ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

সিলেট শহরে ঢুকছে বন্যার পানি, ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৩৪ এএম, ১ জুন ২০২৪ শনিবার

ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার পানি এবার সিলেট সদর উপজেলা ও নগরে প্রবেশ করছে। জরুরি পরিস্থিতিতে নগরে আশ্রয়কেন্দ্র ও কন্ট্রোল রুম খুলেছে নগর কর্তৃপক্ষ। পানিবন্দি পরিবারগুলোকে উদ্ধার করা ও প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে দিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

বন্যায় এখন পর্যন্ত সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন বলে জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন। জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ৮ উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। এখন বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় এই পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জরুরি সভা করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে জরুরি উদ্ধারকারী দল ও স্বেচ্ছাসেবি দল। 

শুক্রবার বিকালে সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ নগরের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সোবহানীঘাট, যতরপুর, উপ-শহর, তেররতন, কুশিঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানো এবং তাদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। 

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৪০টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। পানি বাড়তে থাকলে আরও অনেক পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

তবে, সুরমার কানাইঘাট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারার অমলশীদ ও শেওলা পয়েন্টে পানি কিছুটা কমেছে। যদিও এই তিন পয়েন্টে পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কানাইঘাট পয়েন্টে ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। 

অমলশীদে এখনও ২০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে পানি কমেছে ১০ সেন্টিমিটার। শেওলা পয়েন্টে এখনও বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই পয়েন্টেও ২৪ ঘণ্টায় পানি কমেছে ৯ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত জেলার ৪৮টি ইউনিয়নে ৬ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ কবলিত হয়েছেন। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলো হচ্ছে- জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, সিলেট সদর ও গোলাপগঞ্জ।

ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত মানুষের খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান উপজেলাগুলোতে পরিদর্শন করেছেন। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫টি উপজেলার মানুষের জন্য ২০০ বস্তা করে মোট ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্লাবিত এলাকা ছাড়াও আশপাশের উপজেলাগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে, বন্যার্তদের স্বাস্থ্য সেবার প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক ১৩১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর উদ্দিন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, বন্যা কবলিত উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। বন্যা-কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

এএইচ