ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৭ ১৪৩১

শুভ জন্মদিন রাণী

অজয় দাসগুপ্ত

প্রকাশিত : ১১:৪৭ এএম, ৫ মে ২০২৪ রবিবার

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী স্কুল ডাঃ খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। দীপা সে স্কুলের ছাত্রী। তাঁর জন্মেরও অর্ধশত বর্ষ আগে এই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন এই বীর কন্যা।

তারপর ইন্টারমিডিয়েট। ঢাকার ইডেন কলেজে পড়তে যাওয়া, তিনি ঢাকা বোর্ডে মেয়েদের মধ্যে প্রথম আর সম্মিলিত মেধা তালিকায় হয়েছিলেন পঞ্চম। চট্টগ্রাম যখন নিজেই একটি ছোট মফস্বল শহর তখন তার পটিয়ার ধলঘাটের এই মেয়ের এমন ফলাফল নিঃসন্দেহে বিশাল অহংকার আর কৃতিত্বের। 

এখানেই শেষ না। কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে মূলত দর্শন শাস্ত্রে কৃতিত্বের সাথে ডিসটিংকশন নিয়ে বিএ পাস করলেও বৃটিশ সরকার তাঁকে তা দিতে নারাজ ছিলো। ততদিনে তারা জেনে গিয়েছিল এই মেয়ের বুকে বারুদ জমতে শুরু করেছে।

মুক্তি ও দেশপ্রেমের আগুন তখন তার ধমনীতে মাষ্টার দা সূর্য সেনের সঙ্গ লাভের বিলম্ব মাত্র। অচিরেই তা পূর্ণ হবার পর তাঁকে দমিয়ে রাখে কার সাধ্য? চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে বৃটিশদের একখানা ক্লাবঘর ছিলো, যাতে লেখা থাকতো ভারতীয় ও কুকুরদের প্রবেশ নিষেধ। যার মানে তখনকার বাঙালিরাও কুকুরতুল্য। সে ক্লাব আক্রমণ করা কি অপরাধ না কোন পাপ?

নিজেদের সম্মান ও পরিচয় তুলে ধরা ও দেশ মুক্ত করার জন্য সুন্দর ও স্বাভাবিক নামের কথিত জীবন অনায়াসে ঝেড়ে ফেলে দেয়া ইনি বেছে নিয়েছিলেন বিপ্লবী জীবন। সে অপারেশানে গুলি খাওয়া আহত মেয়েটি ধরা পড়ার চাইতে নিজেকে সরিয়ে নেয়াই উত্তম মনে করে বিষপানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। 

ইনিই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম নারী শহিদ। 

হিন্দু হবার কারণে বহু অপমান আর লাঞ্ছনা সহ্য করেছে তাঁর বিদেহী আত্মা। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করার রাজনৈতিক ওয়াজকারীরা তাঁকে বেশ্যা বলে ফতোয়া দিতো। তাঁর নামে কিছুর নামাকরণ ঠেকাতে তারা মাঠে নেমে যেতো। কিন্তু তাদের কোন ষড়যন্ত্র বা অপপ্রচার কিছুই কাজ করেনি।

এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে মেয়েটি তাঁর আপন কৃতিত্বে চির উজ্জ্বল। 

তাঁদের পারিবারিক পদবী দাশগুপ্ত। কিন্তু নবাবী আমলে তাদের কোন পূর্বসূরীকে উপাধি দেয়া হয়েছিল ওয়াহদেদার। পরে তা হয়ে গিয়েছিল ওয়াদ্দেদার। আর সে নামেই অমর হয়ে আছেন বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
 
মা তাঁকে ডাকতেন রাণী বলে। পরবর্তী কালে ঝাঁসির রাণী লক্ষীবাঈ প্রেরণা যুগিয়েছিল বাংলার মুক্তি সংগ্রামের এই প্রথম রাণীকে।

শুভ জন্মদিন বাংলার প্রীতিলতা।

এএইচ