গাজাজুড়ে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত অন্তত ৫০
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫৮ এএম, ২৪ মে ২০২৪ শুক্রবার
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর হামলায় আরও অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডজুড়ে চালানো পৃথক হামলায় তারা নিহত হন।
এদিকে ইসরায়েলি হামলার জেরে এখন পর্যন্ত রাফা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন ৮ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি। শুক্রবার (২৪ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকা জুড়ে আকাশ ও স্থলপথে চালানো হামলায় কমপক্ষে ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাতে হামাসের নেতৃত্বাধীন যোদ্ধাদের সাথে ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক লড়াই চলছে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এবং হামাসের সশস্ত্র শাখা।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো রাফার আরও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে, শহরের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ইবনার দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং তিনটি পূর্ব শহরতলিতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘দখলদার (ইসরায়েলি বাহিনী) আরও পশ্চিমে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা ইবনার প্রান্তে রয়েছে, যা ঘনবসতিপূর্ণ। তারা এখনও এটি আক্রমণ করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছি, এবং আমরা দেখছি যে সেনারা আক্রমণ করেছে এবং সেখান থেকে কালো ধোঁয়া উঠছে। এটি আরেকটি খুব কঠিন রাত ছিল।’
এই মাসে গাজার উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে একযোগে ইসরায়েলি হামলার ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে এবং ইসরায়েলি বাহিনী সাহায্য প্রবেশের প্রধান প্রবেশ পথও বন্ধ করে দিয়েছে, যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিও বাড়িয়েছে।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা ছাড়াই রাফাতে স্থল হামলা শুরু করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা গাজার দক্ষিণের এই শহরটিতে হামলার জন্য ইসরায়েলকে ব্যাপকভাবে সমালোচনাও করেছে। তবে ইসরায়েল বলেছে, সেখানে হামাস যোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে তাদের অবশ্যই অগ্রসর হতে হবে।
গাজায় পরিচালিত প্রধান সাহায্য সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস বলছে, চলতি মে মাসের প্রথম দিকে ইসরায়েল রাফা শহরটিতে হামলা শুরু করার পর থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ৮ লাখেরও বেশি মানুষ রাফা থেকে পালিয়ে গেছেন।
গাজায় নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের জরুরি প্রতিক্রিয়া নেতা সুজে ভ্যান মিগান বলেছেন, অনেক বেসামরিক নাগরিক এখনও সেখানে আটকে আছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রাফা শহরটি এখন তিনটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিশ্বের সমন্বয়ে গঠিত: পূর্ব দিকটি মৌলিক যুদ্ধ অঞ্চল, মাঝামাঝি অঞ্চলটি ভৌতিক শহরে পরিণত হয়েছে এবং পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থানরত জনবহুল জনগোষ্ঠী শোচনীয় পরিস্থিতিতে বসবাস করছে।’
সমান্তরালভাবে ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরেও স্থল আক্রমণ বাড়িয়েছে। সেখানে তারা বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকাও ধ্বংস করেছে। নিকটবর্তী শহর বেইট হানুনেও হামলা করেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল অবশ্য কয়েক মাস আগেও এই অঞ্চলে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এখন তাদের দাবি, হামাসকে সেখানে পুনরায় সংগঠিত হতে বাধা দিতে তাদের আবারও ফিরে আসতে হয়েছে।
ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, মধ্য গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহ শহরের পূর্বে অবস্থিত জনকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি দোকানে বিমান হামলায় অন্তত ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, ভোরের দিকে চালানো দুটি বিমান হামলায় গাজা শহরে ১৫ শিশুসহ আরও ২৬ জন নিহত হয়েছেন।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, এর মধ্যে একটি হামলায় গাজার একটি পরিবারের বাড়িতে বোমা আঘাত হানে। ওই হামলায় আল-দারাজ এলাকায় ১৬ জন নিহত হয় এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে চালানো আরেকটি হামলায় ১০ জন নিহত হয়।
মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় আরও আটজন নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা শহরের আবাসিক জেলাগুলো সফর করার সময় ইসরায়েলি হামলায় দিয়া আলদিন আল-শুরাফা নামের একজন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
নৃশংস হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল খাবার পানীয়, খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি সরবরাহের ওপরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং গাজাজুড়ে বেশ কয়েকটি হাসপাতালও বন্ধ করতে বাধ্য করেছে তারা।
বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে বিদ্যুৎ জেনারেটরে ‘কয়েক মিনিটের’ জ্বালানি অবশিষ্ট রয়েছে। জ্বালানি শেষ হলে ১৩০০ জন রোগীর সেবাও শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘গাজায় যদি বিপুল পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ শুরু না হয়, তাহলে হতাশা ও ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়বে’ বলে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এমএম//