ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

হাজির না হলে বেনজীরের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেবে দুদক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:০০ পিএম, ৪ জুন ২০২৪ মঙ্গলবার

ঘুস, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অঢেল বিত্ত-বৈভব অর্জনের কারণে এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে সমালোচিত ব্যক্তিদের একজন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। ইতোমধ্যে সাবেক এই আইজিপির দুর্নীতি অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আগামী ৬ জুন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক। তবে এদিন দুদকে হাজির হবেন কিনা এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কারণ, বেনজীরের বিরুদ্ধে সপরিবারে দেশ ছাড়ার অভিযোগ আছে।

নির্ধারিত দিনে দুদকে হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জানিয়েছেন দুদকের কমিশনার জহুরুল হক।

তিনি বলেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ আগামী ৬ জুন যদি দুদকে হাজির না হন, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ধরে নেবে তার কোনো বক্তব্য নেই। তবে তিনি চাইলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ১৫ দিন সময় দিতে পারবেন।

গত ২৩ মে বেনজীর আহমেদের সম্পত্তির ৮৩টি দলিল জব্দের ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত। এরপর ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ১১৯টি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক, রাজধানীর গুলশানের আলিশান চারটি ফ্ল্যাট, শতভাগ এবং আংশিক মালিকানাধীন ২৩ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশও দেন আদালত।

এদিকে দুদক আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান জানিয়েছেন, গত ৬ মাসে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ তার অ্যাকাউন্ট থেকে কত টাকা তুলেছেন, সেই টাকা কোথায় নিয়েছেন—সে বিষয়ে খোঁজ চলছে। ভুক্তভোগীরা চাইলে তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ এবং থানায় মামলা করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ৬ জুন তাকে দুদক কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। এর আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। দুদক তাকে সুযোগ দিয়েছে এখন এটি তার বিষয় সেটি তিনি গ্রহণ করবেন কিনা।’

প্রসঙ্গত, বেনজীরের বিশাল বিত্তবৈভব নিয়ে গত ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এতে সাবেক এই আইজিপি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি রিসোর্ট গড়ে তুলেছে বেনজীর পরিবার। এ ছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে। তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ছয়টি কোম্পানি। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পরবর্তীতে অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে গত ১৮ এপ্রিল অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ১৯৬টি দলিলে থাকা ৬২৭ বিঘা জমি (২০ হাজার ৭০৩ শতক), ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগের সন্ধান পায় দুদক। এরপর সংস্থাটির আবেদনের প্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।

আদালতের নথি থেকে জানা যায়, বেনজীরের সম্পত্তির একটি বড় অংশ রয়েছে তার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের তিন উপজেলায়। গোপালগঞ্জ সদরে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬৫টি দলিলে ২৪০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। টুঙ্গিপাড়ায় তিনটি দলিলে ৪৭ শতাংশ, কোটালীপাড়ায় ৩৫ বিঘা জমি কিনেছেন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুরের রাজৈরে ২০২১ ও ২০২২ সালে তার স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে প্রায় ২৮০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে।

বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি এলিট ফোর্স র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাড়ে চার বছর র‌্যাবের নেতৃত্ব দেওয়ার পর ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।

এদিকে ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর। তালিকায় র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে বেনজীর আহমেদের নামও স্থান পায়। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরির আইন অনুযায়ী অবসরে যান তিনি।

এমএম//