উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট নবায়নযোগ্য জ্বালানির রোল মডেল
মুহাম্মদ নূরন নবী
প্রকাশিত : ১১:৫৪ এএম, ৬ মে ২০২৪ সোমবার
নবায়নযোগ্য জ্বালানির আশা দেখাচ্ছে কক্সবাজারের ৬০ মেগাওয়াট উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট। শুধু অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া যেখানে অন্য কোন উৎপাদন খরচ নেই। এরইমধ্যে দেশে প্রথমবারের মত বায়ুবিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। কক্সবাজারসহ দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলজুড়ে বায়ুর শক্তিশালী গতি থাকায় পুরো এলাকায় এ ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।
নব্বই মিটারের একেকটি টাওয়ার। ষাট মিটারের ত্রিমাত্রিক পাখা। বায়ুপ্রবাহ যে কোণেই আসুক না কেন, ত্রিমাত্রিক এই পাখাগুলো তা আহরণ করতে পারে। আর এই পাখা ঘোরায় টারবাইনের চাকা। তৈরি করে বৈদ্যুতিক শক্তি।
এই আশা জাগানিয়া চিত্র কক্সবাজারের বাঁকখালি নদীর খুরুশকুল উপকূলে। প্রত্যেকটি টারবাইন ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি করছে। রক্ষণাবেক্ষণ বাদে ২২টি টারবাইনে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সক্ষমতা দাপ্তরিকভাবে ৬০ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গণি বলেন, “এখানে শুধু রক্ষণাবেক্ষণ খরচটাই হবে। এখানে জ্বালানির কোনো খরচ নেই।”
কক্সবাজার ৬০ মেগাওয়াট উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মুকিত আলম খান বলেন, “এই পাওয়ার প্লান্টটি ১৪৫ গিগা বাইট প্রতি ঘণ্টায় বায়ু বিদ্যুৎ জেনারেট করে গ্রিডে দিতে সক্ষম।”
২০১৭ সালের আগে এদেশের বায়ু ও পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি সহজলভ্য ছিলো না। এতে বায়ু বিদ্যুৎ তৈরির চেষ্টা আগে হলেও সফলতা আসেনি। তবে ঝড়ঝঞ্ঝাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এখনকার প্ল্যান্ট অব্যাহত রাখতে পারে উৎপাদন।
প্রকৌশলী মুকিত আলম খান বলেন, “বছরে যদি ৮ হাজার ৭৬০ ঘণ্টা হয় তার ২১শ’ ঘণ্টা আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবো। এই বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুৎ নিয়ে আশার একটা স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি।”
চীনের প্রযুক্তি, কারিগরি সহায়তা ও বিনিয়োগে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পটি হয়ে উঠছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির রোল মডেল। বায়ু মানচিত্র জানান দিচ্ছে, উপকূল এবং পাহাড়ে অনেক সম্ভাবনাময় এই প্রকল্প।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিবছর কয়লার ব্যবহার কমাবে ৪৪ হাজার ৬০ টন; কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমাবে ১ লাখ ৯ হাজার ২শ’ টন। আর কমপক্ষে ১ লাখ গৃহস্থালিতে দেয়া যাবে বিদ্যুতের সংযোগ।
সাত-আট বছর আগেও এমনটা ধারণা ছিল যে, বাংলাদেশে বায়ুবিদ্যুতের সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কিন্তু কক্সবাজারের এই উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট ধারণা পাল্টে দিয়েছে। এখান থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে এবং নিয়মিতভাবে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে যে বিশাল উপকূল রয়েছে সেখানে এই বায়ু ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে সরকারের যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ২০৪১ সালে ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা সেটাও এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
এএইচ