ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন

পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ০৫:৩৭ পিএম, ৩ মার্চ ২০২৪ রবিবার

বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের পরিচিত নাম অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী। তিনি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল' অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ আইনজীবী সমিতির সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সহধর্মিণী যুথী পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। আইনজীবীদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাওয়া অ্যাডভোকেট যুথী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক ট্রেজারার। 

একুশে: আপনি আইনজীবীদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।

নাহিদ সুলতানা যুথী: একজন আইনজীবীকে আইন পেশা নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বারের তথা সকল আইনজীবীদের সমস্যা যখন থাকবে না, তখন তারা তাদের অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ বারের সমস্যা অনেক। ইতোপূর্বে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তারা আইনজীবীদের সমস্যা সমাধান না করে নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করেছেন বেশি। দলীয় তোষামোদের কারণে একাধিক বা বহুবার নির্বাচিত হচ্ছেন। সেই তিনি আবার পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করছেন। বাস্তবতা এই, তারা মূলত বারকে তথা সাধারণ আইনজীবীদের ব্যবহার করছেন ব্যক্তিস্বার্থে, কিন্তু সাধারণ আইনজীবীদের সমস্যা-সংকট কোনো কিছুই সমাধান করছেন না। ফলে আইনজীবীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি দীর্ঘ সময় ধরে আইনজীবীদের সমস্যা ও সংকট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। আইনজীবীরা তাদের কাজ যেন সহজে ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারে এবং তারা তাদের অধিকার থেকে যেন বঞ্চিত না হয়, এজন্য আমার সংগ্রাম। সাধারণ আইনজীবীদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই আমার একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি।

একুশে: এক্ষেত্রে আপনি কতটুকু সফল হয়েছেন?

নাহিদ সুলতানা যুথী: আসলে সমস্যার সমাধান করার জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। আমি বিপুল ভোটে ট্রেজারার নির্বাচিত হয়েছিলাম। দায়িত্বপূর্ণ জায়গায় থেকে যতটুকু সম্ভব সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন নির্বাহী দায়িত্ব। সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়া বৃহৎ সমস্যা সমাধানে তেমন কোনো ভূমিকা রাখা যায় না। আইনজীবীরা সমাজের দর্পণ। সমাজের অধিকারবঞ্চিত মানুষ ও সাধারণ আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করার জন্য এই মহৎ পেশায় এসেছিলাম। আমি এক বছর ছোট একটি দায়িত্বে ছিলাম। এখান থেকে সফল হওয়া যায় না। সফল হওয়ার জন্যই মূলত সম্পাদক পদে নির্বাচন করছি। আমি আইনজীবীদের ভীষণ ভালোবাসি। তারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সকল সমস্যার সমাধান করবো। আশা করি আইনজীবীরা তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবেন।

একুশে: আপনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল) সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রথম সারির নেতা। বিগত বছরগুলোতেও আপনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। এবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এ প্রসঙ্গে যদি কিছু বলতেন।

নাহিদ সুলতানা যুথী: আমি পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। ছাত্রজীবনে সরাসরি ছাত্রলীগ করেছি। পেশাজীবনে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ করছি। দুঃসময়ে এই সংগঠনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। ওয়ান ইলেভেনের সেই কঠিন সময়ে আমরা হাতে গোনা কয়েকজন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে মিছিল-মিটিং করেছি। অথচ ঘোষিত প্যানেলে নির্বাহী পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে হাইব্রিড ও ছাত্রজীবনে শিবির প্রোডাক্ট। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাধারণ আইনজীবীদের মতামত উপেক্ষা করে কোনো অদৃশ্য ইশারায় চলছে এই সংগঠনটি। এই সংগঠনের প্যানেল ঘোষণার আগেই গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তিগণ একজনের নাম ব্যবহার করে নিজেরা তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। আদর্শিক এই সংগঠনের ভাব‌মূর্তি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ এই সংগঠনের সিনিয়র নেতা আমি। সকল ক্রাইটেরিয়া মেইনটেইন করে আমি দলীয় মনোনয়ন তুলেছিলাম। কিন্তু আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। কোন প্রসিডিউর মেইনটেইন করে এই মনোনয়ন দেওয়া হলো, আমার জানা নেই। আগে আমরা দেখতাম, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতারা এক জায়গায় বসে সিদ্ধান্ত নিতেন, কারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। এখন দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা হয় না। জনপ্রিয়তার চেয়ে স্বজনপ্রীতিকে এখন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তারা নির্বাচিত হয়ে সাধারণ আইনজীবীদের জন্য কিছু করছে না। আইনজীবীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলস্বরূপ দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

একুশে: স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?

নাহিদ সুলতানা যুথী: আমি পেশাজীবনের শুরু থেকে সাধারণ আইনজীবীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আইনজীবীদের সমস্যা ও সংকট কী, তা আমি জানি। কারণ প্রতিটি আইনজীবীর মনের কথা আমি জানি। তাদের আমি ভীষণ ভালোবাসি। সাধারণ আইনজীবীদের স‌ঙ্গে রয়েছে আমার গভীর সম্পর্ক। তারা জানে ও বিশ্বাস করে আমার দ্বারাই সকল সমস্যা সমাধান হবে। এ কারণে তারা আমাকে ভোট দেবেন। আমি সাধারণ আইনজীবীদের কণ্ঠ। তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই। সর্বোপরি আমি দেশের সর্বোচ্চ বারে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছি। আমার বিশ্বাস, সাধারণ আইনজীবীরা আমার এই পরিবর্তনের ডাকে সাড়া দিয়ে বিপুল ভোটে আমাকে বিজয়ী করবে।

একুশে: সাধারণ আইনজীবীদের ভোটাধিকারের ব্যাপারে কী বলবেন?

নাহিদ সুলতানা যুথী: দেখুন সাধারণ আইনজীবীরা এখনো শঙ্কামুক্ত নন, তারা তাদের ভোটটি দিতে পারবেন কিনা। আমি মূলত আইনজীবীদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। আমরা আইনজীবীরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ে যাচ্ছি। সেখানে নিজেদের মধ্যে যদি আইনের শাসন না থাকে- এর থেকে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না! সাধারণ আইনজীবীরা সবসময় চায় তার ভোটটি যেন সে দিতে পারে। আমাদের একটা গর্ব ছিল- সুপ্রীম কোর্ট বারের নির্বাচন সবসময় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়। কিন্তু গত ২/৩ বছর সাধারণ আইনজীবীরা তাদের ভোট দিতে পারছেন না। সর্বোচ্চ বারের নির্বাচনের এই ফল কখনোই শুভ নয়। এখানে নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ থাকবে না। সাধারণ আইনজীবীরা তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে- এটাই আমার বিশ্বাস।

একুশে: আইনজীবীদের জন্য আপনার প্রতিশ্রুতিসমূহ কী কী?

নাহিদ সুলতানা যুথী: বার সম্পাদক নির্বাচিত হলে বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করবো। দলীয় প্রভাবের কারণে আইনজীবীদের মধ্যে যে ঐক্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করে আইনজীবীদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব তথা ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টির চেষ্টা করবো। আইনজীবীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা তাদের অপর্যাপ্ত আসন। আইনজীবীরা গাদাগাদি করে অমানবিকভাবে তাদের আইনি কাজকর্ম পরিচালনা করে থাকেন। আমি নির্বাচিত হলে সব আইনজীবীদের জন্য আসনের ব্যবস্থা করবো। আইনজীবীদের পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য ডিজিটাল ডিরেক্টরি তৈরিসহ আরও সহজতর পদ্ধতির মাধ্যমে একে অপরের কমিউনিকেশন সহজ করে তোলার চেষ্টা করবো। আইনজীবীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে আলাদা ‘মেডিকেল সেবা’ চালু করবো।

আইনজীবীদের ‘সিন্ডিকেট’ থেকে মুক্ত করে স্বাতন্ত্রিক পরিচয় দিয়ে নির্দিষ্ট ‘বলয়’ থেকে বের করে আনবো। বার ও বেঞ্চের যোগাযোগ সহজীকরণ করার লক্ষ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করবো। আইনজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ট্রেনিং ও সেমিনারের ব্যবস্থা করবো। আইনজীবীদের যাতায়াত দ্রুত ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে পরিবহনের ব্যবস্থা করবো। মেধাবী ও পিছিয়ে পড়া আইনজীবীদের জন্য বিভিন্ন স্কিমে ‘শিক্ষাবৃত্তি’ প্রণয়ন করবো। নারী আইনজীবীদের অধিকার রক্ষায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবো। ডে কেয়ার সেন্টারের আধুনিকীকরণ করবো। সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরের পরিবেশ সুন্দর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। সরকারের প্রথম শ্রেণির চাকরিজীবীদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবো। আইনজীবীরা তাদের বেনেভলেন্ট ফান্ড যেন সহজ শর্তে উত্তোলন এবং জীবনের অন্তিম লগ্নে নিজেই ব্যবহার করতে পারে, সেই লক্ষ্যে নিয়মনীতি প্রণয়নে সবার মতামতের ভিত্তিতে কাজ করবো। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

একুশে: আইনজীবীদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?

নাহিদ সুলতানা যুথী: আমি আইনজীবীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি, সুন্দর একটা বারের স্বপ্ন দেখি। এই বারকে নিয়ে যেন গর্ববোধ করতে পারি। আমরা কালো কোট পরে যেন গর্ববোধ করতে পারি। পরবর্তী প্রজন্ম থেকে বলতে পারে, আমি ওনার মতো আইনজীবী হতে চাই। সুপ্রিম কোর্ট বারের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই। আমি মনে করি, সুপ্রীম কোর্ট বারের সম্পাদক নির্বাচিত হলে প্রতিটি আইনজীবীর সঙ্গে সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। সকল সমস্যার সমাধান হবে।

একুশে: ধন্যবাদ

নাহিদ সুলতানা যুথী: আপনাকেও ধন্যবাদ

এমএম//