ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ১০৪ তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনাসভায় বক্তরা

বাঙালি জতিসত্তার অস্তিত্বের মর্মমূল জাতির জনক শেখ মুজিব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪০ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২৪ শনিবার

বাঙালির অস্তিত্ব অনুসন্ধানের মূলসুতোয় রয়েছে জাতির জনক শেখ মুজিব। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য বহুবার চেষ্টা হয়েছে। অনেক নেতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু পরিণতি লাভ করেনি। শেখ মুজিব হচ্ছেন সেই নেতা যাঁর ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে বাঙালি স্বাধীনতা ও মুক্তি লাভ করেছে। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনাসভায় এসব বলেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বক্তা। সম্প্রীতি বাংলাদেশের উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, শেখ মুজিব ছিলেন সত্যিকারের নেতা-যিনি মানুষের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা জানতে পেরেছিলেন। এমনকি মানুষও বুঝতে পেরেছিল-মুজিবের কথাই তাদের অন্তরের চাওয়া পাওয়া। আর এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন সফল হয়েছিল। নির্মম নির্যাতন সহ্য করে এদেশের মানুষেকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন তিনি। 

সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী, অধ্যাপক বিমান চন্দ্র বড়ুয়া, সিনিয়র সাংবাদিক ও কবি মুস্তাফিজ শফি, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসানুজ্জামান খান, মেজর (অব.) আফিজুর রহমান আফিজ, ডিক্যাব সভাপতি নূরুল ইসলাম হাসিবসহ অন্যরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মাকসুদ কামালের অভিমত, বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনামল ছিল চিরায়ত। এমনকি তাঁর  সময়ের সংবিধান, বাজেট, শিক্ষা ও সার্বিক কর্মসূচিতে সার্বজনীন চাওয়া পাওয়া উপজীব্য হয়ে উঠেছিল। এদেশের মানুষের অস্তিত্বের উৎস তাই শেখ মুজিব। কারণ তিনি মানুষের মুক্তির পর ভেবেছিলেন বাংলাদেশের সম্পদের সুষম বন্টন প্রসঙ্গে। তাঁর কন্যা পিতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। আর এ কারণেই একটি শক্তিধর রাষ্ট্র বিগত নির্বাচনে সার্বিকভাবে ষড়যন্ত্র করলেও গণমানুষের কাছে তা বিফল হয়েছে। কারণ  বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও চেতনা বাঙালির অন্তস্থলে প্রোত্থিত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনকর্মের বহুমাত্রিক আঙ্গিক তুলে ধরে অনুষ্ঠান সভাপতি পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা তৈরী হয়েছে। নিত্যকার সময়ে তাই তিনি অতি প্রয়োজনীয় এবং অবিনশ্বর। বাঙালির জীবনে অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব আসছেন কিন্তু তাঁর মতো কোন নেতাই গণমুক্তির ভাবনা ভাবেন নি। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তিনি শুধু মুখেই বলেছেন তা নয়, তিনি সংবিধানেও তা সংযোজন করেছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে পিতার ছোঁয়া কিভাবে স্পষ্ট তা তুলে ধরেন নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়শই বলে থাকেন, যাই করতে যায় তাতেই দেখি আব্বার ছোঁয়া। প্রতিটি কাজ নতুন ভেবে শুরু করতে গেলেই দেখি বঙ্গবন্ধু সেটির সূচনা করেছিলেন। সুতরাং আসমূদ্রহিমাচল শেখ মুজিব সর্বকালে অনবদ্য এবং অনন্য। 

ইতিহাসের নানান আখ্যান তুলে ধরে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, বাংলায় অনেক নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। কেউ কেউ সর্বোতভাবে চেষ্টা করেছিলেন মানুষের স্বাধীনতা আর মুক্তির জন্য। সবাইকে ছাপিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান অবিসংবাদিত। পদ্মা-মেঘনা বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় তিনি মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। তিনি শিক্ষা দিয়ে গেছেন, বাঙালি জাতি হিসেবে আর যাই হোক মনের দিক থেকে অনেক শক্ত। 

স্বাধীনতার পর থেকে আজ অব্দি হিন্দু-মুসুলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টানের মিলিত স্রোতধারায় সম্প্রীতির বাংলাদেশ অর্থনীতির উচ্চশিখরে ধাবমান-বলে মনে করেন সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি ও সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি বলেন, সাতচল্লিশে দেশভাগের পরই শেখ মুজিব ভেবেছিলেন স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা। আজকের শিক্ষা সংস্কৃতিতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তাঁকে সত্যিকারভাবে উপস্থাপন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও নিষ্ঠা তাদের জন্য শিক্ষা ও বিপ্লবের পরম আধার হয়ে উঠবে।

বঙ্গবন্ধুগবেষক মেজর (অব.) আফিজুর রহমান বলেন, আবহমান বাংলার চেতনায় ঋদ্ধ হলেই কেবল শেখ মুজিবের দর্শন বোঝা সম্ভব। তার জন্য চাই সর্বস্তরে জাতির পিতার কর্মকান্ড ছড়িয়ে দেয়া। মুক্তিকামী বাঙালির জীবনে বঙ্গবন্ধু কিভাবে প্রভাব বিস্তার করে তা-ও উঠে আসে মুক্ত আলোচনায়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী জয়শ্রী ব্যানার্জী, একুশে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সাইফ ইসলাম, কলামিস্ট তাপস হালদার, একুশের টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ড. অখিল পোদ্দার, সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান, ফকির আবু তালেব, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সংগঠক রাজিব কর প্রমুখ।