ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

তথ্য গোপন করে ইনক্রিমেন্ট নেন কুবি উপাচার্য

কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:১২ পিএম, ২০ মার্চ ২০২৪ বুধবার

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন তথ্য গোপন করে দু’বার ইনক্রিমেন্ট নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী তিনি ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন না। কাজেই এটি একটি অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি। ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর উপাচার্য বলেছেন, তিনি ইনক্রিমেন্টের অর্থ ফেরত দিতে প্রস্তুত।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকালীন চাকরির জন্য কোনো বর্ধিত পেনশন বা ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য হবেন না। তবে উপাচার্য আবদুল মঈন এ সুবিধা নিয়েছেন। 

তিনি ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছাড়লেও উপাচার্যের নিয়োগ প্রজ্ঞাপনে শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেন। এ কারণে তাঁকে দুইবার ইনক্রিমেন্ট দিয়েছে কুবির অর্থ দপ্তর। এ নিয়ে শিক্ষকরা কোষাধ্যক্ষকে প্রশ্ন করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্য গোপন করে তিনি উপাচার্য হয়েছেন এবং অনৈতিকভাবে ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপাচার্য মঈন ২০১১ সালে ঢাবির শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। তখন তিনি গ্রেড-৩-এর অধ্যাপক। চাকরি ছেড়ে তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষকতা করেন। পরে ঢাবিতে চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপক হিসেবে ফের নিযুক্ত হন। পরে কুবিতে  তাঁকে উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হলে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ঢাবি থেকে তাঁকে রিলিজ দেওয়া হয়। 

এরপরই তিনি কুবিতে যোগদান করেন। 

জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের অধ্যাপক হিসেবে ৬৮ হাজার ৭৭০ টাকা বেতন পেয়ে আসছিলেন তিনি। পরে দুইবার ইনক্রিমেন্ট নিয়ে বর্তমানে ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা নিচ্ছেন তিনি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ হিসাব দপ্তরের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, অবসরপ্রাপ্ত কারও বেতন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে ঠিক করেছেন সেটা ওনারা জানতে পারবে। তবে আইন অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত কেউ ইনক্রিমেন্ট নিতে পারেন না। 

কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তিনি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করছেন। নিয়ম অনুযায়ী, তিনি ইনক্রিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন না। কাজেই এটি একটি অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি, অনিয়ম এবং বেআইনি কাজ।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, উপাচার্য তাঁর সেলারি শিটে তথ্য গোপন করে ইনক্রিমেন্ট নিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষদে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে গিয়েও নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ নেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি আগাগোড়াই প্রতারণা করে উপাচার্য হয়েছেন।

এ বিষয়ে অর্থ ও হিসাব দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কামাল উদ্দীন ভূঁইয়া জানান, ঢাবি থেকে আমাদের যেভাবে কাগজ দেওয়া হয়েছে, আমরা সেভাবেই বেতন নির্ধারণ করেছি। ঢাবিতে তাঁর নিয়োগের কোথাও লেখা নেই তিনি চুক্তিভিত্তিক। তবে তাঁর ইনক্রিমেন্ট হওয়ার কথা নয় বলে আমিও শুনেছি।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ওনি ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছে কিনা তো আমি জানি না। ২৭০ জন শিক্ষক আছে, কার কখন ইনক্রিমেন্ট হয় এটা কি ট্রেজারারের দেখার কথা নয়। হয়ত অর্থ দপ্তরে যিনি বেতন দেখেন, তিনি ভুল করছেন। রাষ্ট্রের জায়গা থেকে অতিরিক্ত বেতন এবং বেনিফিট নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার পর হলেও ফেরত দিতে হবে। 

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মঈন কথা বলতে অপরাগ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রয়োজন হলে যারে উত্তর দিতে হবে তাকে উত্তর দিবো। ইনক্রিমেন্ট যদি নিয়ে থাকি তাহলে ফেরত দিবো।’

এএইচ