ভুটানের রাজার সফরে তিন সমঝোতা ও এক চুক্তি নবায়ন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪২ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২৪ রবিবার
স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশ ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার ঢাকায় আসছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবগঠিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম এসফরে ভুটানের রাজা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর ও একটি চুক্তি নবায়নের কথা রয়েছে।
আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলনায়তনে এই ‘ভিভিআইপি’ সফরের পর্দা উন্মোচন সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এতথ্য জানান। ভুটান বাংলাদেশের প্রতিবেশি অকৃত্রিম বন্ধু রাষ্ট্র উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২৫ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সফরে ভুটানের রাজা আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। রাজার সফরসঙ্গী থাকছেন ভুটানের রানী, পরিবারের সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রীগণ ও পদস্থ কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সোমবার সকালে ঢাকায় বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয় অতিথি রাজা ওয়াংচুককে রাষ্ট্রপতি স্বাগত জানানোর পর গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর রাজা ধানম-ি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পর্যটন, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি সমন্বয়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ট্রানজিট, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি, ভারতকে সাথে নিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিনিময়ে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা, স্বল্পোন্নত হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে উদ্ভূত চ্যালঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সহযোগিতা আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বলে জানান ড. হাছান।
এসময় ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি পুন:নবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ জানান, ভুটানের রাজা ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, সকালে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউিট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল পরিদর্শন, বিকেলে রাষ্ট্রপতির সাথে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাত ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
মন্ত্রী বলেন, ২৭ মার্চ পদ্মা সেতু এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন এবং ২৮ মার্চ কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে বিকেলে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে রাজা বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী রাজাকে বিদায় জানাবেন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গার্ড অব অনার প্রদান করবেন।
ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুকের বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে ভুটানের জন্য উপহার হিসেবে যা থাকবে সে বিষয়েও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আগামী বছর থেকে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থী কোটা ২২ থেকে ৩০ করা, ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ভুটানের অফিসারদের জন্য দুইটি আসন বরাদ্দ দান, ভুটানে ফরেন সার্ভিস একাডেমি স্থাপনে কারিগরি সহায়তা দেওয়া, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে ভুটানের কর্মকর্তাদের ৩ বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং সে দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নে ল্যাপটপ ও ট্যাবসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপহার দেবে বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র উত্থাপিত গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাশিয়া ও চীনের ভেটোদানে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ফিলিস্তিনে ৭ অক্টোবরের পর থেকে যেভাবে শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে সেটি মানব সভ্যতার জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এখনই যদি আমরা এটি বন্ধ করতে না পারি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা দায়ী হয়ে থাকবো। আমরা প্রতিনিয়িত এ নিয়ে মনোবেদনায় ভুগছি এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এর প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্রে, কানাডায়, যুক্তরাজ্যে, আয়ারল্যান্ডে, কন্টিনেন্টাল ইউরোপে, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিবাদ চলছে। কারণ মানুষ এই অপরাধের বিরুদ্ধে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছিল, কিন্তু ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের মতে সেই প্রস্তাবে কিছু ত্রুটি ছিল। রাশিয়া ও চীনের ভেটোদানের কারণ বোধগম্য নয়। কিন্তু আমরা চাই অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি হোক, এই বর্বরতা বন্ধ হোক।
কেআই//