আইন না থাকায় ভবন নির্মাণে বাড়ছে কাঁচের ব্যবহার
শিউলি শবনম
প্রকাশিত : ০২:৩০ পিএম, ৫ জুন ২০২৪ বুধবার | আপডেট: ০২:৩১ পিএম, ৫ জুন ২০২৪ বুধবার
গত এক দশকে রাজধানীতে ব্যাপক হারে বেড়েছে কাঁচের তৈরি ভবন নির্মাণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচের ব্যবহার নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়ালেও একই সাথে বাড়িয়ে দিচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়ের শংকা। কাঁচের ভবন সূর্যের তাপ বেশি শোষণ করায় তাপমাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এতে হিট আইল্যান্ডে পরিণত হচ্ছে ঢাকাসহ পুরো দেশ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ভবন নির্মাণ বন্ধে ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় সুস্পষ্ট নির্দেশনার তাগিদ নগর পরিকল্পনাবিদদের।
শীতের সময় শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায় আবহাওয়া গরম রাখতে এবং ঘরের ভেতর সূর্যের আলোয় উত্তপ্ত রাখতে বিশ্বের শীতপ্রধান দেশগুলোতে মূলত কাঁচের বাড়ি বানানোর প্রচলন শুরু হয়।
কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর অনুকরণে চকচকে রূপ ও আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরেও আধুনিক নির্মাণশৈলীর বহুতল কাঁচের ভবন তৈরিতে ঝুঁকছে ভবন মালিকরা। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক স্থাপনা সব জায়গায় কম খরচে সৌন্দর্য বাড়াতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে অপরিকল্পিত কাঁচের ব্যবহার।
বিআইপি সাধারণ সম্পাদক শেখ মেহেদী আহসান বলেন, “এটি আসলে দৃষ্টিনন্দন, দেখতে ভাললাগে। চাকচিক্য আছে এ জন্য মানুষ সেটার পেছনে অতি দ্রুত ছুটে যায়।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া কাঁচের ভবন তৈরির অনুপযোগী। এখানে সূর্যের আলোর তীব্রতা বেশি থাকায় কাঁচের ব্যবহার তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কাঁচের ভবনগুলো শীতল রাখতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার পরিবেশকে আরও এক ধাপ উত্তপ্ত করে। রাজধানীসহ সারাদেশে তাপমাত্রা বাড়ার পেছনে কাঁচের ভবন অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন তারা।
রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা, পল্টন, মতিঝিল, পল্টন, কারওয়ান বাজার এলাকায় কাঁচের ভবনের আধিক্য বেশি চোখে পড়ে এবং এসব ভবনের পাশে তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। অপরিকল্পিত কাঁচের ব্যবহারের মাশুল গুণতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, “কাঁচের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সূর্যে্যর আলো কাঁচ ভেদ করে ভেতরে উত্তপ্ত করছে। তাপমাত্রা সেখানে ট্রাপ হয়ে যায়। সেটি থেকে বাঁচার জন্য এয়ারকন্ডিশনের ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পায় এবং ক্যাপাসিটির কয়েকগুণ বেশি বৃদ্ধি করতে হয়। অন্যদিকে এসির আউটডোর বেশি উত্তপ্ত হয়ে যায়।”
তাপমাত্রা কমানোসহ পরিবেশের বিবিধ ক্ষতি কমাতে পরিবেশবান্ধব বিকল্প বাড়ি তৈরির উপর জোর দেন তারা।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, “আমার যে ভেষজ উপকরণ, ভেষজ প্রক্রিয়া এবং আমার যে তাপমাত্রার পরিবেশ তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা বাধ্য করতে হবে। বিদেশি অনুকরণ পরিহার করতে হবে।”
ভবনকে কীভাবে নির্মাণ করবে আইনে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনিয়ন্ত্রিত কাঁচের ব্যবহার বাড়ছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করে ভবন নির্মাণ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনার জরুরি বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
বিআইপি সাধারণ সম্পাদক শেখ মেহেদী আহসান বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত হলে নানা ধরনের দুর্যোগ হতে পারে। আমাদের শহরের প্রেক্ষিতে কতটুকু পরিমিত সেটা নীতিমালার মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। এখন নির্মাণ বিধিমালায় এটি নেই। আবার নিষেধও করা নেই। সেকারণে এই সুযোগ নিয়ে অনেকগুলো ভবন হয়ে গিয়েছে।”
একই সঙ্গে ইমারত নির্মাণ উপকরণ ও স্থাপত্যতে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ নগর বিশেষজ্ঞদের।
এএইচ