ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ পেলে পদত্যাগ করব: সাইফুজ্জামান চৌধুরী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫৬ এএম, ৩ মার্চ ২০২৪ রবিবার

মন্ত্রী হিসেবে কোনো দুর্নীতি করেননি বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। একই সঙ্গে দুর্নীতির কথা কেউ প্রমাণ করতে পারলে সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেবেন বলেও ঘোষণা দেন বর্তমান ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এ সভাপতি।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সাইফুজ্জামান। বিদেশে সম্পদ ও ব্যবসা থাকার বিষয়টি সামনে আসার পর তার এই সংবাদ সম্মেলন।

সাইফুজ্জামান বলেন, ‘আমি দলকেও বিব্রত করতে চাই না, সরকারকেও বিব্রত করতে চাই না। আমি খুশি হব, আমি মন্ত্রী থাকার সময় কোনো দুর্নীতি করেছি কিনা এ বিষয়ে যদি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি করা হয়। আমি মন্ত্রী থাকার সময় কী করেছি, এটা পরিষ্কার করা হোক। এটা আমার জন্য খুব কমফোর্টের ব্যাপার হবে। এই কমিটি যদি আমার বিরুদ্ধে এক টাকার দুর্নীতি পায়, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, আমি আমার পদ থেকে পদত্যাগ করবো। আমি খুবই পরিষ্কার মানুষ, খুবই সততার সঙ্গে কাজ করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার ৩০ বছরের উপরে, প্রায় ৩৫ বছর হবে। আর আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ১১-১২ বছর। আমার বাবার বিদেশের ব্যবসা ৫০ বছরের ওপরে। সুতরাং, আমার বাবা আমাকে এভাবে ট্রেইনড করে দিয়ে গেছেন যে দেশেও ব্যবসা করতে হবে, বিদেশেও ব্যবসা করতে হবে। শুধু লন্ডন-আমেরিকা নয়, যে দেশে সুযোগ আসে, সেই দেশে আমরা ব্যবসা করি। এখানে লুকোচুরি করার কিছু নেই।’

আনোয়ারা ও কর্ণফুলী আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি আপনাদের (সংবাদকর্মী) অনুরোধ করব, আমার ব্যবসা এবং রাজনীতি দুটোকে মেলাবেন না। আমি ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ কাম ব্যবসায়ী নই। পারিবারিক সূত্রেও আমি ব্যবসায়ী। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর সন্তান এবং দীর্ঘদিন ধরে আমি ব্যবসা করে আসছি। আমি আমার ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার শুরু করেছি আমেরিকায় লেখাপড়া করার শেষ পর্যায়ে এসে। আমেরিকায় পড়াশোনা করেছি আশির দশকে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের লন্ডন-আমেরিকায় বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। আমাদের ট্রেডিং ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, সুপার মার্কেট, রিয়েল এস্টেট এমন অনেক ব্যবসা ছিল। সেখান থেকে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে।’

নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় যে সম্পদের হিসাব দেয়া হয়েছে, তাতে বিদেশে ব্যবসার তথ্য কেন নেই? জবাবে সাইফুজ্জামান বলেন, ‘আমি সর্বশেষ চতুর্থবার নির্বাচন করেছি। বিগত দিনে আমি যেভাবে আমার হলফনামাগুলো দিয়েছিলাম, এবারো সেভাবে দিয়েছি। ওই হলফনামায় কোথাও বিদেশের সম্পত্তি উল্লেখ করার কথা বলা নেই। যেহেতু বিদেশের সম্পত্তি উল্লেখ করার জন্য কোনো কলাম নেই এবং বিগত নির্বাচনেও আমি এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিইনি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমি আমার বিদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সেভাবে পুরোটা মিক্স করিনি। কারণ বাংলাদেশে আমার আলাদা ট্যাক্স রিটার্ন আছে, ইউকেতে আলাদা ট্যাক্স রিটার্ন আছে। ওই ট্যাক্স রিটার্নগুলো আমি মিক্স করিনি।’

তিনি আরও বলেন, গত কিছুদিন ধরে আমাকে নিয়ে বেশ কিছু নিউজ হয়েছে দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে। অনেকের প্রশ্ন, যখন এই নিউজগুলো এলো, তখন আমি কেন নীরব ছিলাম? আসলে আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম। দেশের বাইরে থাকার সময় আমাকে নিয়ে নিউজগুলো এসেছে। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, দেশে এসে আমি একটি সংবাদ সম্মেলন করবো। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম, দায়িত্বে ছিলাম। মন্ত্রী হিসেবে জনগণের কাছে আমার দায়বদ্ধতা আছে, জবাবদিহিতা আছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, টিআইবির বিষয়টি নিয়ে আমি সারপ্রাইজড। এমন একটি সময় তারা নিউজটি জানালো, ঠিক নির্বাচনের সাত দিন আগে। এটা কি সরকারকে বিব্রত করার জন্য আমাকে দিয়ে। কেন? অনেকে বলছে, আমি মন্ত্রী থাকার সময় আমার ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে। হ্যাঁ, আমি এটা স্বীকার করছি। কেন আমি করেছি, কারণ করোনার সময় বিশ্ব যখন লকডাউন হয়ে গেলো, তখন আমি দেখেছি, আমার জন্য সুযোগ এসেছে। দ্রুত রিয়েল এস্টেটের দাম পড়ে গেছে। ব্যাংক ঋণে সুদ কমে গেছে। আমি রিস্ক নিয়ে সেই সুযোগ নিয়েছি এবং ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি।

এএইচ