ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

পা হারানো নিপা পেলো জিপিএ-৫, হতে চায় চিকিৎসক

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:০৭ এএম, ১৪ মে ২০২৪ মঙ্গলবার

সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো যশোরের শার্শার মিফতাহুল জান্নাত নিপা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা জান্নাতের এমন সাফল্যে খুশি পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকরা।

মিফতাহুল জান্নাত নিপা যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারন দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। শার্শা উপজেলার বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সে।

নিপার পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৯ সালের ২০ মার্চ সকালে ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল নিপা। তখন সে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে পৌঁছালে উল্টো দিক থেকে আসা বাগেরহাটের রামপাল পল্লী বিদ্যুতের একটি পিকআপ ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সে মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। এ সময় চালক পিকআপটি তার শরীরের ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন। 

এতে তার ডান পা ও ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে বাদ দেন। 

এর তিনদিন পর ২৪ মার্চ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় নিপা। কিন্তু সেদিন বৃত্তি পাওয়ার খবরেও নিপার কোনো আনন্দ ছিল না। মুখ বুঝে কান্না ছাড়া কিছুই করার ছিল না নিপার।

চিকিৎসা শেষে এক পায়ের ওপর ভর করে আস্তে আস্তে বড় হয় নিপা। চালিয়ে গেছেন লেখাপড়া। তবে এ যাত্রাটা ছিল আরও কষ্টের।

মিফতাহুল জান্নাত নিপার বাবা রফিকুল ইসলাম শার্শার নাভারণে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তিনি জমি বিক্রি করে মেয়েকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে যান। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিএমসি) তার কৃত্রিম পা লাগানো হয়। এতে রফিকুলের সাড়ে ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। 
মেয়েকে নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন থাকায় প্রি-ক্যাডেটের চাকরি চলে যায় রফিকুলের। পরে বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে রফিকুলকে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। 

বিদ্যালয়ের বেতন এবং বাড়িতে টিউশনি করে তার মাসে ১০ হাজার টাকার আয় দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি নিপা ও তার ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া করান তিনি।

টানাটানির সংসারে থেকেই বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল নিপা এবং জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন তার চোখে মুখে আনন্দের ছটা। আনন্দে ভাসছে তার পরিবার ও শিক্ষকরাও।

ফলাফলের ব্যাপারে মিফতাহুল জান্নাত নিপা বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ায় খুশি। আমি ডাক্তার হতে চাই। যত কষ্ট হোক, ভালো করে লেখাপড়া করে আমি ডাক্তার হবো।

নিপার পিতা রফিকুল ইসলাম বলেন, নিপা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এবার এসএসসি পরীক্ষাতেও সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে আমি খুশি। ওর কষ্টটা আমি বুঝি। আমার খুব সামান্য আয়। তা-ই দিয়ে ওকে আমি লেখাপড়া করিয়ে যাচ্ছি। ও ডাক্তার হতে চায়। যত কষ্টই হোক, ওকে আমি শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে যাব।

বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মমিনুর রহমান বলেন, মিফতাহুল জান্নাত নিপা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এত বড় একটা দুর্ঘটনার পরও সে মনোবল হারায়নি। গরিব পরিবার থেকে আসা নিপা আর্থিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে লেখাপড়ায় খুবই ভালো করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এএইচ