ঢাকা, রবিবার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২০ ১৪৩১

প্রভাবশালীদের দখলে খাসজমি

ভয়-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নাটোরের আড়াইশ ভূমিহীন পরিবার

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:০৪ পিএম, ১৬ মে ২০২৪ বৃহস্পতিবার

নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আড়াইশ’ ভুমিহীন অসহায় দরিদ্র পরিবার সরকারী খাস জমির জন্য দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন সহ নানা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বড়াল নদীতে জেগে ওঠা চরের জমি চাষাবাদের জন্য লিজের আবেদন করেও মিলছেনা জমি। উপরন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী জোতদার চক্রের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। বেশ কয়েকটি এনজিও প্রতিষ্ঠান নির্যাতিত এসব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ালেও কোন প্রতিকার মিলছেনা ।

বাগাতিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বুক চিরে যাওয়া বড়াল নদী চরের খাস জমিতে আড়াইশ’ অসহায় ভুমিহীন পরিবারের বাস। নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে গড়ে তোলা হয় বাঁশবাড়িয়া ভুমিহীন সমিতি নামের একটি সমিতি। বড়াল নদী তীরবর্তী খাস জমিতে ফসল আবাদের জন্য ২০০৬ সালে ৩ একর জমি এক সনের জন্য লিজ নেয় তারা। ওই লিজ নেওয়াটায় কাল হয় তাদের। স্থানীয় প্রভাবশালী দুটি পরিবারের রোষানলে পড়ে তারা। ওই দুই পরিবারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নদী তীরবর্তী খাস সহ ১৬ একর নদী শিকোয়স্তি ও পয়োস্তি জমি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে নিজেদের নামে রেকর্ডভুক্ত করে নেয়। ফলে ভুমিহীনরা লিজ গ্রহণের পরও ৩ একর জমিতে চাষাবাদ করতে পারেনা। তাদের জমিতে নামতে দেয়নি প্রভাবশালী ওই দুই পরিবারের সদস্যরা। প্রতিবাদ করায় বাড়িতে হামলা করে নারী-পুরুষদের প্রকাশ্যে মারপিট করা হয়। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে হয়রানি করা হয়। প্রকাশ্যে মারপিট করায় প্রতিকার না পেয়ে আশিয়া নামে এক নারী আত্মহত্যা করেন। 

তবে সরকারী ১৬ একর জমি রেকর্ড ভুক্তকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বড়াল নদী পুনঃখননের উদ্দোগ নেয়া হলে ভুমিহীন পরিবারকে খাস জমিতে আর নামতে দেয়া হয়না। তবে প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা ওই খাস জমি জবর দখল করে। জমিতে কেউ নামলে তাকে মারপিট করা সহ প্রান নাশের হুমকি দেয়া হয়। মামলা করেও প্রতিকার পায়না তারা। ভুমিহীন এসব পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে আসে নিজেরা করি নামের একটি এনজিও। এই সংস্থাকে জঙ্গি সংগঠন বলে প্রচার করা হয়।  ভুমিহীন সমিতির নেতৃবৃন্দের নামেও জাময়াত -বিএনপিসহ জঙ্গির মদদদাতার অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়। ভুমিহীন এসব পরিবারের দুর্দশা জানতে একাধিক এনজিও সংগঠনের প্রতিনিধিরা বাঁশবাড়িয়া গ্রাম সফর করেন এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সাক্ষাত করে ভুমিহীনদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানান তারা। 

এদিকে অভিযুক্ত প্রভাশালী পরিবারের সদস্যদের দাবী তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট । তাদের বাপ-দাদাদের নামেই রেকর্ডভুক্ত এবং নিজেরদের জমি। 

বাগাতিপাড়ায় বড়াল নদীর চর নিয়ে চলমান মামলাগুলো নিস্পত্তির পর নদীটি পুনঃখননের মাধ্যমে নদীর পানি প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। নদী তীরবর্তী কোন জমি শিকোয়স্তি এবং কোন পয়োস্তি হবে তা নিরুপন করে ব্যবস্থা নেয়া সহ অসহায় ভুমিহীন পরিবারগুলোকে পুর্নবাসন ও আশ্রয় দিতে যে যে প্রকল্পের প্রয়োজন তাই করা হবে বলে জানান তিনি। 

এমএম//