রুয়েট সাবেক ভিসি-রেজিস্টারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:৪৮ এএম, ২৮ মার্চ ২০২৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:৫১ এএম, ২৮ মার্চ ২০২৪ বৃহস্পতিবার
জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ১০৯ টাকার ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রয়েট) সাবেক উপাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম এ মামলা করেন।
মামলায় রুয়েটের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখ এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও বর্তমানে ইইই বিভাগের অধ্যাপক সেলিম হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক কামরুল আহসান জানান জানান, গত রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুপারিশের ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধানে নামে। ইউজিসিই প্রথমে তদন্তে এই অনিয়ম পায়। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম রাজশাহী বাদী হয়ে দনণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ধারসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা করার পর দুদক একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পারস্পরিক যোগসাজশে অসৎ অভিপ্রায়ে নিজেরা লাভবান হয়ে অন্যদের লাভবান করার জন্য অপরাধমূলক অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বরপ্রাপ্ত প্রার্থীদেরকে মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর প্রদান করে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ছয়জন সেকশন অফিসারের স্থলে ১৩ জনকে নিয়োগ প্রদান, জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের অনুমোদন ও শূন্য পদ না থাকা সত্ত্বেও সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদের বিপরীতে জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ প্রদান, পিএ টু ভিসি/ডিরেকটর পদে দুজনকে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এছাড়া ডাটাএন্ট্রি অপারেটর পদে একজনকে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও দুজনকে নিয়োগ প্রদান, মালি পদে তিনজনকে নিয়োগ প্রদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও সাতজনকে নিয়োগ প্রদান, ড্রাইভার পদে একজনকে নিয়োগ প্রদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও তিনজনকে নিয়োগ প্রদান এবং সহকারী কুক পদে তিনজনকে নিয়োগ প্রদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও পাঁচজনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এই অতিরিক্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ১৭ জনের ২০২১ সালের জুন মাস থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত বেতন ভাতাদি বাবদ সরকারের মোট ১ কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ১০৯ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই চার বছরের জন্য রুয়েটের উপাচার্য পদে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়টির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখ। নিয়োগ পাওয়ার পরের বছর তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রুয়েটে বিভিন্ন পদে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেন। আর নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয় গত ২০২২ সালের ৪ মে ৯২তম সিন্ডিকেট সভায়।
নিয়োগ অনুমোদনের পর অভিযোগ ওঠে, উপাচার্য স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে তার সহোদর মুকুল হোসেনকে সেকশন অফিসার ও আরেক সহোদর লেবারুল ইসলামকে জুনিয়র সেকশন অফিসার ও শ্যালক সোহেল আহমেদকে পিএ টু ডিরেক্টর, চাচাতো বোন মাছুমা খাতুনকে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, গৃহকর্মী লাভলী আরাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক, গৃহকর্মী লাভলীর স্বামী এনামুল হককে উপাচার্যের গাড়িচালক ও স্ত্রীর ফুফাতো ভাই মেহেদী হাসানকে কেয়ারটেকার পদে নিয়োগ দেন।
এছাড়া বিজ্ঞাপ্তির প্রকাশ করা পদের চেয়ে ১৭ জনকে বেশি জনবল নিয়োগ দেয়া দেওয়া হয়।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছরের ৪ এপ্রিল রফিকুল ইসলাম শেখের মেয়াদে দেয়া সব নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে বাতিলের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এএইচ