খাদ্যাভ্যাস-জীবনযাপনে পরিবর্তন সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা
আকবর হোসেন সুমন
প্রকাশিত : ০৪:১৩ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার | আপডেট: ০৯:১২ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পরিবর্তনে অসংক্রামক রোগ থেকে মিলবে নিরাময়। নিয়মিত চর্চ্চায় সচল শরীরের পাশাপাশি নিরোগ মানসিকতাও দিতে পারে সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা। বায়ু ও পরিবেশ দূষণের প্রভাবেও দীর্ঘমেয়াদী এই ঘাতকব্যাধি হয়ে ওঠে ভয়ংকর ‘মহাদানব’। তাই প্রয়োজন সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিংবা শয্যাশায়ীদের প্রায় ৭০ শতাংশই কিডনী, ফুসফুস, লিভার কিংবা ক্যানসার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত। অস্টিওপরোসিস কিংবা অস্টিওআর্থাসিসের মতো ব্যাধির কারণও এখন পরিস্কার।
চিকিৎসার অপ্রতুলতা কিংবা দীর্ঘমেয়াদী বলে আর্থিক অসঙ্গতি বাদ দিলে মোটা দাগে এই অসংক্রামক রোগের পেছনে কারণগুলো দৃশ্যমান। যেমন-‘কায়িক পরিশ্রম বা নিয়মিত শরীর চর্চ্চা’র অভাবে সৃষ্ট স্থুলতা থেকে কোলেস্টরেল বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এমনকি ফুসফুসে সংক্রমণজনিত সমস্যা হয়।
‘খাদ্যাভ্যাসের বিশৃংঙ্খলা’- যেমন শাকসবজি ফলমূল এড়িয়ে চর্বি ও শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ, ফাস্টফুডে আসক্তি, ভেজাল খাদ্য, চিনি-মিষ্টি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ কিংবা কোমলপানীয় নীরবেই ক্ষতি করে শরীরের। আর ‘ধুমপান, তামাকজাত পণ্য এবং মাদকসেবনে’ ৫০ শতাংশ আক্রান্ত হয় অসংক্রামক রোগে।
এছাড়া ‘মোবাইল আসক্তি, অলস জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপে’র নেতিবাচক প্রভাবও ছাড় দেয়না একবিন্দু।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, “তরুণদের মধ্যে ১৫-২০-৩০ বছরের লোকের হার্টঅ্যাটাক পাচ্ছি। যেটা ২০ বছর আগেও ছিলনা। এটার বড় কারণ হলো আমাদের ছেলেমেয়েরা ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি করছেনা, জাঙ্ক ফুট খাচ্ছে। এই জায়গায় মা-বাবাদের সচেতন হওয়া দরকার। সন্তানদেরকে একটা স্পেস করে দেয়া- খেলতে যাক, আউট ডোর গেম খেলুক, ইনডোর গেম খেলুক। তারা যাতে দিনরাত মোবাইল আসক্তিতে না থাকে।”
এই ঘাতক ব্যাধি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর সচেতনতায় সম্ভব এড়ানো। প্রয়োজন জীবনযাপনের পরিবর্তন, ধূমপান ও মাদক বর্জন এবং নিয়মিত শরীর চর্চ্চা।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, “জর্দা, গুল, নর্সি্য- এগুলো বাদ দিতে হবে। আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। হাঁটাচলা, ব্যায়াম বাড়াতে হবে বয়স অনুপাতে। খাওয়াদাওয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে বিশেষ করে জাঙ্ক ফুট, ফাস্টফুট এগুলো পরিহার করতে হবে।”
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজণিত সমস্যার পাশাপাশি বহুমূখী অস্থিরতাও দীর্ঘমেয়াদী এই মরণব্যাধির জন্য দায়ী।
ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, “জুট ইন্ডাস্ট্রি, কটন ইন্ডাস্ট্রি, কনস্ট্রাকশনের কাজ, রাস্তাঘাটের যানবাহনগুলোতে যাতে পলিউশন যাতে না হয়। আর বায়ুদূষণ নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে।”
অসংক্রামক ব্যাধি মহামারি রূপে অকাল মৃত্যুর কারণ না হোক। সুস্থতায় বাঁচুক পৃথিবীর মানুষ।
এএইচ