ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

সংসদে এমপি নাসের শাহরিয়ার

ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের ঋণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৫৬ পিএম, ৯ জুন ২০২৪ রবিবার

ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের গৃহীত ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। তিনি বলেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক উৎস থেকে সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ঋণ নিলে এ উৎস থেকে সরকারের  ঋণের স্থিতি প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সরকার এতো বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ হ্রাস পাবে। এতে বিনিয়োগ বিঘ্নিত হবে,যা শিল্প  ও বাণিজ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

রবিবার (৯ জুন) সংসদে ২০২৩-২৪ সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ‘ব্যাংকিং উৎস থেকে যদি সরকার বেশি ঋণ নেয় তাহলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ হ্রাস পেয়ে যায়। বেসরকারি খাতে যদি ঋণের প্রবাহ হ্রাস পায় তাহলে সেখানে বিনিয়োগ ব্যাহত হয়।’

তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৭-১৮ সালে ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের ঋণ ছিল মাত্র ১১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। পরের বছর তা দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। কিন্তু কোভিডের ঠিক আগেই ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ঋণ নিতে হয় সরকারকে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোভিড পরবর্তী সময়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারকে ঋণ নিতে হয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র ২৪ সালের জুন মাসেই ৬১ হাজার কোটি টাকা সরকারকে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এ হারে যদি চলতে থাকে তাহলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা। আমি মনে করি, এ বিষয়ে আমাদের একটু সাবধান হওয়া দরকার। ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের ঋণ যেন কমে আসে এবং  বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহটা যেন বৃদ্ধি পায়। এ ব্যাপারে আমি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ বিঘ্নিত হলে শিল্প ও সেবাখাতের অগ্রগতি বিঘ্নিত হয়। এতে দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পায় এবং বেকারত্ব বাড়তে থাকে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে আমরা আমাদের যুব সমাজকে স্বপ্ন দেখাতে পারবো না। যুব সম্প্রদায় যদি স্বপ্ন না দেখে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলতর হবে না। কাজেই সরকারের উচিত ব্যাংক থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ নেয়ার সুযোগ বাড়িয়ে দেওয়া। এটা বাড়িয়ে দিতে হলে ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমাতে হবে।

আয়কর আদায় আরও সম্প্রসারণ করার উপর জোর দিয়ে জাহেদী বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে জমি নির্ভর খাজনা ছিল রাজস্ব আদায়ের মূল উপাদান। কিন্তু আজকে জমি থেকে যে খাজনাটা আসছে সেটার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কিন্তু খাজনা আদায় করার জন্য এখন তহশীল অফিস ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু এখন রাজস্বের বড় অংশ এনবিআরের মাধ্যমে আহরণ হয়ে থাকে। তবে এনবিআর কার্যালয়ের কর্মকর্তা জেলা পর্যায়ে পরে খুব একটা নেই। আমি মনে করি এনবিআর এর নেটওয়ার্কটা জেলা পর্যায়ে থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।’

বাজেটে অর্থ বরাদ্দের সমতা নিয়ে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ‘সরকারি অর্থ বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন যেটা ২০০৯ সালে করা হয়েছিল সেখানে অর্থ বরাদ্দের সমতা ও প্রাপ্তিটা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সারা দেশে যেন সমানভাবে অগ্রগতি হয় উন্নয়ন হয় বাজেট আইনে তা বলা হয়েছে। কিন্তু আমার প্রত্যন্ত জেলা ঝিনাইদহে এখনো আমরা প্রত্যন্তই রয়ে গেছি। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমার ঝিনাইদহ জেলায় না আছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, না আছে একটি মেডিকেল কলেজ, না আছে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও একটি স্পেশালিস্ট হাসপাতাল। এই যে অগ্রগতির ধারায় বাংলাদেশ চলছে আজ কিন্তু মনে হচ্ছে আমার ঝিনাইদহ জেলা যেন অগ্রগতির ধারায় উঠতে পারছে না।’ কাজেই আগামী বাজেটে যেন অর্থ বরাদ্দরে ক্ষেত্রে ন্যাজ্যতা নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে তিনি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 
কেআই//