সরকারি বাড়ি আত্মমর্যাদা বাড়িয়েছে গৃহহীনদের: প্রধানমন্ত্রী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:২১ পিএম, ১১ জুন ২০২৪ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:২৩ পিএম, ১১ জুন ২০২৪ মঙ্গলবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে দেওয়া বাড়িগুলো গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা এনে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে বিনামূল্যে ঘর প্রদান করে পুনর্বাসন করেছি। এতে তাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ ফিরে এসেছে। একটি দেশকে উন্নত করতে হলে এর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’
মঙ্গলবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তাঁর সরকারের সারাদেশের গৃহহীনদের বিনামুল্যে ঘর দেওয়ার জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ঈদ উপহার হিসেবে এসব ঘর গুলো দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘তাঁর সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশবাসীর সেবা করা। কারণ, দেশের জনগণের আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা থাকায় তারা বার বার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এককভাবে ২৩৩টি আসন প্রাপ্তির উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিল আমাদের ওপর। কাজেই যে মানুষগুলো আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে তাদের সেবা করাই আমাদের দায়িত্ব।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ঠিক আমার বাবা যেভাবে নিজেকে বাংলাদেশের জনগণের সেবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেভাবেই তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের মানুষের সেবা করাকেই আমি কর্তব্য বলে মনে করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এই বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। এই বাংলাদেশকে এগিযে নিতে যেতেই হবে। এদেশের মানুষ ক্ষুধা-দারিদ্র থেকে মুক্তি পাবে। প্রত্যেকটি মানুষের জীবন সুন্দর হবে-সেটাই আমাদের লক্ষ্য। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে যে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস (রিমেল) হয়ে গেল সেখানে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমেধ্যেই আমরা তালিকা করেছি কোন কোন এলাকায় কতগুলো ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। কতগুলো আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। যেগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে আমরা ঘর তৈরি করে দেব। আর ক্ষতিগ্রস্তদেরও আমরা ঘর পুনর্নিমাণে সহায়তা করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে আমরা আছি। প্রাথমিকভাবে যা যা প্রয়োজন তা করে যাচ্ছি এবং ঘর-বাড়ি যাদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমি তাদের এটুকু বলতে চাই, আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। প্রত্যেকেই নতুন ঘর যাতে পান, সেই ব্যবস্থা ইনশাল্লাহ আমি করে দেব এবং সেভাবেই আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রত্যেক এলাকা থেকেই আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং সে অনুযায়ী আমরা এই সহায়তা পাঠাব।
শেখ হাসিনা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের মাঝে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করেন তিনি। পরে তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।
সরকার প্রধান বলেন, আমার দেশের যারা ভূমিহীন-গৃহহীন আছে, তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আশ্রয়ের ব্যবস্থা, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ফলে তাদের জীবন বদলে গেছে। এই সময় তিনি ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপন এবং প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। আর সে কারণেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।
ঘরগুলো নির্মাণের কাজে জড়িতদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর এবং জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধানমন্ত্রী এই দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মিথ্যা মামলায় কারাভোগ থেকে মুক্তি পাওয়ায় দিনটিকে তাঁর জন্য গৃরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতেও মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আবার সেই সময়কার যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেছিল তারাও গ্রেফতার করে পরে মিথ্যা মামলা দেয়।
তিনি এই সময় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের সকল নেতা-কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইকারি-প্রতিবাদি সাধারণ জনগণকে স্মরণ করে ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ঢাকা শহরে ১৫ দিনের মধ্যে ২৫ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে আমাদের মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপদেষ্টার অফিসে পৌঁছে দেয়। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় এবং আজ ১১ জুন আমি সেই বন্দিখানার থকে মুক্তি পাই। তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রবাসী বাংলাদেশেীদের ভূমিকাও এই সময় স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম কিন্তু সেই স্বাধীনতার সব সুফল মানুষের ঘরে পৌঁছাবার আগেই ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে সবকিছু যেন পাল্টে দেওয়া হয়। দেশ চলে আসে যুদ্ধাপরাধি ও খুনীদের হাতে। এদেশের ভূমিহীন-গৃহহীণ মানুষকে আশ্রয় প্রদানের জন্য জাতির পিতা সর্বপ্রথম নোয়াখালিতে (এখনকার লক্ষীপুর) ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের মাঝে ঘর ও খাস জমি বিতরণ শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রতিটি ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর ও ফসল উৎপাদনের জন্য ভূমি প্রদান করা এবং সমস্ত খাসজমি সহায় সম্বলহীন মানুষদের মাঝে বিতরণই ছিল তাঁর লক্ষ্য। যেন কোন মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন বা ঠিকানা বিহীন না থাকে। কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর আমরা দেখেছি সেই উদ্যোগ আর কারো ছিল না।
শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতাসীনরা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতেই ব্যস্ত ছিল। একুশ বছর পর ’৯৬ সালে তাঁর সরকার আবার ক্ষমতায় এলে তাঁর সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প নিয়ে ভূমিহীন-গৃহহীনদের আবারো পুণর্বাসন শুরু করে। ’৯৭ সালে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৭০টি পরিবারকে প্রথমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ঘরে করে দেওয়া হয়। প্রথমাবস্থায় জায়গার অভাব থাকায় ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করে পৃথক ঘর ও ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে এদিন ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত ঘোষণা করেন।
নতুন ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ও উপজেলা নিয়ে সারাদেশে জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮টি এবং উপজেলা হয়েছে ৪৬৪টি।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া গৃহহীনদের মাঝে বিনামূল্যে ঘর বিতরণের এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এএইচ