গুণিজনের সম্মাননা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে : রাষ্ট্রপতি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:০৩ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সোমবার
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, গুণিজনদের সম্মাননা প্রদান দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও সংস্কৃতির বিকাশে তাদের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গুণীদের প্রণোদনা দিতে সরকার একুশে পদকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদক প্রদান করে থাকে।
আগামীকাল ২০ ফেব্রুয়ারি ‘একুশে পদক ২০২৪’ উপলক্ষে আজ সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতি তার দেওয়া বাণীতে এসব কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় দেশের যে সকল বিশিষ্ট গুণিজন ‘একুশে পদক ২০২৪’ পেয়েছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। তবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির যথাযথ চর্চা এবং সংরক্ষণে আমাদের আরো যত্মবান হতে হবে। গুণিজন তৈরি করতে গুণের কদর করতে হয়। একুশে পদকে ভূষিত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মানিত করার মধ্য দিয়ে দেশে মেধা ও মননচর্চার ক্ষেত্র আরো সম্প্রসারিত হবে।
মাতৃভাষা প্রত্যেক জাতির অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকা এক অনন্য সুন্দর অনুভূতি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘‘বাংলা ভাষা প্রত্যেক বাঙালির অহংকার। মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার দাবিতে গঠিত ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ এর নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন।’’
তিনি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায়ে জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহিদ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহিদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা সংগ্রামীকে, যাদের দূরদৃষ্টি, অসীম ত্যাগ, সাহসিকতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি পায়।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ শাসিত ভারত ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুই দেশের জন্ম হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ব্যবধানে অবস্থিত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হলে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে। মূলত ভাষা আন্দোলন ছিল আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্তা, স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন। আমাদের স্বাধিকার, মুক্তিসংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অমর একুশের অবিনাশী চেতনাই যুগিয়েছে অফুরন্ত প্রেরণা ও অসীম সাহস। ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং সে ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে আসে বাঙালির চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৯৯ সালে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির প্রাথমিক উদ্যোগ এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ ও ঐকান্তিক চেষ্টায় জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘এটি জাতি হিসেবে আমাদের একটি অন্যতম গৌরবময় অর্জন। মাতৃভাষা এবং নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে আমাদের মাতৃভাষা দিবস আজ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মায়ের ভাষাকে সম্মান জানানোর উৎসবে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া ২০১০ সালে ইউনেস্কোর একদল ভাষাবিজ্ঞানীর দীর্ঘ গবেষণার পর পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা।’ সূত্র : বাসস
কেআই//