ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ধূমপান প্রতিরোধে বিজ্ঞান ভিত্তিক উপায়ে এগোতে হবে

মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান

প্রকাশিত : ০৮:৫৪ পিএম, ৭ মার্চ ২০২৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:০৩ পিএম, ৭ মার্চ ২০২৪ বৃহস্পতিবার

বর্তমানে তামাক সেবনের তীব্রতা এশিয়া মহাদেশে তো বটেই, বিশ্বব্যাপি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এই তীব্রতা সৃষ্টির একটি অখ্যাত কারণ হলো নানা ব্যক্তির নানা দর্শন। যেখানে তামাকের ভয়াবহতা নিয়ে অগণিত গবেষণা ও সমীক্ষা থাকা স্বত্ত্বেও এক শ্রেণীর মানুষ ধূমপান হ্রাসে বৈজ্ঞানিক প্রমাণগুলো রেখে মনগড়া মতবাদে আশ্বস্ত হচ্ছে। 

এমতাবস্থায়, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাগুলোকে ঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে সেসব ভিত্তিহীন মতবাদগুলোকে সমাজ থেকে প্রতিহত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আরও সোচ্চার হতে হবে। ধূমপানের বিপজ্জনক স্বাস্থ্যগত প্রভাব কমাতে হলে মানুষকে সঠিক তথ্য এবং মনগড়া আলোচনার পার্থক্যটা বোঝাতে হবে। তবে কীভাবে? 

বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপি ধূমপায়ী ও সম্ভব্য নতুন ধূমপায়ীদের সিগারেট থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে এবং সেই উদ্যোগগুলো ভিন্নভিন্ন আঙ্গিকে সমাজে প্রভাব ফেলেছে। কিছু উদ্যোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকরও হয়েছে, যার ফলস্বরূপ যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও জাপানে ফুসফুস ক্যান্সার ও এম্ফিসেমার ঘটনা অনেকাংশে লোপ পেয়েছে। অন্যদিকে, এশিয়ার কিছু দেশ তামাকজনিত রোগ প্রতিরোধে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে। 

২০১৯ সালে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ধূমপানের কারণে প্রায় ৪৭ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। বর্তমানে থাইল্যান্ডে ধূমপায়ীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি, ভারতে প্রায় ১০ কোটি এবং চীনে আরও বেশি। তাই আমাদের বুঝতে হবে তামাক নিয়ন্ত্রণে সফল ও ব্যর্থ দেশগুলো মধ্যে পার্থ্যক কী কী! আর এ বিষয়ে বিজ্ঞান আমাদের কী শিক্ষা দিতে পারে?

লেখক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান

মজার বিষয় হলো, থাইল্যান্ড মতো দেশ (ডব্লিউএইচও) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন’ বা এফসিটিসি’র নীতিমালা অনুসরণ করেও গত দুই দশকের প্রচেষ্টায় মাত্র ১ শতাংশ হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এফসিটিসি’র স্বাক্ষরকারী না হয়েও এক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। এমন দুদর্শা ভারতেও। তাই নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে কোন উপায়ে সবচেয়ে কার্যকরভাবে এই ধারাকে কমানো যায়।

পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নীতিমালার সাফল্য ও ব্যর্থতার পার্থক্য নির্ণয়ে সরকারকে বুঝতে হবে যে তামাকজাত পণ্যের তুলনায় সিগারেট অধিক ক্ষতিকর যেখানে অন্যান্য বিকল্পগুলো কম ক্ষতিকর, তাই একে বিশেষ নজরে দেখা উচিৎ। 

অবশ্যই সবার প্রত্যাশা থাকবে যেন নীতিনির্ধারকরা এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাতে ধূমপায়ীরা তামাক ও নিকোটিন সেবন সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করাতে সফল হয়। কিন্তু সিগারেট সেবনকারীরা একেবারে এটিকে বর্জন করতে পারে না। সেক্ষেত্রে এই বিকল্পগুলো হতে পারে একমাত্র উপায় যাতে করে শরীরে নিকোটিনের মাত্রা বজায় রেখে প্রাথমিকভাবে তারা সিগারেট গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারে। তাই ধূমপান-প্রবণ দেশগুলোয় সিগারেটের বিকল্প পণ্য নিষিদ্ধ করার এফসিটিসি’র সিদ্ধান্তকে পুনরায় ভেবে দেখা দরকার।

উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্য সম্প্রতি সিগারেট সেবন বন্ধ করার লক্ষ্যে বিকল্প পণ্যগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে ‘সোয়্যাপ টু স্টপ’ নামক একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা নিকোটিন আসক্তদের সিগারেট সেবন থেকে বের করে আনতে ডিজাইন করা হয়েছে। এই উদ্যোগ দেশটিকে সিগারেট নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সাহায্যও করেছে। এর বিপরীতে থাইল্যান্ড ও ভারতের মতো দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করলেও দেশগুলো ধূমপান নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। আজ বাংলাদেশও যদি থাইল্যান্ড, ভারত বা চীনের পথ অনুসরণ করে তাহলে আমাদের অবস্থাও সেরকম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। তাই আমাদের এই বিষয়ে আরও ভাবতে ও কৌশলী হতে হবে। 

২০৪০ সালের মধ্যে দাহ্য সিগারেটের ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সরকারকে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা, অভ্যাস ও মানসিকতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

লেখক: আইনজীবি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট