সীতাকুন্ডে গড়ে উঠছে বর্জ্য শোধনাগার, হুমকিতে জনজীবন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:২৩ পিএম, ২০ মে ২০২৪ সোমবার | আপডেট: ০৮:২৭ পিএম, ২০ মে ২০২৪ সোমবার
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে আবাসন গুড়িয়ে ও কৃষিজমি ধ্বংস করে গড়ে ওঠছে পুরোনো জাহাজ ভাঙ্গা এবং কল-কারখানার বিপদজনক বর্জ্য শোধনাগার টিএসডিএফ (ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি) প্রকল্প। উপজেলার পৌরসভায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের পাদদেশে ঘনবসতিপূর্ণ মৌলভীপাড়া এলাকায় এ প্রকল্প গড়ে ওঠছে। ইতিমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাইকার উদ্যোগে ওই এলাকায় সীমানা পিলার (খুঁটি) স্থাপন করা হয়েছে। ভূমি মালিকদের প্রলুব্ধ করতে করা হয়েছে উঠান বৈঠক। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এ বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্পকে এলাকার জনজীবন, জীববৈচিত্র্য ও পর্যটন শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি বলছেন পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাত্র ১১ বর্গমাইলের সীতাকুন্ড পৌরসভা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। প্রতি বর্গমাইলে এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৫ হাজার ৬০০ জন। যা প্রায় একই আয়তনের পার্শ্ববর্তী বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের চেয়ে ২ হাজার ২০০ জন বেশি। এখানকার পৌরসদরের কাছাকাছি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লাগোয়া গ্রাম মৌলভীপাড়া। এ গ্রামের পূর্ব উত্তর পাশে ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ পাহাড় এবং পূর্ব দক্ষিণ পাশে দেশের বৃহত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। স্থানীয় কয়েকশ পরিবারের আদি নিবাস কৃষি নির্ভর এ গ্রামে। এছাড়া ১৯৯৮ সালে এলাকাটি পৌরসভা ঘোষণার পর মৌলভীপাড়ার পূর্বপ্রান্তে নতুন করে আবাসন গড়ে ওঠতে থাকে। জমির মূল্য অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে শিল্পাঞ্চল সীতাকুন্ডে আসা নানান শ্রেণী পেশার মানুষ মৌলভীপাড়া সড়কের দুপাশকে স্থায়ী আবাসন হিসেবে বেছে নেয়। এ পর্যন্ত শতাধিক পরিবার সেখানে বসতি স্থাপনে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নতুন বসতি স্থাপিতও হয়েছে। নতুন এ আবাসন ঘিরে এর পশ্চিমে নির্মিত হয়েছে জামে মসজিদ। এর দক্ষিণ পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়া এ আবাসন লাগোয়া শতশত একর তিন ফসলি জমি রয়েছে। যেখানে চাষ হয় সবজির রাজ্যখ্যাত সীতাকুন্ডের সিংহভাগ সবজি। অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় বছরের সব মৌসুমে এখানে সবজি চাষ করে স্থানীয় কৃষকরা। কৃষি নির্ভর এ গ্রামে কয়েকশ পরিবারের আয়ের উৎস এসকল তিন ফষলি জমি।
আবার চিহ্নিত এই টিএসডিএফ প্রকল্পের পাশে অবস্থিত ১ হাজার ৯৯৬ একরের বিশাল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কে রয়েছে ৮২৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, বৃক্ষরাজি, গুল্ম, ভেষজ ও লতা এবং ৩১০ প্রজাতির প্রাণী। প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ পর্যটক এটি পরিদর্শন করে। এ পার্কের পথ ধরেই ১৫ লক্ষাধিক সনাতন তীর্থযাত্রী প্রতিবছর চন্দ্রনাথ ধাম দর্শন করে থাকেন। আবার এ পাহাড়ের সমতলে বসবাস করে কয়েকশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী। পাহাড়ে চাষাবাদ ও পশু পাখি পালনই যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। পাহাড়ি ঝিরি বা ছড়া তাদের পানি সংগ্রহের প্রধান উৎস। কিন্তু আচমকা বজ্রাঘাতের মত ইকোপার্ক লাগোয়া মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের স্বপ্নের আবাসন ও শত কৃষকের তিন ফষলি জমিতে পিলার গেড়ে বসে বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প।
জানা যায়, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে আসা পুরোনো জাহাজের পরিবেশ ও জনজীবন বিধ্বংসী বর্জ্য থেকে সীতাকুন্ডকে রক্ষা করতে ২০১৮ সালে একটি ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ অ্যান্ড ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি (টিএসডিএফ) নির্মাণের সরকারী উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পটির প্রাথমিক সমীক্ষাও করা হয়েছিল তখন। পরে নানা জটিলতা ও বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি শিল্প মন্ত্রণালয়।
কিন্তু বাংলাদেশ ২০২৩ সালের ১৪ জুন হংকং কনভেনশন অনুসমর্থন করার পর টিএসডিএফ প্রকল্পটি স্থাপন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। স্ক্র্যাপ জাহাজের নিরাপদ এবং পরিবেশসম্মত উপায়ে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের উদ্দেশ্যে আইএমওর তত্ত্বাবধানে প্রণীত হয় হংকং কনভেনশন। ২৬ জুন ২০২৫ থেকে এটি কার্যকর হবে। এ সময়ের মধ্যে টিএসডিএফ প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে শিপ রিসাইক্লিংয়ের জন্য নতুন করে কোনো জাহাজ ভাঙার অনুমোদন না দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের। তবে মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে কেবল পুরোনো জাহাজের বর্জ্যই নয়, কল-কারখানা এমনকি ট্যানারিসহ সকল ধরনের বর্জ্য শোধন করা হবে এ টিএসডিএফ প্রকল্পে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পে অর্থায়ন বিষয়ে নিশ্চিত করেছে জাপান ইন্টারন্যশনাল কো-অপারেশন্স এজেন্সি (জাইকা)। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পরিবেশ রক্ষার টিএসডিএফ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যেন আরও বৃহৎ পরিসরে সীতাকুন্ডের পরিবেশ ধ্বংসের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী রফিকুন্নবী জানান, একদিকে ভূমি মালিকরা মৌজা মূল্যের তিনগুণ অর্থ পাওয়ার আনন্দে বিভোর। অন্যদিকে বর্জ্য শোধনাগারকে ‘শিল্প কারখানা’ প্রচার করে এখানে স্থানীয় কৃষক ও শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান হবে এমন গুজব ছড়িয়ে প্রলোভন দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীপাড়া গ্রামের মহাদেবপুর মৌজার আর.এস ১৫৬টি দাগের জমি চিহ্নিত করে টিএসডিএফ প্রকল্পের সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। ইকোপার্ক সড়ক দিয়ে বর্জ্য পরিবহনের জন্য ইকোপার্ক থেকে প্রকল্প পর্যন্ত প্রায় ৮শ গজ সড়ক চিহ্নিত করা হয়েছে। মৌলভীপাড়ার ছড়া বা খাল দিয়ে বর্জ্য শোধনাগারের পানি সরাসরি নদীতে ফেলতে খালের দু’পাশের বসতিদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রকল্পের লোকজন। তবে এতসব কর্মকান্ডকে কেবল ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা যাচাই বলছেন এ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (জাহাজ পুনঃ পক্রিয়া, বিরা, রেখা, বিআইএম ও বিএসইসি) সঞ্জয় কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, টিএসডিএফ প্রকল্পের নূন্যতম কোন অগ্রগতি হয়নি। এখন পর্যন্ত কেবল ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। যা শেষ হতে আরও ৬ মাস সময় লাগবে।
এদিকে ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয়, ইকোপার্ক ও তীর্থ এলাকায় এমন প্রকল্প স্থাপনের প্রক্রিয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ইকোপার্ক কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরিবেশবিদ, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদসহ সচেতন নাগরিকরা। ইকোপার্কের পরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন টিএসডিএফ প্রকল্পের কারনে পরিবেশ, জীববৈচিত্র ও পর্যটন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ইকোপার্ক কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরিবেশবিদ, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদসহ সচেতন নাগরিকরা। ইকোপার্কের পরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন টিএসডিএফ প্রকল্পের কারনে পরিবেশ, জীববৈচিত্র ও পর্যটন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বনাঞ্চলের বন সংরক্ষকের কাছে ছিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি জাইকা ও নিউভিশন সলিউশন লিমিটেড এর কর্মকর্তাগণ ইকোপার্কের সীমানা ঘেষে টিএসডিএফ প্রকল্প স্থাপন ও পার্কের প্রবেশ পথ ব্যবহার করে বিষাক্ত বর্জ্য পরিবহনের বিষয়টি পার্কের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। তাৎক্ষণিক ওই কর্মকর্তা তাদেরকে ইকোপার্কের দর্শনার্থী শিশু, শিক্ষার্থী, গবেষক, নারী-পুরুষ, বন, বন্যপ্রাণী, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরেন। একই সাথে প্রকল্প এলাকাটি অন্যত্র স্থানান্তরের অনুরোধ করেন।
চিঠিতে তিনি আরও বলেন, মহাসড়ক থেকে ইকোপার্কের প্রবেশ পথ ব্যবহার করে প্রতিদিন সত্তর থেকে আশিটি ৩২ চাকার লরি টিএসডিএফ প্রকল্পে যাতায়াত করবে। এতে বছর জুড়ে ইকোপার্কে আসা ৩ লাখ পর্যটকের পর্যটন বাধাগ্রস্ত হবে এমনকি পর্যটক শূন্য হয়ে যেতে পারে ইকোপার্ক। এছাড়া এ পথে প্রতিবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান চন্দ্রনাথ ধাম দর্শনকারী প্রায় ১৫ লক্ষাধিক তীর্থযাত্রীর যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, ইকোপার্ক সংলগ্ন এলাকাটি কোনক্রমেই টিএসডিএফ প্রকল্পের জন্য উপযোগী জায়গা নয়। বর্তমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্রকে রক্ষা এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে ৯৯৬ একরের এ বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কের উদ্বোধন করেন। এখানে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য শোধনাগার হলে পরিবেশ প্রতিবেশের বিপর্যয় দেখা দিবে। ইকোপার্কের ৮২৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, বৃক্ষরাজি, লতা, গুল্ম ও ৩১০ প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল বিনষ্টসহ অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখিলন হবে।
এদিকে পৌর এলাকায় টিএসডিএফ প্রকল্প স্থাপনের বিরোধিতা করে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন সীতাকুন্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বদিউল আলম। তিনি বলেন, জাহাজভাঙা শিল্পসহ অন্যান্য এলাকার শ্রম পরিবেশ উন্নয়নের জন্য টিএসডিএফ মঙ্গলজনক প্রকল্প। তবে তা কোনভাবেই পরিবেশ কিংবা জনজীবন ধ্বংস করে নয়। সীতাকুন্ড পৌরষভা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। শিল্পাঞ্চল ও চট্টগ্রাম শহরের সন্নিকটে হওয়ায় এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বসতি স্থাপনের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। কৃষি জমির পরিমানও এখানে তলানিতে। এছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক পৌরসভা এলাকার পরিবেশ, জীববৈচিত্র ও পর্যটন শিল্পের প্রাণ। এতসব কিছু ছাপিয়ে এখানে বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন হবে আত্মঘাতি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমি বিষয়টি শিল্প মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম আল মামুনকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
অন্যদিকে এ বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য হুমকি এমনটা মানতে নারাজ উপসচিব সঞ্জয় কুমার ঘোষ। প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে শুরু করে ডিজাইন-ড্রয়িং (নকশা প্রণয়ন), ইমপ্লিমেন্টেশন (বাস্তবায়ন), অপfরেশন (পরিচালনা) সব কিছুই জাইকা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু সম্পূর্ণ জাপানি প্রযুক্তি দিয়ে বর্জ্য শোধন করা হবে সেক্ষেত্রে এ প্রকল্প বনের ভিতর কিংবা লোকালয়ে করলেও পরিবেশ বা জনজীবনের কোন ক্ষতি হবে না। বিষাক্ত বর্জ্যের পানি খাল দিয়ে নদীতে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, এ পানিকে রিসাইক্লিং (পুনঃ ব্যবহারযোগ্য) করে নদীতে ফেলা হবে। ফলে পানি দূষিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডক্টর ইদ্রিস আলি বলেছেন, লোকালয় কিংবা ইকোপার্ক সংলগ্ন এলাকায় টিএসডিএফ প্রকল্পের কথা চিন্তাও করা যায় না। পুরোনো জাহাজগুলোতে থাকে জৈব, অজৈব ও গ্যাসীয় বিষাক্ত বর্জ্য যেমন- অ্যাজবেস্টস, ভারি ধাতু, খনিজ তেল, জাহাজের তলা ও ব্যালাস্ট ওয়াটার, লুব্রিকেন্ট অয়েলসহ অসংখ্য ক্ষতিকর উপাদান। এছাড়া কারখানা বলতে পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন, প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশন, সীসা, দস্তা এবং তামার মত সংস্থান তৈরি, অ্যাসিড উৎপাদন, ধাতু প্রক্রিয়াকরণ, টেক্সটাইল উৎপাদন, চামড়ার টেনারি, ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনসহ বিস্তৃত শিল্পকে বুঝায়। টিএসডিএফ প্রকল্পে এ সকল শিল্পের বিষাক্ত বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত হবে, তাপ হবে, প্রতিক্রিয়া হবে কিন্তু পরিবেশ ও প্রাণীকূলের ক্ষতি হবে না এটা অবান্তর।
তিনি বলেন, বর্জ্য স্টোরেজ বা জমার উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত ফলাফল রয়েছে এবং এর ফলে বিপর্যয়কর সমস্যা হতে পারে। কিছু বর্জ্য ক্ষয়প্রাপ্ত হবে কিন্তু সব নয়। এটি গন্ধ নির্গত করে বিস্ফোরক মিথেন গ্যাস তৈরি করতে পারে যা প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু বর্জ্য পঁচে যায় লিচেট পরিবেশ প্রতিবেশকে দূষিত করতে পারে।
এছাড়া বর্জ্য ডিসপোজাল বা নিষ্পত্তি করার জন্য তৈরি ল্যান্ডফিল অবশ্যই মানুষের বসতি থেকে দূর হতে হবে। এটি পরিবেশের পাশাপাশি জীবের ক্ষতি করতে পারে। বর্জ্য নিষ্পত্তি বিপদজনক। এটি পরিচালনায় ত্রুটি হলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। রোগ ছড়ানোর এবং ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবস্থাকে দূষিত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইদ্রিস আলি বলেন, সরকারের বরাদ্দকৃত উন্নয়নমূলক প্রকল্প যেনতনভাবে সম্পন্ন করার চিন্তা থেকে মূলত এমন পরিবেশ বিধ্বংসী পরিকল্পনা হয়ে থাকে। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। কারন তিনি সব কিছুর ওপর পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ইতিপূর্বে তিনি কেবল পরিবেশ বাঁচাতে চট্টগ্রামের সিআরবিতে পাশ হয়ে যাওয়া প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছিলেন।
এদিকে টিএসডিএফ প্রকল্পের কথা শুনে থাকলেও সেটি কোন ক্যাটাগরির (শ্রেণী) হবে তা জানেন না চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রকল্প ক্যাটাগরি অনুযায়ী আবাসিক বা সেনসেটিভ (স্পর্শকাতর) এলাকা থেকে কতটা দূরত্বে থাকবে তা পরিবেশ আইনে উল্লেখ আছে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
সীতাকুণ্ড নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, পৌরসভার মত জনবহুল ও স্পর্শকাতর এলাকা মৌলভীপাড়ায় বিষাক্ত বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্পের কথা চিন্তা করাও অযোক্তিক। পার্শ্ববর্তী মিরসরাইয়ে বিশাল এলাকা জুড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল যেখানে অনায়াসে এ ধরনের প্রকল্প করা সম্ভব। কিংবা একান্ত সীতাকুণ্ডে করতে চাইলে উপজেলার উত্তর বগাচতর থেকে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত বেড়িবাঁধের পশ্চিমে বিশাল চরাঞ্চল রয়েছে। এছাড়া জঙ্গল ছলিমপুরে লোকালয়বিহীন শতশত একর খাস জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। সেসব জায়গায় টিএসডিএফ প্রকল্প করা যেতে পারে। কিন্তু এসব বিবেচনায় না এনে জনবসতিপূর্ণ পৌর এলাকা ও ইকোপার্কের পাদদেশে টিএসডিএফ প্রকল্প কার স্বার্থে? আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পৌরসভা এলাকায় টিএসডিএফ প্রকল্প স্থাপন না করার আহবান জানাই। অন্যথায় সীতাকুণ্ডের নাগরিক সমাজ পরিবেশ, জনজীবন ও পর্যটন শিল্প রক্ষায় আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
তবে এ বর্জ্য শোধানাগার প্রকল্প স্থাপন করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পৌর মেয়রসহ সকল স্টেকহোল্ডারস বা অংশীজনদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে.এম রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করে এখানকার জনগণ ও অংশীজনদের মতামত মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব। এছাড়া উপজেলা থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) না দিলে টিএসডিএফ প্রকল্প স্থাপনের কোন কাজই করতে পারবে না বলে নিশ্চয়তা দেন কে.এম রফিকুল ইসলাম।
কেআই//