শ্যামপুরে জালনোট প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা হৃদয় আটক
মনির হোসেন জীবন
প্রকাশিত : ০২:১২ পিএম, ৭ জুন ২০২৪ শুক্রবার
রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালনোট প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা হৃদয় মাতব্বর (২২)’কে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এসময় জাল নোট তৈরীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি এবং বিপুল পরিমাণ জালনোট উদ্বার মূলে জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জালনোটের অবাধ কারবার নিয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনা হলে র্যাব এসব সংঘবদ্ধ জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। সূত্র বলছে, আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা’কে কেন্দ্র করে এরূপ বেশকিছু জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে র্যাবের গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি চৌকষ দল গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে রাজধানীর শ্যামপুর থানার পশ্চিম ধোলাইপাড় এলাকায় একটি ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। শুক্রবার বেলা ১১ টা ২৪ মিনিটের সময় র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) মোঃ শামীম হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, আটক ব্যক্তির নাম হৃদয় মাতব্বর (২২)। শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা থানার বুড়িরহাট গ্রামের মোতালেব মাতব্বর এর পুত্র। বর্তমানে সে রাজধানীর শ্যামপুর থানার পশ্চিম ধোলাইপাড় এলাকায় বসবাস করে আসছিল।
মোঃ শামীম হোসেন জানান, অভিযানকালে তার নিকট থেকে জালনোট তৈরীতে ব্যবহৃত ১ টি সিপিইউ, ১ টি মনিটর, ১ টি প্রিন্টার, ১ টি কী-বোর্ড, ১ টি মাউস, ১ টি রাউটার, ২ টি মাল্টিপ্লাগ, ১ টি পেপার কাটার, ৯ টি ভুয়া এনআইডি কার্ড, ৩ টি ভুয়া ভারতীয় এনআইডি কার্ডের ফটোকপি এবং ৬০,৭০০ টাকা মূল্যমানের জালটাকা (৬০২ টি ১০০ টাকার নোট এবং ১ টি ৫০০ টাকার নোট) উদ্ধার করা হয়।
র্যাব বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্যঅনুসন্ধানে জানা গেছে, আটককৃত আসামি পূর্ব থেকেই কম্পিউটারে পারদর্শী ছিল। সে ধোলাইপাড় এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতো। সে ইউটিউব থেকে জালটাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে এবং নিজের অর্জিত কম্পিউটার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জাল নোট তৈরিতে পারদর্শিতা অর্জন করে। পরবর্তীতে হৃদয় কম্পিউটার, প্রিন্টার, পেপার কাটার এবং জালটাকা তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজ গৃহে জালটাকা ছাপানোর কাজ শুরু করে। সে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে জাল টাকা বিক্রয়ের জন্য নেটওয়ার্ক তৈরী করে এবং এসকল পেইজ প্রমোট ও বুস্টিং করে অনেক পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সংগ্রহ করে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ জাল নোট প্রস্তুত ও বিক্রয় করে আসলেও আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত হৃদয় প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করত। ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে সে প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে আসছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার জানান, এছাড়া সে অবৈধভাবে দেশী ও বিদেশী ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে সেগুলো বিভিন্ন অপরাধী চক্রের নিকট বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করে আসছিল। এসকল জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।