নওয়াজ-জারদারি বৈঠক, সরকার গঠনে পিছিয়ে পড়ছে কারাবন্দি ইমরান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৫৭ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শনিবার
জল ঘোলা হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতিতে।ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা পার হওয়ার পর এখনও কোন দল বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে তা পরিস্কার হয়নি। ফলে গণমাধ্যমে জটিল হিসাব নিকাষের শোরগোল আর জোট গঠন নিয়ে জোর আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও পাকিস্তানের গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ২৬৬টি আসনের মধ্যে ২৫০টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বঅচন কমিশন। এর মধ্যেসবচেয়ে বেশি ৯৯ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই পিটিআই, অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তারকা ক্রিকেটার ইমরান খান সমর্থিত। ৭১ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল। বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপি রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। তার দল পেয়েছে ৫৩ আসন। এছাড়া এমকিউএম ১৭ আসনে এবং অন্যান্য দল ১০টি আসনে জয়ী হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের প্রধান গহর আলী খান জানিয়েছেন , পিএমএল-এন ও পিপিপির সঙ্গে আমরা (পিটিআই) যোগাযোগ রাখছি না। তবে বসে নেই নওয়াজ শরীফ। দল হিসেবে এককভাবে তিনিই এখনও পর্যন্ত সংগরিষ্ঠ দলের নেতা। তার দল মুসলিম লীগ একক রাজনৈতিক দল হিসেবে সর্বোচ্চ ৭১ আসানে জয়লাভ করেছে। সেই মোতাবেক শুক্রবার (ফেব্রুয়ারি) রাতে, তিনি তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতেই বৈঠক করেছেন তিনি। বৈঠকে আর কারা উপস্থিত ছিলেন বা কী আলোচনা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
তবে পিপিপির সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন বলেছে, পিপিপির কো-চেয়ারর্যান আসিফ আলী জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন নওয়াজ শরিফ। এর আগে ২০২২ সালে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পিপিপি ও পিএমএল-এন একসঙ্গে জোট করেছিল। সেই মোতাবেক কি এবারও তারা জোটবদ্ধ সরকার গঠন করছে? এমন প্রশ্ন দেশটির জনমনে বলে জানিয়েছে দ্য ডন।
দ্য ডন আরও জানিয়েছে, ৪৫ মিনিটের ওই বৈঠকে তারা কেন্দ্রে ও পাঞ্জাবে জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়েছেন। তবে, জোট গঠনে শর্ত জুড়ে দিয়েছে পিপিপি। পিপিপির শীর্ষ মুখপাত্র খুরশিদ শাহ বলেছেন, নওয়াজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী হতে চান। এজন্যই জোট গঠনের তৎপরতা চালাচ্ছেন। জোট সরকারের অংশ হতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমরা তাকে (নওয়াজ) প্রধানমন্ত্রীর পদে দেখতে চাই না। আমরা চাই, পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন আমাদের দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
কিন্তু হিসাবের খাতায় এই জোট সরকার গঠন পারবে কিনা তা নিয়ে এখনও সন্দেহ রয়েছে। দেখা যায়, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ২৫০ আসনের মধ্যে নওয়াজের মুসলিম লীগ পেয়েছে ৭১ আসন, আর পিপিপি পেয়ে ৫৩ আসন। সে হিসেবে, তাদের মোট আসন ১২৪। ফল ঘোষণা করা বাকী আসন ১৬। আর নওয়াজ ও বিলাওয়ালের জোটের সরকার গঠনের জন্য দরকার ১৩৪। তাহলে ১৬ আসনের মধ্যে তাদের দরকার মাদ্র ১০টি আসন।
নির্বাচন কমিশনের বরাতে পাকিস্তানি গণমাধ্যমের খবর, এই ১৬ আসনের বেশিরভাগে এগিয়ে রয়েছেন ইমরান সমর্থিত প্রার্থীরা। এমন অবস্থায় আরো কিছু ছোট দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপর নির্ভর করতে হবে মুসলিম লীগ ও পিপলস পার্টিকে।
পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। তবে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী তারা জাতীয় পরিষদে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৩৪টি আসন পাচ্ছেন না। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে।
বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত, স্বতন্ত্র এই প্রার্থীরা যদি কোনোভাবে সরকারে থাকেন, তাহলে ইমরানের কারাদণ্ডের সাজা বা তার সরকারি দায়িত্বে থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে পারবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইমরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তাকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন।
এদিকে পিটিআইয়ের প্রধান গহর আলী খানের বক্তব্যে অনেকটাই পরিস্কার পিটিআই সরকার গঠনের দৌড় থেকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে। কারণ তাদের সরকার গঠনের জন্য মুসলিম লীগ অথবা পিপলস পার্টির কারো একদলের সমর্থনের প্রয়োজন। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, এমন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাহলে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও কি বিরোধী দলে বসছেন ইমরান খান?
অন্যদিকে সন্ধ্যায় পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্রদের চেয়ে পিছিয়ে থেকেও বিজয় ভাষণ দেন নওয়াজ। লাহোরে পিএমএল-এনের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে দেয়া বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পিএমএল-এন সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পিএমএল-এন পাকিস্তানকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে দাবি করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতেও তার দল দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবে।
তবে ভাষণে পিএমএল-এন নেতা স্বীকার করেন সরকার গঠনের জন্য তার দল প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। জোট সরকার গঠনের জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে খুব শিগগিরই আলোচনা শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।
এমএম//