৯০০টি দেশি- বিদেশি মোবাইল জব্দ
রাজধানীতে অবৈধ মোবাইল চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা সহ আটক-২০
মনির হোসেন জীবন
প্রকাশিত : ০৭:১৩ পিএম, ২ এপ্রিল ২০২৪ মঙ্গলবার
রাজধানী ও আশপাশ এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে চুরি ও ছিনতাইকৃত অবৈধ মোবাইল চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতাসহ ২০ জন’কে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এসময় তাদের নিকট থেকে আইএমইআই পরিবর্তন করার ডিভাইস সহ প্রায় ৯০০টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি ও বিদেশি স্মার্টফোন উদ্ধার মূলে জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, একটি সংঘবদ্ধ অসাধু দূস্কৃতিকারী চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ চোরাই ও ছিনতাইকৃত বিভিন্ন আধুনিক মডেলের এনড্রয়েড মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। পরবর্তীতে এ সমস্ত মোবাইল ফোন বিভিন্ন অপরাধীরা ক্রয় করে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার করছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাতের বিভিন্ন সময় এলিট ফোর্স র্যাব-৩ এর ৪ টি দল রাজধানীর গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় পৃথক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। অভিযানকালে তাদের হেফাজত থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ মোবাইল ফোনসেট উদ্বার করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্হ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)র গণমাধ্যম শাখার মূখপাত্র (পরিচালক) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। এসময় র্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্হিত ছিলেন।
তিনি জানান, আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে মোবাইল সিন্ডিকেট চক্র ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের বাণিজ্য নিয়ে তৎপর রয়েছে। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে এসময়টিতে মোবাইল ছিনতাইয়ের পরিমাণও বেড়ে যায়। ছিনতাই হওয়া এসকল মোবাইল ফোন বিভিন্ন মার্কেটের সম্মুখে অস্থায়ীভাবে দোকান স্থাপন করে বিক্রি করে থাকে। এছাড়াও চক্রটি ঢাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি এবং ছিনতাই হওয়া এসকল মোবাইল ফোন সুকৌশলে বিভিন্ন সিন্ডিকেটের যোগসাজশেও ক্রয়-বিক্রয় করতো।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আটকরা ব্যক্তিরা হলো, খিলগাঁও এলাকার সংঘবদ্ধ মোবাইল চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা হাফিজুর রহমান (৩৫), তার সহযোগি রনি আহমেদ ইমন (২৯), মোঃ জসিম উদ্দিন (৩৫), মোঃ জামাল উদ্দিন (৫০), আবুল মাতুব্বর (৪২), আহম্মদ আলী (৩৫), মোঃ কামাল (৪০), মোঃ বাপ্পি (২৯), মোঃ আবিদ হোসেন সনু (৩৮), মোঃ রবিন ভূ্ইয়া (২১), নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা মোঃ আরিফুল হোসেন (২২), ইব্রাহিম মিয়া (৪০), মোঃ সুজন (২৯), গুলিস্তান এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা মোঃ দেলোয়ার (৩৩), মোঃ আব্দুর রহমান (১৯), মোঃ রাজু (২৭), মোঃ জিহাদ হোসেন (২৪), মোঃ মুনাইম (৩৮), মোঃ রাজু (৪৫), রফিক (৩৮),
আটকরা রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফরিদপুর, নওগাঁ, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় তাদের গ্রামের বাড়ি বলে জানা গেছে। খন্দকার আল মঈন বলেন, এসময় তাদের নিকট থেকে ৫৪২টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ৩৪১টি বাটন মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার, ১টি হিটগান, ইলেকট্রনিক সেন্সর ডিভাইস, আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন টুলস, ছিনতাই এর কাজে ব্যবহৃত ৬টি চাকু, ১টি ল্যাপটপ, ১টি এলসিডি মনিটর এবং নগদ ১১,৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা মোবাইল চোরাকারবারি চক্রের সাথে জড়িত বলে অকপটে স্বীকার করেছে এবং সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা মূলত ৪টি চক্রে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘ ৫-৬ বছর যাবৎ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এসকল মোবাইল চোরাকারবারির সাথে জড়িত রয়েছে। তারা মোবাইল চুরি, ছিনতাই ও আইএমইআই পরিবর্তনের কারিগর। চক্রটি চোরাইকৃত মোবাইল ফোনগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে থাকে। এদের মধ্যে আটক আব্দুর রহমান, রবিন ভূইয়া ও হাফিজুর রহমান মোবাইল ছিনতাই করে পরবর্তীতে চক্রের মূলহোতা রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যান্যদের নিকট স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়। এছাড়াও তারা অন্যান্য ছিনতাইকারির নিকট থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে থাকে। এছাড়া দেলোয়ার এবং আবুল মাতুব্বর মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনগুলোর আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মূখপাত্র জানান, গ্রেফতারকৃত দেলোয়ারের নেতৃত্বাধীন চক্রটি গুলিস্তান এলাকায় সক্রিয়। এ চক্রের নিকট থেকে ২৯১টি স্মার্ট ফোন এবং ১৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় আরিফুলের নেতৃত্বে
এ চক্রটি সক্রিয় ছিল। এ চক্রের নিকট থেকে ১০৬টি স্মার্ট ফোন এবং ৫৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মোহাম্মদপুর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আটক আবুল মাতুব্বর নেতৃত্বাধীন একটি চক্র সক্রিয় ছিল। এ চক্রের নিকট থেকে ৯১টি স্মার্ট ফোন এবং ২৪টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়। ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় ইমনের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র সক্রিয় ছিল। এ চক্রের নিকট থেকে ৫৪টি স্মার্ট ফোন এবং ৭৯টি বাটন ফোন উদ্ধার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতারকৃতরা নিজেরা সকলেই চোরাইকৃত মোবাইলের পরিবর্তিত আইএমইআই নম্বরের ফোন সেট ব্যবহার করে থাকে। তারা মোবাইলের কেসিন, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। গ্রেফতারকৃত এই চক্র ২০ হাজারের অধিক মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে বলে স্বীকার করেছে।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ব্রান্ড এবং কোয়ালিটি ভেদে এসব মোবাইলের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভালো মানের মোবাইলগুলো তারা মোবাইল মেরামত করার দোকানে বিক্রি করে থাকে। অন্যান্য মোবাইল ফোনগুলো বিভিন্ন মার্কেটের সম্মুখে ভ্রাম্যমান টেবিলে করে বিক্রয় করে থাকে।
খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার এর বিরুদ্ধে রাজধানীর বংশাল, শাহবাগ এবং কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। দেলোয়ারের সহযোগী রাজু এবং জিহাদ এর বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া মূলহোতা আরিফুল এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জেরর সোনারগাঁও থানায় মামলা রয়েছে। ইতিপূর্বে মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো পূর্বের পেশায় লিপ্ত হয়।
তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।