ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

রক্তদান করুন, টোটালি ফিট থাকুন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:০০ পিএম, ৯ জুন ২০২৪ রবিবার | আপডেট: ০৬:০৩ পিএম, ১১ জুন ২০২৪ মঙ্গলবার

একজন মানুষের শারীরিক মানসিক সামাজিক ও আত্মিক শক্তি সামর্থ্যের সুসংহত প্রকাশই টোটাল ফিটনেস। দীর্ঘ সুস্থ জীবনলাভের অনুঘটকও এই টোটাল ফিটনেস। আর এই টোটাল ফিটনেস বাড়াতে নিয়মিত রক্তদান রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। চলুন জেনে নেয়া যাক- কীভাবে আপনি রক্তদাতা হিসেবে টোটালি ফিট হবেন। শারীরিক ফিটনেস রক্তদান করলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হওয়াসহ হৃদরোগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে যায়। 

১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ডব্লিউএইচও এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, 20 years of celebrating giving: thank you blood donors!
সহজ বাংলা করলে দাঁড়ায়- ‘দিবস উদযাপনের ২০ বছর: ধন্যবাদ হে রক্তদাতা!’।

জার্নাল অব দি আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ৪৩ থেকে ৬১ বছর বয়সী ব্যক্তিরা ছয় মাসে অন্তত একবার রক্ত দিলে তাদের হৃদরোগ বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। ফিনল্যান্ডের ২৬৮২ জনের ওপর একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে- যারা নিয়মিত রক্ত দেয় তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৮৮ শতাংশ কম এবং স্ট্রোকসহ অন্যান্য মারাত্মক হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম। রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোনম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদানের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়, আর লোহিত কণিকার ঘাটতি পূরণ হতে সময় লাগে চার থেকে আট সপ্তাহ। এই পুরো প্রক্রিয়া আসলে শরীরের সার্বিক সুস্থতা, প্রাণবন্ততা আর কর্মক্ষমতাকেই বাড়িয়ে দেয়।

মানসিক ফিটনেস মানসিক ফিটনেসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বা ভাবনা। কারণ আমরা যা ভাবি আমরা তা-ই। ভাবনাকে যত ইতিবাচক ও নির্ভেজাল রাখা সম্ভব হবে, যত নেতিবচাকতা থেকে মুক্ত রাখা যাবে তত মানসিক ফিটনেস বাড়বে। সমমর্মিতা একজন মানুষের মেন্টাল ফিটনেসের অংশ। আপনি যখন একজন মুমূর্ষুকে রক্তদান করবেন, একজন থ্যালাসিমিক শিশুর জীবন বাঁচাতে রক্তদানে সমমর্মী হবেন- এটি আপনার মানসিক প্রশান্তির মাত্রা যেমন বাড়াবে, সেইসাথে আপনার অন্তরকেও করবে তৃপ্ত। যত প্রশান্তি ও সমমর্মিতা বাড়বে তত বাড়বে ইতিবাচকতা। যত ইতিবাচকতা বাড়বে তত বাড়বে মেন্টাল ফিটনেস। আপনি তখন নিজেকে একা মনে করবেন না, আপনি সবসময় অনুভব করবেন আপনাদের দেয়া এক ব্যাগ রক্তে বেঁচে আছেন আরেকটি প্রাণ, একজন থ্যালাসিমিক শিশু!

এই পরিতৃপ্তি সব সময় আপনাকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত রাখবে। সামাজিক ফিটনেস সোশ্যাল নিউরোসায়েন্সের প্রবক্তা ড. জন টি ক্যাসিওপ্পো তার দীর্ঘ গবেষণার ভিত্তিতে বলেন, সমাজকে ঘিরেই মানুষের বেঁচে থাকা। আর দেহের পেশিগুলোর মতো প্রতিটি মানুষের অদৃশ্য একটি পেশি আছে। তা হলো ‘সোশ্যাল মাসল’। এই মাসল বা পেশিটি যত আমরা কাজে লাগাব, আমাদের সুখের পরিমাণ তত বাড়বে। আর রক্তদানের মাধ্যমে সমাজকে ঘিরে থাকা একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর ভেতর দিয়ে অর্জন করছেন সামাজিক ফিটনেস। এছাড়া রক্তদানকে কেন্দ্র করে একজন রক্তগ্রহীতা ও তার আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব পরিবার পরিজনদের সাথেও গড়ে ওঠে চমৎকার সখ্যতা সামাজিক বন্ধন ও বাস্তব যোগাযোগ- যা বাড়িয়ে দেয় সামাজিক ফিটনেসকে।

আত্মিক পূর্ণতা ‘একটি প্রদীপ যেমন আগুন ছাড়া প্রজ্বলিত হতে পারে না, তেমনি আত্মিক শূন্যতা নিয়ে কোনো মানুষ বাঁচতে পারে না।’ কথাটি হাজার বছর আগে বলে গেছেন মহামতি বুদ্ধ। আজ এই তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে ঠাসা পৃথিবীর বড় বড় চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা একই কথা বলছেন। ‘পণ্য পদমর্যাদা প্রাচুর্য’ প্রতিটি প্রত্যাশা পূরণের পরও যে শূন্যতা আর হাহাকার, সেটি দূর করতেই প্রয়োজন আত্মিক উন্নয়ন। রক্তদানের মাধ্যমে সহজেই আপনি আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে পরার্থপর হতে পারবেন। একজন মানুষের জীবন রক্ষায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন তেমনি লাভ করবেন আত্মিক তৃপ্তি। কারণ সকল ধর্মেই অপরের জন্যে কাজ করাকে বা সেবা দেয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

রক্তদান ধর্মীয় ভাবেও অত্যন্ত পুণ্যের ও সওয়াবের। আল্লাহ বলেন, একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ’। (সূরা মায়েদা) তাহলে আর দেরী কেন? গত চার মাসে রক্ত না দিয়ে থাকলে এখনই রক্তদানের জন্যে প্রস্তুতি নিন। শারীরিক কোন সীমাবদ্ধতা থাকলে কথা বলুন চিকিৎসকের সাথে। তারপর চিকিৎসা নিয়ে এবং খাদ্যাভ্যাস সঠিক করে, ব্যায়াম ও ধ্যান চর্চা করে নিজেকে রক্ত দেয়ার জন্যে উপযুক্ত করে তুলুন। সকলের প্রতি আহ্বান জানাই - আপনার রক্তে বাঁচুক একজন, টোটাল ফিটনেস হোক অর্জন!

লেখক-সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল। 

কেআই//