ্বারা হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক নারী চিকিৎসক। একজন চিকিৎসক রোগের ধরন দেখে যে ওষুধ প্রয়োজন তা ব্যবস্থাপত্র লেখেন। এই স্বাধীনতা তার আছে কিন্তু এখানে ওষুধ কোম্পানির স্বেচ্ছাচারিতা কেন। তাকে কেন জোড় করা হবে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ লিখতে।

রোগীর ব্যবস্থাপত্রে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ না লেখায় হামলার শিকার হয়েছেন এক নারী চিকিৎসক। শুধু তাই নয়, ওই চিকিৎসকের মা ও স্বামীর উপরও হামলা হয়েছে।

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন নুসরাত তারিন তন্বীর সঙ্গে কিছুদিন আগে ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ কোম্পানির শহিদুল ইসলাম মৃধার পছন্দের ওষুধ লেখা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত। গত ৩১ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে মেডিকেল প্রতিনিধি শহিদুল ইসলামসহ ১০–১৫ জনের একটি দল তার ওপর হামলা চালায়।

এসময় নুসরাতের চিৎকারে বাড়ি থেকে তার মা মাসুমা খাতুন ও স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জন মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়।

পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাদের ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে চিকিৎসক নুসরাত তারিনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।

সেই চিকিৎসককে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দেখতে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'চিকিৎসকদের ওপর যত্রতত্র হামলা হলে সেটি আর মেনে নেওয়া হবে না। হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।'

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী চিকিৎসাক নুসরাত তানিম জানান, বুধবার (৩১ জানুয়ারি) হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে মেডিকেল প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম এবং স্থানীয় নেতা জুলহাস মাতবর ও লিখন মাতবরসহ ১০–১৫ জনের একটি দল তার ওপর হামলা চালায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হন স্বামী এবং তার মা।

এ ঘটনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী অভিযুক্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শরীয়তপুর প্রশাসন ও জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর মেডিকেল প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম ও স্থানীয় নেতা জুলহাস মাতবরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে, মেডিকেল প্রতিনিধি শহিদুল ইসলামকে আজ সাময়িক বরখাস্ত করেছে ল্যাবএইড ফার্মা কর্তৃপক্ষ। তার সাময়িক বরখাস্ত সংক্রান্ত নোটিশে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিটি জানিয়েছে, শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডামুড্ডা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নুসরাত, তার স্বামী ডা. মঞ্জুর ইসলাম রাফি ও তার মাকে আক্রমণের অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সর্বমহলে। তাদের প্রশ্ন, একজন চিকিৎসকের উপর এ রকম দৃষ্টতা কিভাবে দেখাতে পারে একজন মেডিকেল প্রতিনিধি। এর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার বলছেন অনেকেই।

এদিকে কেউ কেউ বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ওষুধ কোম্পানির নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এজন্য এ ঘটনায় চিকিৎসকরা উচ্চকণ্ঠে মুখ খুলতে পারছেননা।

এএইচ