ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ অক্টোবর ২০২৪,   কার্তিক ৯ ১৪৩১

সালামের প্রচার-প্রসার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:২১ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার

জীবন চলার ক্ষেত্রে অভিবাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। ব্যক্তিজীবন ও সামাজিক জীবনে এর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। অভিবাদন কীভাবে জানাতে হবে, ইসলাম তা শিক্ষা দিয়েছে। সব ধর্মালম্বীর অভিবাদনের আলাদা আলাদা শব্দ ও আচার রয়েছে। ইসলাম অভিবাদনের জন্য সালাম শিক্ষা দিয়েছে। সালাম অর্থ শান্তি। সালাম শান্তির প্রতীক, যা মানুষকে শান্তির বার্তা দেয়। শত্রুকে বন্ধু বানায়। দূরের মানুষকে আপন করে। দূরত্ব কমিয়ে ঘনিষ্ঠ করে। কোরআন ও হাদিসে সালামের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমরা পরস্পরকে না ভালোবাসা পর্যন্ত মু'মিন হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দিবো না যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে? (তা হলো) তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।”

আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, ইসলামের কোন কাজটি শ্রেষ্ঠ?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি খাবার খাওয়াবে এবং তোমার পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দিবে।”

 এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনগণ, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারও ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং ঘরের লোকদের সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।’ 

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা যখন কোনো ঘরে প্রবেশ করবে, তখন নিজেদের ওপর সালাম করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন তোমাদের সালাম দেয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তা-ই বলবে।’

মানবসৃষ্টির সূচনা থেকেই সালামের প্রচলন হয়েছে। আল্লাহতায়ালা যখন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন, তখন থেকেই সালামের প্রচলন শুরু হয়। 

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা আদম (আ.)-কে যখন সৃষ্টি করলেন, তখন বললেন- ‘যাও, অবস্থানরত ফেরেশতাদের দলকে সালাম কর। তারা তোমার সালামের উত্তরে কী বলে, তা শ্রবণ কর। তা-ই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের পদ্ধতি।’ 

তখন আদম (আ.) বললেন, ‘আস সালামু আলাইকুম।’ জবাবে ফেরেশতারা বললেন, ‘আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ রাসুল (সা.) বলেন, তারা ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ অংশটি বাড়িয়ে বলেছেন। 

আবু যর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি মহানবী (সা.)-এর দরবারে হাজির হলে তিনি আমাকে ‘আস সালামু আলাইকুম’ বলে অভিবাদন জানালেন। তখন উত্তরে বললাম, ‘ওয়া আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ অতঃপর আবু যর গিফারি (রা.) বলেন, ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যাকে সালাম দেয়া হয়, আমিই সেই ব্যক্তি।

সালাম সবাই একে অপরকে দেবে। ছোটরা বড়কে সালাম দেবে। আবার বড়রাও শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ছোটদের সালাম দেবে। ছাত্র ও মুরিদ উস্তাদ ও পীরকে সালাম দেবে। আগন্তুক ব্যক্তি মজলিসের সবাইকে সালাম দেবে। সন্তানরা তাদের পিতামাতাকে সালাম দেবে। 

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, মুহাম্মদ (সা.) একবার একদল শিশু-কিশোরের কাছ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাদের সালাম দিলেন। (মুসলিম)। তাই আনাস (রা.)-ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হলে সালাম দিতেন। বড়রা উদার মনে হাসতে হাসতে শিশুদের সালাম দিলে শিশুরাও অন্যকে দ্রুত সালাম দিতে অভ্যস্ত হবে। শিশুদের মাঝে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি জাগ্রত হবে। শিশুদের পক্ষ থেকে বড়দের শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের মন-মানসিকতা সৃষ্টি হবে।

সালাম একটি আরবি শব্দ। তাই এর উচ্চারণ শুদ্ধভাবে হওয়া আবশ্যক। অনেকেই সালাম দেন বটে; কিন্তু সঠিক ও শুদ্ধভাবে উচ্চারণ না হওয়ায় এর কোনো অর্থই হয় না। কোনো ধরনের সওয়াবও পাওয়া যায় না। অনেকে খুব দ্রুত বলেন, ‘স্লমালাইকুম’। এর কোনো অর্থ হয় না, তাই এরূপ বলা উচিত নয়। আবার অনেকে ফোনে কথা বলার সময় প্রথমে হ্যালো বলি, পরে সালাম দিই। এটাও অনুচিত। কারণ, সুন্নত হলো- প্রথমে সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু করা। 

আমাদের উচিত, পরিবারে ও পরিবারের বাইরে বেশি বেশি সালামের প্রচলন করা; নিজেরা পরস্পর সালাম আদান-প্রদান করা এবং অন্যদের সালাম দিতে উৎসাহিত করা। পরিবারে মা-বাবা ও মুরুব্বিদের উচিত, ছোটবেলা থেকেই শিশুদের শুদ্ধরূপে ও সঠিক নিয়মে সালামের শিক্ষা দেয়া। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, জনসমাবেশে, অফিস-আদালতে সালামের আদান-প্রদান ও ব্যাপক প্রসার হওয়া কাম্য।

এমএম//